You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯৭৪ রবিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক বাংলা

সমাজতন্ত্রের পক্ষে আস্থা সৃষ্টি করুনঃ স্টাফ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ব্যাংক অফিসারদের নিজেদের প্রতিভা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে লাগানাের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে হােটেল পূর্বাণীতে ব্যাংকার্স ইন্সটিটিউটের ডিপ্লোমা প্রাপ্তদের মধ্যে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন যে, দেশে শশাষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হিসেবে ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়েছে। এখন আর কোন ব্যাংকের ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দায়ী করার সুযােগ নাই। ব্যর্থ হলে তার জন্য জনগণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই দায়ী করবে। কোন কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য কাজের জন্য তিনি ব্যাংক অফিসারকর্মচারিদের প্রশংসা করেন। তবে অর্থমন্ত্রী এও বলেন যে, স্বাধীনতার পর ব্যাংকিং ব্যবস্থার কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও লক্ষ্য করা গেছে। অফিসার কর্মচারিরা পূর্বের মত উদ্যম নিয়ে এখন কাজ করছেন না। তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন, এই জাতীয়করণ রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ নয়, সমাজতন্ত্রে উত্তরণের প্রথম ধাপ। দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই পর্যায়কে সফল করতে হবে। তিনি সমাজতন্ত্রের পক্ষে জনগণের আস্থা সৃষ্টিরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে পুঁজিবাদ ও সমাজবাদের সংমিশণে মিশ্র অর্থনীতি চলছে। এটা অত্যন্ত কঠিন পর্যায়। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্র বা ধনতন্ত্র এর চেয়ে অনেক সহজ পর্যায়।

তাই আমাদের অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে এগােতে হবে। অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেন, রাষ্ট্রীয় পরিচালনাধীনে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে সুচারুভাবে পরিচালিত। এর জন্য তিনি ব্যাংকের কর্মচারিদের প্রশংসা করেন। অর্থমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পর অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই ব্যাংকিং ব্যবস্থাও শূন্যতার মাঝে কাজ শুরু করে। এ সত্ত্বেও ব্যাংকিং কর্তৃপক্ষ যে দৃঢ়তার সাথে ইন্সটিটিউট অব ব্যাংকার্স গঠনের মাধ্যমে প্রথম ব্যাচের পরীক্ষার আয়ােজন এবং তা শেষ করতে পেরেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি তার ভাষণে সকল পরীক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের নয়া গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেন। অর্থমন্ত্রী তার ভাষণের এক পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্ণনা প্রসংগে বলেন, দেশের আখ চাষিদের কাছ থেকে জোর করে চিনিকলগুলি কর্তৃক আখ নিয়ে যাবার যে অভিযােগ উঠেছে তা যথার্থ নয়। তিনি বলেন, আখচাষিরা প্রতিমণ আখ ৬ টাকা করে বিক্রি করছে। তাদের কোন অভিযােগ নেই বলে তিনি জানান। তবে অভিযােগ রয়েছে এক শ্রেণীর ফড়িয়া ও টাউটদের, যারা বেআইনীভাবে আখ মাড়াই করে গুড়সহ অন্যান্য দেশী মদ তৈরি করতে পারছে না। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অধীনস্তদের অবস্থা ও সমস্যা বুঝে তা সমাধানের উপদেশ দেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ডিপ্লোমাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক দেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!