জুলাই ১৬, ১৯৭৩ সােমবার ঃ দৈনিক বাংলা
‘মুসলিম বাংলা’, আজাদ বাংলা কোন দিনই হবে না। বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত তাই ভবিষ্যতে কোনদিনই পুনরায় আজাদ বাংলা বা মুসলিম বাংলা হিসাবে বাংলাদেশের নামকরণ হবে না। অর্থ ও পাট মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। গতকাল রবিবার বিকেলে ঢাকার ওয়াপদা মিলনায়তনে মুজিব নগর কর্মচারি সমিতির জাতীয় সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথি হিসাবে ভাষণ দিচ্ছিলেন। যাদের মনে তেমন ধারণা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, তারা যদি যথাসময়ে তাদের যে ধারণা পাল্টাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের খাতির করা হবে না। উপ-মহাদেশের দু’টো মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সাম্প্রতিক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, এখানকার কেউ কেউ যদি সেভাবে তেমন ধরনের মুসলিম বাংলার স্বপ্ন দেখেন, তাহলে তাদেরকে এ দেশ থেকে পুরাপুরি নির্মূল করা হবে।
তিনি বলেন, নিঃসন্দেহেই বলা যায় দেশে তেমন কোন সংগঠন নেই। কতিপয় দুষ্কৃতিকারীই মুসলিম বাংলার স্লোগান তুলছে। মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক স্লোগান তুলে তারা দেশের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিতে চায়। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নাই। কারণ পাকিস্তানী শাসন থেকে দেশকে স্বাধীন করার সাথে সাথেই এ দেশের মাটি থেকে সাম্প্রদায়িকতাও সমূলে উৎপাটিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জনাব তাজউদ্দিন আরাে বলেন যে, এসব ব্যক্তিরা ভারত বিরােধী প্রচারণা চালিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার কাজে লিপ্ত হয়েছে। একে তিনি দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিপদের বন্ধু ভারত স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সর্বতােভাবে আমাদের সাহায্য করেছে। অর্থমন্ত্রী আরাে বলেন, তাদের সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করতে দৃঢ় সংকল্প। এ ব্যাপারে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছবার জন্য জাতিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, মুজিব নগর কর্মচারিদের দাবি-দাওয়া সরকার অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। তবে মুজিব নগর-অমুজিব নগর প্রশ্ন তুলে জাতীয় ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির প্রয়াস পরিত্যাজ্য। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনতা যুদ্ধকালের আদর্শ ও আশা আকাঙ্খকে সামনে রেখে মুজিব নগরের কর্মচারিদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়ােগ করার আহ্বান জানান। এনা/বিপিআই এ খবর পরিবেশন করেছে।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি