You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৭২ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

অর্থনীতি পুনর্গঠনে আত্মনিয়ােগ করুন : ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি (বাসস)। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ মুক্তিযােদ্ধা, ছাত্র ও তরুণদের প্রতি দেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে পুনরায় আত্মনিয়ােগের আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আজ স্থানীয় সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুলে আয়ােজিত এক শােকসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে এই স্কুলের শহীদ তিনজন শিক্ষক এবং দুই জন ছাত্রের স্মরণে শােক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ মানুষ কর্তৃক মানুষের শােষণ থেকে মুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে নি:স্বার্থ নিবেদিত এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি বলেন, যে আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তারা শহীদ হয়েছেন তাকে পূরণ করেই আমরা তাদের প্রতি সত্যিকারভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে পারি। দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর পাশবিকতার উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, তাদের নির্যাতন অতীতের এ ধরনের সব ইতিহাসকে ছাড়িয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আমেরিকার নিক্সন সরকারের ভূমিকার নিন্দা করেন। তবে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামকে সমর্থন করার জন্য তিনি আমেরিকার জনগণ, সংবাদপত্র এবং গণতন্ত্রমনা নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

অর্থমন্ত্রী পাকিস্তানের স্বৈরাচারী চক্রকে সমর্থন দেবার জন্য চীনা নেতৃবৃন্দের ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও আমাদের স্বাধীনতাকে হরণ করে নেবার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু নিবেদিতপ্রাণ তরুণরা এ ধরনের ষড়যন্ত্রকারীদের ধ্বংস করে দেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে সঠিক শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করতে না পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বিপ্লব পূর্ণ হবে না।

তিনি বলেন, শহীদদের নামে আমাদের শপথ—লাখাে লাখাে শহীদানের রক্তের মূল্যে স্বাধীনতার ফল ঘরে ঘরে পৌছাব। মুষ্টিমেয় কয়েকজন তা আত্মসাৎ করতে পারবে না। অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন, মুক্তি সংগ্রামের শেষপর্যায়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছিল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শাসক গােষ্ঠীর এই ষড়যন্ত্রে ঢাকার পতনে আর একদিন বিলম্ব হলেই আমরা কোন বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত ব্যক্তিকে জীবিত পেতাম না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর আমি খবর পাই যে, ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় গভর্নর হাউজে বাঙ্গালি অফিসারদের এক সভা ঢেকে সকলকেই হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তখনই আমি মিত্রবাহিনীকে অনুরােধ করি গভর্নর ভবনে বােমা বর্ষণ করে এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিতে। ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে গভর্নর ভবনে তাবেদার গভর্নর মালেকের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক চলাকালে মিত্রবাহিনী সাহস ও বীরত্বের সাথে সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!