এপ্রিল ৮, ১৯৭৩ রবিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
বাংলাদেশ পকিস্তানের নেয়া ঋণ পরিশােধ করবে না : ঢাকা, ৬ এপ্রিল (এনা)। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, পাকিস্তানকে দেয়া বৈদেশিক ঋণ আংশিকভাবে পরিশােধ করার কোন প্রশ্নই ওঠে না, কারণ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে পাকিস্তানকে ঋণ দেয়া হয়েছিল। আর তা ছাড়া ঐ ঋণ পাকিস্তানকে দেয়া হয়েছিল, বাংলাদেশকে নয়। অর্থমন্ত্রী আজ অপরাহ্নে সচিবালয়ে নিজের দফতরে পাঁচটি পশ্চিম জার্মানীর সংবাদপত্রের লন্ডনস্থ সংবাদদাতা মি. ডিয়েটার স্পাডাকএর সাথে আলােচনা করছিলেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেনি। এর মূল্য হচ্ছে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন। তিনি বলেন যে, পাকিস্তান বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলে এবং তার স্টেট ব্যাংকে মজুদ সােনার অংশ দেয়নি। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে আমরা কেন তার দায়ের অংশ নেব। তবে স্বাধীনতার আগে বৈদেশিক ঋণের সাহায্যে শুরু হয়েছিল এই ধরনের অসমাপ্ত প্রকল্পগুলাে শেষ করার ব্যাপারে নতুন করে। আলােচনা হতে পারে। নতুনভাবে পুনরায় কার্যকরি করাও যেতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিক বা না দিকে তাতে কিছু আসে যায় না।
শতাধিক দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি বলেন যে, স্বীকৃতি দান একতরফা ব্যাপার নয়, বরঞ্চ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। জনাব তাজউদ্দিন আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, যা সােভিয়েট রাশিয়া কিংবা চীনের ধরণে হবে না, বরঞ্চ তা হবে। আমাদের নিজেদের মত। আমরা গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যে একটি সুষম সমন্বয় ঘটাবাে, যা বিশ্বে একটি অসাধারণ ব্যাপার হবে। বাংলাদেশে বেসরকারী বৈদেশিক পুঁজি খাটানাে যাবে কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের প্রয়ােজন ও সুবিধার দিকে সঙ্গতি থাকলে বিদেশী বেসরকারী পুঁজিকে স্বাগত জানানাে হবে। তবে তা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। আমরা বৈদেশিক বেসরকারী পুঁজি। বিনিয়ােগের বিনিময়ে নায্য লভ্যাংশ দিব। পুঁজি বিনিয়ােগের ব্যাপারে কিছু শর্ত থাকবে বলে তিনি জানান। পুঁজি বিনিয়ােগের সম্ভাব্যতা ও পরিকল্পনা তৈরি করবে আমাদের লােকেরা। পুঁজি বিনিয়ােগের বদলে। আমরা কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চাই না। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ ও খনিজ সম্পদ কম। আপনারা কিভাবে দেশকে উন্নত করবেন এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশের জমি অত্যন্ত উর্বর।। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গ্যাস বাংলাদেশের ভূ-গর্ভে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে তেল আবিষ্কারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা, রয়েছে প্রচুর চুনাপাথর, রয়েছে জলবিদ্যুৎ ও মৎস্য ব্যবসায়ের প্রচুর সুযােগ। এর উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ অগ্রসর হবে। এ প্রসঙ্গেই তিনি জাপান ও সুইজারল্যাণ্ডের উদাহরণ। দেন। এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন যে, আমাদের জনগণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক এই। অভিযোেগ সত্য নয়। তারা সবসময় ঐক্যবদ্ধ।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি