মার্চ ২২, ১৯৭৪ শুক্রবার ও দৈনিক ইত্তেফাক
দলের প্রকৃত কর্মী ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করিতে হইবে ? ইত্তেফাক রিপাের্ট। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাবলী চিহ্নিত করার জন্য রাজনৈতিক পর্যায়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাইয়াছেন। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন যে, দেশের বুকে বিরাজমান অশান্ত অবস্থা যথার্থভাবে মােকাবিলার জন্য জাতীয় ঐকমত্য গড়িয়া তােলা প্রয়ােজন। মন্ত্রী সংসদ সদস্য গাজী ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে শােক প্রকাশের জন্য গতকাল (বৃহস্পতিবার) অপরাহ্নে তাহার বাসভবনে আয়ােজিত এক সভায় সভাপতির ভাষণ দিতেছিলেন। গাজী ফজলুর রহমান গত ১৬ মার্চ দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হন। আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের হত্যা এবং সমাজের বুকে বিরাজমান অন্যান্য অপরাধের কথা উল্লেখ করিয়া জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রশাসন যন্ত্রের আওতার বাহিরে কাহারও হাতে যাহাতে অস্ত্র না থাকে উহার নিশ্চয়তা বিধান এইসব সমস্যা মােকাবিলার অন্যতম উপায়। সরকারের আইন প্রয়ােগকারী সংস্থাগুলি ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বেআইনী অস্ত্র রাখা বা বেসরকারী বাহিনী গড়িয়া তােলার প্রবণতা কিংবা রীতি বিপদজ্জনক পরিণতি ডাকিয়া আনে বলিয়া তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। জনাব তাজউদ্দিন দেশের এখানে সেখানে সংঘটিত প্রত্যেক রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পাইকারিভাবে দোষারােপ করাকে ভুল বলিয়া মনে করেন।
তিনি বলেন, হত্যাকারীগণ নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গােপন করার জন্য প্রায়ই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে। এইসব হত্যাকান্ড ও অন্যান্য অপরাধমূলক কাজের নিন্দা করিয়া অর্থমন্ত্রী রাজনৈতিক হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতির মাধ্যমে সংগঠনের বদনাম করার উদ্দেশ্যে দলে অনভিপ্রেত লােকের অনুপ্রবেশ ঘটিয়াছে কিনা, তাহা তলাইয়া দেখার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশকে সামাজিক দুর্নীতি হইতে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মী ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য করিতে হইবে। এক পর্যায়ে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, সত্য কথা বলিতে বলিতে নিজের গর্দান যাওয়ার (assassin pains) পর্যায়ে আসিয়াছি। কিন্তু উহাতে আমি ভীত নই। তিনি বলেন, মরণের পূর্বে কেহই মারিতে পারিবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকে আমাকে সত্য বলিতে নিষেধ করিয়াছেন। কিন্তু আমি উহা বলিয়া যাইব। তিনি আরও বলেন, সময় আসিতেছে না, বরং উহা দ্রুত চলিয়া যাইতেছে। এখন যদি মানুষের জন্য কিছু করা না যায়, তাহা হইলে আর কোনদিনই করা যাইবে না।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি