You dont have javascript enabled! Please enable it!

মার্চ ১২, ১৯৭৪ রবিবার ও দৈনিক বাংলা

আইএমএফ সুপারিশ সম্পর্কে তাজউদ্দিন; মুদ্রামান হ্রাসের প্রশ্নে সরকার সিদ্ধান্ত নেননি : অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল সােমবার বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের টাকার মূল্যমান হ্রাসের সুপারিশের সঙ্গে সরকার একমত নন। লন্ডনের ফ্লীট স্ট্রীটের এক পত্রিকার একটি রিপাের্টের প্রতি এনা’র একজন সংবাদদাতা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী একথা বলেন। রিপাের্টটিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে এসে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের প্রতিনিধিদল সরকারকে টাকার বিনিময় হার কমানাের পরামর্শ দেন। বর্তমানে সরকারী বিনিময় হার হচ্ছে ১৮ টাকা ৯৭ পয়সার দাম এক ব্রিটিশ পাউন্ড আর ৭ টাকা ৩০ পয়সার দাম এক মার্কিন ডলার। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেন, সরকার আইএমএফ মিশনের সুপারিশ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেননি। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, সরকার দেশের আর্থিক অবস্থা উন্নত করার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। এ ব্যাপারে সরকার দেশী-বিদেশী সবরকম সরকারী অর্থ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছেন। এসব বিশেষজ্ঞের সুপারিশ অনুযায়ী কিছু কিছু আমূল সংস্কারমূলক ব্যবস্থা কার্যকরি করা যেতে পারে। ব্যবস্থাগুলাে কার্যকারি করা হলে পণ্য ও কাজকর্মের হিসেবে টাকার মান বাড়বে। মন্ত্রী এ কথা স্বীকার করেন যে, দামের উঠতি-পড়তির প্রবণতা প্রকৃতিগতভাবে মুদ্রাস্ফীতিজনিত। তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি একথাও বলেন যে, এটা অপরিহার্য। এর জন্য অংশত আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অনুন্নত অর্থনীতি এবং অংশত বাজারে পণ্যস্বল্পতাই দায়ী। নােট ছাপিয়ে ঘাটতি পূরণই মুদ্রাস্ফীতির কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, কোন উন্নয়নশীল দেশই নােট ছাপিয়ে ঘাটতি পূরণের পথ না নিয়ে পারেন , আর এতে সবসময়ই মুদ্রাস্ফীতি ঘটে থাকে। উন্নয়নশীল দেশসমূহকে নােট ছাপিয়ে ঘাটতি পূরণ করতেই হয়। কেননা বেসরকারী খাতে পুঁজি বিনিয়ােগে অনিচ্ছা থাকে এবং দেশের আন্তর্জাতিক সম্পদের ক্ষেত্রে আয়ের পরিধি থাকে সীমিত। এ প্রসঙ্গে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ভারত, সিংহল, পাকিস্তান ও তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, এদেশগুলােও সমভাবে ক্রমবর্ধমান মুদ্রা সরবরাহের বিপদে কবলিত। তাই মুদ্রাস্ফীতির দিক থেকে বাংলাদেশের সমস্যা কোন পৃথক সমস্যা নয়। তবে তফাৎটা এখানে যে, উল্লিখিত দেশগুলােতে মুদ্রাস্ফীতি জনসাধারণের উপর তেমন তীব্র আঘাত হানতে পারেনি। কেননা কাজকর্ম ও পণ্য সরবরাহ সেখানে স্থিতিশীল রয়েছে। মন্ত্রী আরাে বলেন, বাংলাদেশের বাজারে পণ্য ঘাটতির কারণ হচ্ছে অর্থনীতির সমস্ত খাতে উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় উৎপাদনের হার কম।

চোরাচালানও এর একটি কারণ । চোরাচালানের দরুন দেশীয় বাজার থেকে অব্যাহতভাবে পণ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, তার সরকার বরং দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রমাগত পণ্য-সরবরাহ বাড়িয়ে তােলার ব্যবস্থা গ্রহণেরই পক্ষে। এই পন্থায় একদিকে যেমন টাকার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানাে যাবে, অন্যদিকে দেশের রফতানির পরিমাণ বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ স্ফীত করা সম্ভব হবে। জনাব তাজউদ্দিন জোর দিয়ে বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে পণ্যের বন্টন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনগত সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। কেননা দেশের ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যাংকের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ব্যবসায়ীতে ছেয়ে গেছে। এরা প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে অবৈধভাবে ঢুকে অভাবনীয় অর্থ উপার্জন করে চলেছে। এভাবে মুষ্টিমেয় লােকের হাতে ক্রমাগত কালাে টাকা জমা হচ্ছে। তারা বেশি দামে জিনিসপত্র কিনে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত ভাল টাকা’র ক্রয় ক্ষমতাকে অকেজো করে দিচ্ছে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!