You dont have javascript enabled! Please enable it!

এপ্রিল ১৮, ১৯৭৪ বৃহস্পতিবার ঃ দৈনিক বাংলা

হতাশা নয়, লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে; মুজিব নগরে বিপ্লবী সরকারের ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপিত ঃ গতকাল ছিল ধ্রুব-নক্ষত্রের দীপ্তিতে জ্যোতির্মান একটি দিন ১৭ এপ্রিল, যেদিন বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত জেলা কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার এক অখ্যাত গ্রাম বৈদ্যনাথ তলার নিভৃত আম্রকুঞ্জে শপথ নিয়েছিল জনাব তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকার। সেই আশ্চর্য ইতিহাসের দিনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকার ঘােষণা করেছিল মৃত্যুর প্রহরগােণা সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির কানে স্বাধীনতার বরাভয়। ১৯৭১ সালের সেই আশ্চর্য ইতিহাসের দিনে বাঙ্গালি জাতির সেই বিস্ময়কর অভ্যুদয়ের দিনে বিপ্লবী সরকারের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল শয়ে। শয়ে, হাজারে হাজারে, লাখে লাখে বাংলার তরুণ সূর্যসেনা।

গতকাল সেই একই আম্রকুঞ্জে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকারের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠান জাতিকে নতুন সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন তাজউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, আর হতাশা নয়, আসুন স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই অগ্নিসম্ভব দিনগুলিতে যে দুর্জয় শপথ নিয়ে আমরা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, আজ সেই একই শপথ নিয়ে আমরা আবার নতুন সংগ্রামে আত্মােৎসর্গ করি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে, শােষণহীন একটি সমাজ গড়ে তােলার জন্যে। গতকাল মুজিব নগরে এই অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশ আজ যে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা সমাধানের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হল সমাধানের জন্য সমস্যাগুলােকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বেছে নিয়ে সর্বশ্রেণীর জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় পর্যায়ক্রমে সেগুলাের সমাধান করা।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রতিটি নাগরিককেই স্থির সংকল্প নিয়ে নি:স্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, রক্তাক্ত বিপ্লবের মাঝ দিয়ে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে সেই বাংলাদেশ আজ নানা সমস্যায় পরিবেষ্টিত, কিন্তু তাতে হতাশ হয়ে যাবার কোন কারণ নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে যে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড গুড়ো হয়ে গেছে, স্বাধীনতার মাত্র ২৪ মাস পরে সে দেশের রাতারাতি একটা বিরাট পরিবর্তন আশা করা ঠিক সঙ্গত নয়। আসলে যেটা লক্ষ্য করা দরকার তা হল দেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যের পথে অগ্রসর হচ্ছে কি-না। তিনি বলেন, দেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে—যদি সকল শ্রেণীর মানুষ, দেশের প্রতিটি নাগরিক নি:স্বার্থভাবে তার দায়িত্ব পালন করে। যদি আমরা আমাদের শিল্পকারখানা আর খেত-খামারগুলাের উৎপাদন বাড়াতে পারি তবেই। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ দেশের কৃষক শ্রেণীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, গত দু’বছরে দেশের কৃষকরা খাদ্য ঘাটতি বারাে লাখ টন কমিয়ে এনেছে। তিনি জনগণকে দেশের কৃষক সমাজের দৃষ্টান্ত অনুসরণের আহ্বানু জানান।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!