ফেব্রুয়ারি ২৮, ১৯৭৪ বৃহস্পতিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
দেশে বর্তমানে বিবেকের সংকট বিরাজ করছে স্টাফ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ দেশে বিবেকের সংকট বিরাজিত রয়েছে বলে উল্লেখ করে সমাজের সকল প্রকার অনাচার ও দুর্নীতির মূলােৎপাটনের জন্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাবার আহ্বান জানিয়েছেন। দুর্নীতিপরায়ণদের হাতে-নাতে ধরা হলে কখনাে খাতির করা হবে না বলে তিনি ঘােষণা করেন। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গত সােমবার সন্ধ্যায় সলিমুল্লাহ কলেজের নবনির্বাচিত ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। কারাে নাম না উল্লেখ করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, দুনীতিবাজদের বিরুদ্ধে যারা বড় বড় কথা বলে, দুনীতিবাজ ধরা পড়লে ছেড়ে দেয়ার জন্যে তাদের অনেকেই ওকালতি করে। তিনি বলেন যে, এমনিভারে প্রত্যেক দুনীতিপরায়ণই যদি কারাের না কারাের ভাই ও খালু হয় তা হলে সরকার কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তিনি দুনীতির বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরােধের আহ্বান জানান এবং ঘােষণা করেন।
যে, সরকার বিচারকের আসনে বসে পক্ষপাতিত্ব করতে পারে না। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, বর্তমানে দেশে বিবেকের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন যে, একমাত্র দেশের যুব সমাজের নিষ্কলুষ মানসিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা নেতৃত্বের মাধ্যমে এই সংকট কাটানাে যেতে পারে। তিনি লবণ নিয়ে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর কারসাজির উল্লেখ করে বলেন যে, লবণ শিল্পে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং গত বছর ৩১ হাজার মণ লবণ উদ্বৃত্ত হয়েছে। তিনি বলেন যে, গণ-প্রতিরােধের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারেনি। উল্লেখ যে, প্রতি বছরে দেশে ১ কোটি ৬০ লক্ষ মণ লবণের প্রয়ােজন রয়েছে। তিনি ছাত্র সমাজকে ছাত্রদের প্রাথমিক দায়িত্ব ছাত্ৰনং অধ্যায়নংতপর” স্মরণ করিয়ে দিয়ে পুঁথিগত বিদ্যার সাথে সাথে অন্যান্য দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ছাত্রদের উদেশ্যে বলেন, লেখাপড়া শিক্ষা করা হয় নিজের বিবেককে শান দেয়ার জন্যে। শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র চাকুরি নয়। শিক্ষা দিয়ে বিবেককে উন্নত করা। এই ব্রত নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাও‘।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি