You dont have javascript enabled! Please enable it!

আগস্ট ২৫, ১৯৭৩ শনিবার ঃ দৈনিক বাংলা

পাট ব্যবসাকে তেজী করে তােলার চেষ্টা হচ্ছে ঃ পাট ব্যবসাকে তেজী করে তােলার জন্যে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। তিনি জানান, পাট ব্যবসার জন্যে সরকার প্রয়ােজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করছেন এবং পাট ক্রয় বুথগুলিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পাট ব্যবসা কেন্দ্রগুলিতে পাট ক্রয়ের জন্যে যে বুথ খােলা হবে সেখানে যাতে সশস্ত্র প্রহরার ব্যবস্থা করা হয় তার জন্য তার মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র দফতরকে প্রতিমাসে ১ লাখ ৮৮ হাজার করে টাকা দেবে। পাট মৌসুমের পাঁচ মাস এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, পাট ব্যবসায়ে ২৩৫ কোটি টাকার মত খরচ হবে বলে ধরা হয়েছে এবং এই টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাট ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রুত পাট-চাষিদের কাছ থেকে পাট কিনে নিতে পারে তার জন্যে তাদেরকে অপেক্ষাকৃত কম সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাষিদের কাছ থেকে পাট ক্রয়ের জন্যে এ বছর সারা দেশে মােট ৫’শটি পাটক্রয় কেন্দ্র খােলা হবে বলে তিনি জানান। এর মধ্যে পাট সম্পর্কিত তিনটি কর্পোরেশন স্থাপন করবে ৩২৬টি, জুট মিলস কর্পোরেশন স্থাপন করবে ৮০টি এবং ব্যবসায়ীরা স্থাপন করবে ১০০টি। তিনটি কর্পোরেশন ইতােমধ্যেই ২৮৬টি এবং জুট মিলস কর্পোরেশন ৬২টি পাট ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ পাট-চাষিদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে পাট ক্রয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন সমস্যাবলীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দূরদূরান্তের চাষিদের পক্ষে পাট ক্রয় কেন্দ্রে এসে নায্যমূল্যে পাট বিক্রয় করা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভবপর হয়ে উঠবে না। তারা নিকটবর্তী কোন ফড়িয়াদের কাছে এগুলি বেঁচে নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে। এই অবস্থার মােকাবিলায় তিনি বিশেষ করে সৎ শিক্ষিত ও দেশপ্রেমিক যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এই আদর্শবান যুব সমাজই পারে সক্রিয়ভাবে পাট ব্যবসায়ে অংশ নিয়ে চাষিদেরকে পাটের নায্য মূল্য লাভের সুযােগ দিতে। পাট ব্যবসায়ীরাও দ্রুত পাট ক্রয় ও অন্যান্য ব্যাপারে গতবারের মত এবারও সরকারের সাথে সহযােগিতা করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, দেশে যদি অন্তত ৫০ হাজার পাট ক্রয় কেন্দ্র খােলা যায় তবে হয়ত পাট চাষিদের নায্যমূল্য লাভের নিশ্চয়তা বিধান করা যায় । কিন্তু সত্যি বলতে কি এবার আমরা ৫’শর বেশি পাট ক্রয় কেন্দ্র খুলতে পারিনি। ধানের তুলনায় পাটের সর্বনিম্ন মূল্য কম ধার্য সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জনাব তাজউদ্দিন স্বীকার করেন যে, পাটের মূল্য খুব একটা আকর্ষণীয় হয়নি। তিনি বলেন, এ মূল্য স্থিতিশীল নয়। তবে পাটের মূল্যের স্থিতিশীলতার প্রয়ােজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরােপ করে তিনি বলেন, পাটের মূল্যকে ভবিষ্যতে অবশ্যই স্থিতিশীল করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান অভিজ্ঞতার আলােকে আগামী ডিসেম্বরে সমগ্র পাট নীতিকে পুনর্বিবেচনা করা হবে এবং প্রয়ােজন হলে বর্তমান পাট নীতির সংশােধন করা হবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!