ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
ভাষা আন্দোলনের পরিণতিতে সূচনা হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি (বাসস)। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন বলেন, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানী চক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে বাঙ্গালিদের উদ্বুদ্ধ করেছে, আর তারই পরিণতিতে সূচনা হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন দৈনিক বাংলার সম্পাদক জনাব আব্দুল তােয়াব খান। বাসস-এর খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে এই সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বাঙ্গালিরা নিজেদের সমস্যাবলী সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য নিজেদের সংগঠিত করে তােলে।
ভাষা আন্দোলনই বাঙ্গালিদের এক দুরন্ত শক্তিতে জাগ্রত করে তােলে। সক্ষম করে তােলে তাদের ইয়াহিয়া চক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে এবং পরিণামে ইয়াহিয়া চক্রকে এ দেশের মাটি থেকে উচ্ছেদ করতে। দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য অকাতরে প্রাণ বলি দিতে এই ভাষা আন্দোলনই আমাদের উদ্বুদ্ধ করে তােলে। ভাষা আন্দোলনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৫২ সালে দেশের মুসলিম লীগ সরকার শুধু যে এ দেশের তরুণদের হত্যা করেছে তাই নয়, সীমান্তের অপর দিকের হিন্দুরা পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াসী হয়েছে বলেও সে সময় তারা (মুসলিম লীগ। সরকার) প্রচারণার ঝড় বইয়ে দেয়। এই প্রচারণাকে কেন্দ্র করেই তারা সাম্প্রদায়িকতাকেই উস্কে তােলে। অবশ্য তাদের এই ধরনের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালেই ভাষা আন্দোলন সূচিত হয় আর এর পরিণতি ঘটে ১৯৫২ সালে। নেতৃত্ব থাকলে ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিই দেশে পাল্টা সরকার গঠন করা যেতে পারত বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি