You dont have javascript enabled! Please enable it!

এপ্রিল ২৪, ১৯৭৩ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক বাংলা

নববর্ষের অনুষ্ঠানে তাজউদ্দিন; ফরমায়েশ দিয়ে সংস্কৃতি ও সভ্যতা তৈরি করা। যায় না : অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, সংস্কৃতি ও সভ্যতা ফরমায়েশ দিয়ে তৈরি করা যায় না। দেশ ও জনতার মধ্যে থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এটা গড়ে ওঠে। তবে সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য পথ নির্দেশের প্রয়ােজন রয়েছে। আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে নববর্ষ উপলক্ষে আয়ােজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় প্রাক স্বাধীনতাকালে বেতার মারফত বাংলা ভাষায় উর্দু শব্দ মিশিয়ে বাংলার রূপান্তর ঘটানাের প্রচেষ্টা প্রতিহত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির উল্কর্ষ সাধনের জন্যই আমাদের চেষ্টা করা উচিত, কিন্তু আধুনিকতার বিনিময়ে নয়। মন্ত্রী বলেন, অতীতে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এখন আমাদের দেশ স্বাধীন। এখন আমাদেরকে নিজেদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতার এমন একটি উন্নত ঐতিহ্য উত্তরাধিকার হিসাবে রেখে যেতে হবে যা বংশধরদেরকে প্রেরণা যােগাবে এবং যার ফলে ভবিষ্যৎ বংশধর গর্ব অনুভব করতে পারেন।

তিনি বলেন, ইতিহাসে এই প্রথম বাঙ্গালিদের আবাসভূমি হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধনে আমাদের চেষ্টা করা উচিত। আমাদের সাহিত্য, চিত্রকলা ও লােক কাহিনীর যে সব উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে; সেগুলাে একত্রিত করে সংস্কৃতির ইতিহাস আবার নতুন করে সৃষ্টি করা যায়। এ জন্য এ কাজে বিভিন্ন স্তরের চিন্তাধারার মিশ্রণ ঘটিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ঘুম পাড়ানিয়া গান আমাদের গাইলে চলবে না, যে গান আমাদের কঠোর পরিশ্রম করার জন্য জাগিয়ে রাখবে, সে গান আমাদের গাইতে হবে। তিনি বলেন, উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে নববর্ষকে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি পুরাতন বসরের ভুল-ভ্রান্তি বা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভ করে নববর্ষে নির্ভুল এবং সঠিক পথে যাত্রার শপথ গ্রহণ করতে পারি, তবেই নববর্ষের এই সব আচার-অনুষ্ঠান আমাদের জন্য তাৎপর্যময় হতে পারে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!