You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.12.26 | দৈনিক পূর্বদেশ-প্রয়ােজনে বেতন কমিশনের রিপাের্ট পুনবিবেচনা করা যেতে পারে - সংগ্রামের নোটবুক

ডিসেম্বর ২৬, ১৯৭৩ বুধবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

প্রয়ােজনে বেতন কমিশনের রিপাের্ট পুনবিবেচনা করা যেতে পারে ? স্টাফ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রয়ােজন অনুভূত হলে সরকার বেতন কমিমন ও চাকুরি পুনর্বিন্যাস কমিটির রিপাের্ট পুনর্বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন যে, কারণ কোন রিপাের্টই ঐশী গ্রন্থের মত অপরিবর্তনীয় লিখন নয়। অর্থমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের তৃতীয় বার্ষিকী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষনে একথা ঘােষণা করেন। গতকাল ঢাকার একটি প্রেক্ষাগৃহে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী চাকুরি পুনর্বিন্যাস ও বেতন কমিশন রিপাের্ট প্রণয়নে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলােকপাত করেন। বেতন কমিশন রিপাের্ট গণ-বিরােধী বলে আনীত অভিযােগ খন্ডন করে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, এটা গণ-বিরােধী নয়, তবে বােধগম্য কারণে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে তাড়াহুড়াে করে প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন যে, পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় না থাকায় রিপাের্ট সামঞ্জস্য বিধানে কিছুটা বাধার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন যে, ইংরেজ ও পাকিস্তানী আমলে কমিশন কমিশনই থাকত, আন্দোলন এবং গণ-দাবি ধামাচাপা দেয়ার জন্য কমিশন বসান হত। মন্ত্রী বলেন যে, বর্তমান সরকার তা চায়নি বলেই কম সময়ের মধ্যেই রিপাের্ট প্রণয়ন করেছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ১০ম গ্রেড পর্যন্ত পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য ৪০ কোটি টাকা দরকার। কিন্তু টাকা নাই। তিনি বলেন,

দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল না হলে বেতন বৃদ্ধিতে কাজ হবে না। ২২০৮টি স্কেলকে ১০টিতে নিয়ে আসার প্রশ্নে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, “বিপদজনক ফাটল ধরা দালানে চুনকাম করলে চলে নাসেটা ভেঙ্গে ফেলে নতুন দালান তৈরি করা ভাল” তিনি ক্রাস প্রােগ্রাম” নেয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। জনাব তাজউদ্দিন তার ভাষণে গণতান্ত্রিক পরিবেশের পূর্ণ সুযােগ নিয়ে দেশে সুস্থ ও দায়িত্বশীল বিরােধী দল গড়ে তােলার প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দায়িত্বশীল বিরােধী রাজনৈতিক দলই গঠনমূলক সমালােচনা করে সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাহায্য করতে পারে। এমনকি জন সমর্থন নিয়ে তারা সরকারও গঠন করতে পারবেন। সম্মেলনে সুচিন্তিত বাস্তবধর্মী স্বচ্ছ বক্তব্য তুলে ধরার জন্য অর্থমন্ত্রী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের প্রতিনিধিদের অভিনন্দিত করেন এবং বলেন যে, এ ধরনের বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য সামাজতন্ত্রের পথে অগ্রসর হতে জাতিকে সাহায্য করবে। অর্থমন্ত্রী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসীকে সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোেধ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজতন্ত্রের কর্মী ও সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার দরকার বলে উল্লেখ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিনা পরিশ্রমে সম্পদ আহরণ ও তা ভােগ করার কোন সুযােগ থাকা চলবে না। সকলকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাংলাদেশে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। মন্ত্রী বলেন, সর্বক্ষেত্রে জনগণ যদি সচেতন না হন তাহলে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনয়ন কেবলমাত্র সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। অর্থমন্ত্রী দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আলােকপাত করে বলেন যে, বর্তমানে ২শ টাকা বেতনের কর্মচারিরা যে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন তা আশ্চর্যের ব্যাপার। তিনি বলেন যে, তাদের মতই সীমিত অর্থ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট তৈরি করতে পারবে না।