You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.07.08 | দৈনিক বাংলা-ত্যাগ স্বীকারে রাজি না হলে বিত্তবানরা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে নির্মূল হয়ে যাবে; আগামী বছর পাঁচসালা পরিকল্পনা চালু হবে - সংগ্রামের নোটবুক

জুলাই ৮, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক বাংলা

ত্যাগ স্বীকারে রাজি না হলে বিত্তবানরা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে নির্মূল হয়ে যাবে; আগামী বছর পাঁচসালা পরিকল্পনা চালু হবে ঃ স্টাফ রিপাের্টার। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে দরিদ্র জনগণের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে বিনিয়ােগ ও প্রাথমিকভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার কথা ঘােষণা করেন। গতকাল শুক্রবার ১৯৭২ সালের উন্নয়ন বাজেট সম্পর্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ভাষণ দিচ্ছেলেন। তিনি সমাজতন্ত্রে উত্তরণের এই সূচনাকালে অপেক্ষাকৃত বিত্তবানদেরকে দেশের জনগণের দারিদ্রতা মােচনের আবশ্যকীয় সম্পদ সৃষ্টিতে অংশ নেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্রের অভীষ্ট লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে উপনীত হবার জন্য বিত্তবানদেরকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। অন্যথায় এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম তাদেরকে সমূলে ভাসিয়ে নিতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শােষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার আওতায় জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন ও সে উদ্দেশ্যে পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কর্মসূচি সফল করে তােলার জন্য পরিকল্পনায় যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, প্রয়ােজনের তুলনায় তা ন্যূনতম। অথচ এই ন্যূনতম পরিকল্পনা কার্যকরি করার জন্য যে বিপুল সম্পদ দরকার যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থায় তা সংগ্রহও দুঃসাধ্য। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, প্রশাসন যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের অভীস্পিত সামাজিক বিপ্লব সাধন করতে হবে। প্রশাসন যন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছিল এক ঔপনিবেশিক জনগণের প্রয়ােজনে। গণ-বিরােধী সরকারসমূহের অভিপ্রায় সিদ্ধির জন্য সে প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করা হত।

এখন তাকে একটি বৈপ্লবিক সমাজ ব্যবস্থায় জনগণের সেবায় নিয়ােজিত করতে হবে। এই অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যারা চলতে পারবেন না, তাদেরকে পশ্চাতে ফেলেই জনগণের জয়যাত্রা অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাবে। তিনি সমাজ বিপ্লবের পথকে সুগম করার জন্য রাজনৈতিক কর্মীদের বুলি সর্বস্বতা ও স্বজনপ্রীতি পরিহার করে দেশের কাজে আত্মনিয়ােগের আহবান জানান। অর্থমন্ত্রী জানান যে, দেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা, আগামী বছর চালু হবে। তবে চলতি আর্থিক সালকেই এই পরিকল্পনার প্রথম বছর হিসাবে গণ্য করা হবে। তিনি বলেন, যথােপযুক্ত পরিসংখ্যান ও দেশে কি পরিমাণ সম্পদ আছে সে সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পর্যাপ্ত লােকের ও সময়ের অভাবহেতু পাঁচসালা পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতার দরুন এবারের পরিকল্পনা উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিবর্তে একটা অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় রূপ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বিত্তবানদের বেশি করে ত্যাগ স্বীকার করার আহবান জানিয়ে বলেন, এবারের বাজেটে নয়া কর ধার্যের কোন সুযােগই ছিল না। তবে ভবিষ্যত বাজেটে নয়া কর ধার্য করা হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য যত বেশি কর ধার্য ও ত্যাগ স্বীকার করা যাবে ততই পরনির্ভরশীলতা কমবে। তিনি বলেন, নেহায়েত প্রয়ােজনের খাতিরে যে বিদেশী সাহায্য আমরা গ্রহণ করব তা যতদূর সম্ভব ভিন্ন ভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হবে।

দেশের নানাবিধ সমস্যাসংকুল এই বছরেও আগাম অনুপাত খাতে এক দেশ থেকে অধিকাংশ সাহায্য না নিতে হয় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সাহায্য যেন রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি অথবা অর্থ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে উদ্যত না হয় সেদিকে সতর্ক সৃষ্টি রাখা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান যে, বর্তমান পরিকল্পনায় যে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যাবে তার মধ্যে মার্কিন সাহায্য এক তৃতীয়াংশের কম হবে। তিনি বলেন, যে বিদেশী সাহায্য আসবে তা মঞ্জুরি হিসাবেই আসবে। ৩৭৫ কোটির মধ্যে মাত্র ৮৭ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে আমরা পাব। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বন্ধু সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলাের নিকট হতে প্রচুর পরিমাণ সাহায্য আসবে। তিনি বলেন যে, তারা এ পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখ টন খাদ্য শস্য ছাড়াও জুন মাস পর্যন্ত ১৪৫ কোটি টাকা বাংলাদেশকে প্রদান করেছে। পরিকল্পনা। কমিশন ভূমি সংস্কার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। এ ব্যাপারে তাদের সুপারিশ পাওয়ার পর সরকার একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, জমির মালিকানা চাষিদের নিকট যাওয়া উচিত। অন্যথায় আগের সেই সামন্ত ব্যবস্থাই চলতে থাকবে, যা বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রের আদর্শকে নস্যাৎ করে দেবে। তবে কাগজি নােট বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন যে, পাকিস্তানী নােট বাজার হতে তুলে নেয়ায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি উন্নতিশীল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য, এরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে ভয় পাবার কিছু নেই।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি