সেপ্টেম্বর ৩০, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক বাংলা
বিশ্বব্যাংকের সভায় তাজউদ্দিনের হুঁশিয়ারি ; ধনী ও দরিদ্র দেশের বৈষম্য বিশ্বশান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপঃ ওয়াশিংটন, ২৯ সেপ্টেম্বর (রয়টার/এনা)। গতকাল এখানে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে উদার মনােভাব নিয়ে সাহায্য দানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের ধনী ও গরীব দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য যে রকম ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে তাতে বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে, বিশ্ব শান্তির পক্ষে এ বৈষম্য এক মারাত্মক হুমকি রূপে এগিয়ে আসছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ অভিযােগ করেন যে, বিশ্বের ধনশালী দেশগুলি সহযােগিতার লক্ষ্য সংকুচিত করছে এবং যে-টুকু সাহায্যদান করছে তাও শর্ত সাপেক্ষে সাহায্য। সাম্প্রতিক ভাসমান পাউন্ড স্টার্লিং পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধনশালী দেশসমূহের দায় পরিশােধ বা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট গরীব দেশসমূহের ভাগ্য তথা অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। গরীব দেশসমূহের অর্থনীতির উপর ধনী দেশের বা দেশসমূহের প্রতিক্রিয়া মারাত্মকভাবে দেখা দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, গত ২৫ বছরে বিশ্ব যে কেবল ধনী ও দরিদ্র দেশসমূহের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছে তা নয় বরং বিভক্ত দুই গ্রুপের দেশগুলাের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও দেখা দিয়েছে দুঃখজনকভাবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়েনি এবং গরীব দেশগুলির জাতীয় উৎপাদনের লক্ষ্য হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, বৈদেশিক সাহায্য প্রকল্পের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ অভিযােগ করেন যে, কিছু দেশ এমন কঠিন শর্ত ও স্বল্প মেয়াদি ঋণ দেয় যার সঙ্গে ব্যক্তিগত রফতানিকারকদের দেয়া ঋণের কোন তফাৎ নেই। এসব ঋণ নিয়ে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশসমূহের কোন কাজ হয় না। অনুন্নত ও দরিদ্র দেশসমূহের প্রয়ােজন সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলি বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে তাদের শর্তাবলী আরও সহজ করবে। তিনি বলেন ট্যারিফ, কোটা ও অভ্যন্তরীণ বিধিনিষেধের মাধ্যমে উন্নত দেশসমূহে অনুন্নত ও গরীব দেশগুলাের প্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি অভিযােগ করেন যে, ধনী দেশগুলি দরিদ্র ও অনুন্নত দেশসমূহের কৃষিপণ্য ও শিল্পপণ্যের ওপর সংরক্ষণ নীতি আরােপ করে আসছে।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি