You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.06.07 | দৈনিক ইত্তেফাক-প্রায় ৫ কোটি টাকার পাট পােড় গিয়েছে - সংগ্রামের নোটবুক

জুন ৭, ১৯৭৩ বৃহস্পতিবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক

প্রায় ৫ কোটি টাকার পাট পােড় গিয়েছে। অর্থ ও পাট দফতরের মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, ১৯৭২ সালের মার্চ মাস হইতে ১৯৭৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে আনুমানিক ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫শত ৬২ বেল কাঁচা পাট পুড়িয়া গিয়াছে এবং ইহার মূল্য ৪ কোটি ৮০ লক্ষ ৮৭ হাজার ২ শত ৮৭ টাকা। তিনি গতকাল (বুধবার) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের জনাব আতাউর রহমান খানের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান। স্বতন্ত্র সদস্য জনাব আবদুল্লাহ সরকার জনাব আতাউর রহমানের অনুপস্থিতিতে এই প্রশ্নটি উত্থাপন করেন। পাট মন্ত্রী জানান যে, দৌলতপুর পাট গুদামে অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে যে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হইয়াছিল তাহরাই অন্যান্য অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করিবেন। তিনি মূল প্রশ্নের সহিত সংশ্লিষ্ট আরও বহু অতিরিক্ত প্রশ্নের ব্যপারে নােটিশ চান। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জানান যে, ১৯৭২-৭৩ পাট মৌসুমে ২২ লক্ষ ৫৮ হাজার একর জমিতে পাট চাষ করা হইয়াছে এবং উৎপন্ন পাটের পরিমাণ হইতেছে ৬৬ লক্ষ ৪০ হাজার বেল। তিনি আরও জানান যে, ১৯৭১-৭২ সালে ৪৭ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ১২ লক্ষ ১৩ হাজার বেল এবং ১৯৭২-৭৩ সালে ৮৩ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা মূল্যের ২২ লক্ষ ২৭ হাজার বেল কাঁচা পাট বিদেশে রফতানি করা হইয়াছে। অর্থমন্ত্রী সংসদে ঘােষণা করেন যে, ভারতে মুদ্রিত ১ টাকার নােট বাতিল করা হইবে না।

জনাব আবদুল্লাহ সরকার কর্তৃক উত্থাপিত জনাব আতাউর রহমান খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান যে, ভারতে মুদ্রিত ১০০, ১০ ও ৫ টাকার নােট বাতিলের পর উহার বিনিময়ে ৩১ মে পর্যন্ত ২৭০ কোটি ২১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬৬০ টাকা দেওয়া হইয়াছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান যে, ১ টাকার ৩০ কোটি ১২ লক্ষ, ৫ টাকার ৩০ কোটি ৬০ লক্ষ, ১০ টাকার ৯০ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫০ হাজার ও ১শত টাকার ২৭০ কোটি টাকার নােট ভারতে ছাপান হইয়াছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জানান যে, ১৯৭৩ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বাজারে চালু নােটের মােট মূল্য ৩০৮ কোটি ৩৮ লক্ষ ৮০ হাজার ৫২৫ টাকা। অবশ্য তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, এখনাে ইস্যু করা হয় নাই এমন কি পরিমাণ নােট বাংলাদেশ ব্যাংকের ভােল্টে রহিয়াছে তাহা জাতীয় স্বার্থের খাতিরে প্রকাশ করা সমীচীন নহে। শেখ আবিদুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা শাখার নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী ছিদ্র করিয়া বাতিল করা নােট পুড়াইয়া বিনষ্ট করার জন্য চুলায় রাখার পূর্ব মুহূর্তে ইহা হইতে ভারতে মুদ্রিত ১ হাজার খানা ১০০ টাকার নােট গত ২৯ মার্চ তারিখে চুরি হয়। উহা হইতে ২৪৩ খানা নােট ইতােমধ্যে উদ্ধার করা হইয়াছে। এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত ৬ জন ব্যাংক কর্মচারিকে। গ্রেফতার করা হইয়াছে এবং তদন্ত চলিতেছে । ফরিদপুরের মােল্লা শামসুদ্দীন জানিতে চাহেন যে, স্বাধীনতার পর কয়টি ব্যাংক ডাকাতি হইয়াছে এবং কি পরিমাণ টাকা খােয়া গিয়াছে। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, ইহা একটি আলাদা প্রশ্ন, অতিরিক্ত প্রশ্ন নহে। কাজেই ইহার জন্য নােটিশ দিতে হইবে। অর্থনৈতিক সংগ্রামের পথে ঐক্যবদ্ধ যাত্রার আহ্বান জানাইয়া অর্থমন্ত্রী দৃঢ় আশা পােষণ করেন যে, জনগণ বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে জাতীয় মুক্তি অর্জনকরিয়াছেন, সেই জনগণ দুর্গম পথ পার হইয়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌছিবেনই।

২৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকার নয়া কর ও কর বৃদ্ধির প্রস্তাব ঃ ৩৭৪ কোটি ৭২ লক্ষ টাকার উদ্বৃত্ত বাজেট ঃ ৫২৫ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জাতীয় সংসদে ২৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকার নয়া কর ও কর বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্বলিত ৭৯ কোটি ২ লক্ষ টাকার উদ্ধৃত্ত বাজেট পেশ করেন। উন্নয়ন ও পুননির্মাণ বাজেটে ৫ শত ২৫ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। প্রায় ৩০টি খাতে নয়া কর ও কর বৃদ্ধির প্রস্থাবসহ বাজেটে রাজস্ব খাতে ৩ শত ৭৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা আয় ও ২ শত ৯৫ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হইয়াছে। সাধারণ লােকের কর-ভার লাঘবের জন্য সুতিবস্ত্রের উপর বর্তমানে আরােপিত শতকরা ৫০ ভাগ আমদানি শুল্ক মােটা কাপড়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হইয়াছে ও মাঝারি কাপড়ের ক্ষেত্রে শতকরা ২৫ ভাগ হ্রাস করা হইয়াছে। পক্ষান্তরে, স্বল্পমেয়াদি আশু সমস্যার মােকাবিলা করা ও সঙ্গে সঙ্গে সমাজতন্ত্রের দিকে যাত্রার পথ প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় ১৯৭৩৭৪ সালের বার্ষিক উন্নয়ন ও পুননির্মাণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হইয়াছে। বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিল্প, বাণিজ্য ও পরিবহনের ক্ষেত্রে সরকারী খাতে অধিকতর দক্ষতা অর্জন, আত্ম-নির্ভরতার পথে পদক্ষেপ, অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি, বন্টন ব্যবস্থার উপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারিত ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে নিম্নগামী ও স্থিতিশীল করণের প্রতি লক্ষ্য রাখা হইয়াছে। ৫শত ২৫ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার এই বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য উন্নয়ন বর্হিভূত খাতের উদ্বৃত্ত ১ শত কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা, বৈদেশিক সাহায্য বাবত ৩ শত ৫২ কোটি টাকা ও অতিরিক্ত কর আরােপ করিয়া ২৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তি বন্টন ও বিক্রয় করিয়া ২ কোটি টাকা নিয়ােগ করা হইবে।

প্রয়ােজনীয় বাকি ৪৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার ঘাটতি পূরণের জন্য প্রাইজবন্ড ও বিনিয়ােগ পত্রের মাধ্যমে অর্জিত ১৫ কোটি টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানা হইতে ১৩ কোটি টাকা বিনিয়ােগ করা হইবে। ইহার পর যে কিছু পরিমাণ ঘাটতি থাকিবে উহা কর সংগ্রহ পদ্ধতির সুষ্ঠু বিন্যাস করিয়া প্রচলিত ও নতুন কর হইতে পূরণ করা হইবে। জাতীয় রাজস্ব বাজেটে চলতি বছরে ১শত ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি দেখান। হইয়াছে। এই ১শত ৩২ কোটি টাকার মধ্যে ১ শত ২ কোটি টাকা আমদানি ও রফতানি শুল্ক এবং আবগারি, বিক্রয় ও আয়কর হইতে পাওয়া যাইবে। আগামী অর্থ বছরের শুষ্কযােগ্য আমদানির পরিমাণ প্রায় ৫শত কোটি টাকা হইবে বলিয়া আশা করা হইয়াছে। আমদানির এই মাত্রা বাস্তবায়িত হইলে আমদানি শুল্ক ও বিক্রয় কর বাবত ১ শত ৮৮ কোটি টাকা আদায় হইবে। আগামী বছরে আবগারি কর বাবত ৯৮ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা ও সুদ, ডিভিডেন্ট ও মুলধন প্রাপ্তিরূপে ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত খাত হইতে ৩২ কোটি টাকা পাওয়া যাইবে বলিয়া আশা করা হইয়াছে। ইহা ছাড়া ভূমি রাজস্ব, স্ট্যাম্প ও রেজিষ্ট্রীকরণ বাবত মােট প্রাপ্তিও চলতি বছরের তুলনায় সামান্য বেশি হইবে বলিয়া অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। আগামী বছরে শিক্ষা খাতেই অধিক রাজস্ব ব্যয় হইবে। মােট রাজস্ব ব্যয়ের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ শিক্ষা খাতে নিয়ােগ করা হইয়াছে। নিজস্ব খুচরা মুদ্রা তৈয়ারির জন্য ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ও আদমশুমারির জন্য ব্যয় বরাদ্দ হইয়াছে। ২কোটি ১০ লক্ষ টাকা। ১৯৭৩-৭৪ সালে রাজস্ব খাতে উদ্বৃত্ত ৭৯ কোটি ২ লক্ষ টাকা উন্নয়ন ও পুননির্মাণ পরিকল্পনার বাস্তবায়নে প্রযােজ্য হইবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি