You dont have javascript enabled! Please enable it!

জুলাই ১, ১৯৭৩ রবিবার ও দৈনিক পূর্বদেশ

দু’বছর কৃষি আয়কর ধরা হবে না : সংসদ ভবন, ৩০ জুন, বিপিআই। গতকাল অর্থ বিলের উপর সমাপনী ভাষণে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সদস্যদের বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বলেন, আগামী দু’বছর পর্যন্ত কৃষি আয়ের ওপর সরকার কোন কর ধার্য করবেন না। এ ছাড়া ছাতার কাপড় ও শিকের উপর কর ধার্যের প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের কথা তিনি ঘােষণা করেন। তিনি বলেন, দেশের মােট জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগ গরীব কৃষক এবং তারাই সাধারণতঃ ছাতা ব্যবহার করেন। সুতরাং এদের উপর নতুন করের বােঝা বর্তাবে মনে করেই ছাতার কাপড় ও শিকের উপর কর ধার্যের প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উল্লেখযােগ্য যে, ছাতার কাপড় ও শিকের উপর থেকে কর প্রস্তাব প্রত্যাহার করায় সরকারকে ৭ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে হল। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, আগামী দু’বছরের জন্য কৃষি আয়ের ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ফলে দেশ বছরে বিরাশি লাখ টাকার রাজস্ব হতে বঞ্চিত হবে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের শতকরা ৭০ ভাগ লােকের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ দেশের শতকরা ৭০ ভাগ লোেক একান্তভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের ভেতর ও বাইরের জনমতের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি আয়ের উপর থেকে কর প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে নয়া কর প্রস্তাবের ফলে গরীব জনগণ আদৌ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না। কেবলমাত্র ভাগ্যবান সচ্ছল ব্যক্তিদেরই অতিরিক্ত করের বােঝায় অংশ নিতে হবে। তিনি বাজেটে নতুন করে প্রস্তাবকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সমর্থন করে বলেন, সরকার শােষণমুক্ত এক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য উন্নয়ন স্কীম গ্রহণ করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পন্থা নেই। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, রাজস্ব বাজেটে উল্লিখিত উদ্বৃত্ত ১০০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা প্রস্তাবিত ৫২৫.৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য ব্যয় করা হবে।

তিনি বলেন, ৩৫২ কোটি টাকার বৈদেশিক সাহায্য সংগ্রহ করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে এবং এর পরেও ৭২ কোটি ২ লাখ টাকা ঘাটতি থাকবে। বাজেটে মাত্র ২৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকার নয়া কর প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এই অর্থ ঘাটতির মাত্র এক তৃতীয়াংশ। বাকি ঘাটতি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলাের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পূরণ করা হবে। জনাব তাজউদ্দিন দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘােষণা করেন যে, উদ্বৃত্ত বাজেট দেখানাের জন্য নতুন করের প্রস্তাব করা হয়নি। বাজেটে নয়া কর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, নয়া কর প্রস্তাব করা হয়েছে দু’টি প্রধান উদ্দেশ্যে। এর একটি হচ্ছে রাজস্ব আদায় এবং সেই সাথে গরীবদের নয়া কর ভার থেকে অব্যাহতি দেয়া। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিদেশী তামাক আমদানির উপর কর বসানাের প্রস্তাব করা হয়েছে, দেশী তামাকের উপর নয়। গরম কাপড়ের উপর যে নয়া করের প্রস্তাব করা হয়েছে তার বােঝা গরীবদের উপর পড়বে না। মােটা কাপড়ের উপর থেকে বিক্রয় কর সহ সকল কর তুলে নেওয়ার ফলে গরীবরা উপকৃত হবেন। জনাব আহমদ বলেন, সমাজের উঁচুতলার লােকেরাই সিমেন্ট ব্যবহার করেন। তাই এর উপর ধার্যকৃত কর ভার তারাই বহন করবেন। অর্থমন্ত্রী অন্যান্য জিনিসের উপর ধার্যকৃত করের যুক্তি দেখিয়েও বক্তৃতা করেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!