সেপ্টেম্বর ১১, ১৯৭২ সােমবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
চীন স্বীকৃতি দিক আর নাই দিক কিছু আসে যায় না : অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন। আহমদ বলেন, এই উপ-মহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ জাতিসংঘে যেতে চেয়েছিল। পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করে নেয় তা হলে এই উত্তপ্ত হাওয়া দূর হয়ে এখানে শান্ত হাওয়া বিরাজ করবে। আমরা যুদ্ধের প্রতিশােধ চাই না, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি শত্রু ও বন্ধু সেজে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, চীন উপরে বসে এবং আমেরিকা তলে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই দুই দেশের পথ পৃথক হলেও উদ্দেশ্য তাদের এক, চীন ভেটো দিয়েছে, আমেরিকা ভেটো দেয়নি।
তারা উভয়েই বাংলাদেশে একটুখানি ঠাই চায়। জনাব তাজউদ্দিন রাষ্ট্রীয় নীতিতে বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দলকে দেশের উন্নতিকল্পে জাতীয় ঐক্য গড়ে তােলার আহ্বান জানান। আদমজীতে শ্রমিক দাঙ্গার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ জাতীয় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গার যাতে পুনরাবৃত্তি ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি কল-কারখানা ও খেতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের সকল শ্রমিক ও কৃষকের প্রতি আহ্বান জানান। ছাত্রদেরকে পড়ালেখার প্রতি মনােযােগী হবার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে সব ছাত্র নকল করে পরীক্ষা পাস করে পরবর্তীকালে তারাই দুর্নীতিবাজ আমলায় | পরিণত হয়। তিনি ছাত্র সমাজকে সমাজতন্ত্রের কারিগর হিসাবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান। দেশের রাজনৈতিক কাঠামাে গণতান্ত্রিক আর অর্থনৈতিক কাঠামাে সমাজতান্ত্রিক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চীনের ভেটো প্রয়ােগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, চীন বা কোন রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল কি দিল না তাতে বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না। আকাশে সূর্য উঠলে যদি কেউ তা না দেখে তবে তাকে অন্ধ বলেই ধরে নিতে হবে।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি