জুলাই ১২, ১৯৭৩ বৃহস্পতিবার ঃ দৈনিক বাংলা ও দৈনিক ইত্তেফাক
পাট রফতানি করে ১৫১ কোটি টাকা আয়; পুড়ে ও পচে নষ্ট হয়েছে ৪ কোটি টাকার পাট। এবার ৩২৬ টি পাট কেন্দ্র থেকে পাট কেনা হবে : স্টাফ রিপাের্টার। অর্থ ও পাটমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ৪০ লক্ষ ৪৩ হাজার বেল কাঁচা পাট বিদেশে রফতানি করেছেন এবং তাতে ১৫১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। সংসদ সদস্য জনাব আকবর উদ্দিন আহমদ সিদ্দিকীর এক প্রশ্নের জবাবে পাট বিষয়ক মন্ত্রী আরাে বলেন, চলতি মৌসুমে পাটের উৎপাদন ৬০ লক্ষ বেল হবে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু অতি বৃষ্টি ও সাম্প্রতিক বন্যায় পাটের ফসল নষ্ট হওয়ায় এই লক্ষ অর্জিত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মােট উৎপাদনের হিসেব সংগ্রহের কাজ চলছে। পৃথিবীর যে সব দেশ গত মৌসুমে আমাদের কাছ থেকে পাট কিনেছে সে সব দেশেই পাট রফতানি করা হবে। জনাব আবদুল হাশেমের এক প্রশ্নের জবাবে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সংসদকে জানান যে, সরকার নিয়ন্ত্রিত ৩টি সংস্থা পাট বাণিজ্য সংস্থা, পাটমূল্য স্থিতিকরণ সংস্থা ও পাট বাজার জাতীয়করণ সংস্থা চাষিদের কাজ থেকে পাট কিনে থাকেন। গত বছর সারা দেশে ২৬০টি কেন্দ্রে পাট কেনা হয়েছিল।
এবার ৩২৬টি কেন্দ্র থেকে পাট কেনা হবে। সংসদ সদস্য জনাব মইনুল হােসেনের এক প্রশ্নের জবাবে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭২-৭৩ সনে জুট ট্রেডিং কর্পোরেশন, জুট মার্কেটিং কর্পোরেশন ও পাট মূল্য স্থিতিকরণ কর্পোরেশনের ৪ কোটি ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ২ শত ৪২ টাকা মূল্যের ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ১শত ১২ মন পাট পুড়ে ও পচে নষ্ট হয়েছে। জনাব এ. কে. মােশাররফ হােসেন আকন্দের এক প্রশ্নের জবাবে পাট মন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বাংলাদেশ ওয়্যার হাউজিং কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে। কর্পোরেশন অন্যান্য শস্যের সাথে পাটের গুদামও তৈরি করবে। এই কর্পোরেশন দৌলতপুরে গত ১৫ নভেম্বরে অগ্নিদগ্ধ দু’লক্ষ ৭৬ হাজার বর্গফুট পরিমিত গুদামের স্থলে ৩ লক্ষ ৪১ হাজার বর্গফুট পাটের গুদাম তৈরি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া উক্ত কর্পোরেশন মহা-পরিকল্পনা প্রণয়ন সাপেক্ষে উত্তরবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় ৩৭টি পাটের গুদাম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আরাে বলেন, গুদামজাত পাটের নিরাপত্তার জন্যে সচরাচর সেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যথা বীমার বন্দোবস্ত করা, পাহারার ব্যবস্থা করা এবং অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করা ও কেউ যাহাতে সহজ দাহ্য পদার্থ যেমন দেয়াশলাইয়ের কাঠি, জ্বলন্ত সিগারেট ইত্যাদি নিয়ে গুদামে অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধিকন্তু গুদামে আগুন লাগার কারণ নির্ণয় করার জন্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির রিপাের্ট অনুযায়ী যথাযযাগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক অতিরিক্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গুদাম পােড়ার কারণ তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত রিপাের্ট এখনও পাওয়া যায়নি। তবে আংশিক রিপাের্ট পাওয়া গেছে।
৭২-৭৩ সালে জাতীয় আয় ৪২৯০ কোটি টাকা ও মােট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চলতি বাজার দরের উপর ভিত্তি করিয়া প্রাথমিক হিসাবে দেখা গিয়াছে যে, ১৯৭২৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় আয় দাঁড়াইয়াছে ৪ হাজার ২শত ৯০ কোটি টাকা। গতকাল (বুধবার) জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য হাদিউজ্জামানের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় আয়ের চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুত করা হইতেছে এবং এই বৎসর আয়কর রিটার্ন জমা দানের পর সর্বোচ্চ আয়কারী ব্যক্তির নাম জানা যাইবে। কৃষি আয়কর অব্যাহতি দেওয়ার ফলে এখনও জাতীয় আয়ের প্রকৃত অবস্থা বােঝা যাইবে না বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, সম্প্রতি এক হিসেবে দেখা গিয়াছে যে, বাংলাদেশে একজন দক্ষ শিল্প শ্রমিকের দৈনিক গড় আয় ৭ টাকা ৯৪ পয়সা এবং একজন অদক্ষ শিল্প-শ্রমিকের দৈনিক আয় ৫ টাকা। ৫৪ পয়সা। পক্ষান্তরে একজন দক্ষ কৃষি শ্রমিকের দৈনিক গড় আয় ৫ টাকা ৮২ পয়সা এবং অদক্ষ কৃষি শ্রমিকের আয় ৪ টাকা ৭৬ পয়সা মাত্র।