You dont have javascript enabled! Please enable it!

জানুয়ারি ১৭, ১৯৭২ সােমবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

সােনার বাংলা গড়ে তােলাই হবে শহীদদের প্রতি শ্রেষ্ঠ সম্মান ঃ ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি (বাসস)। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আজ ঢাকার উপকণ্ঠে এক জনসভায় বলেন, “যখন আমরা আমাদের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করে বঙ্গবন্ধুর সােনার বাংলা গড়ে তােলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হব তখনই আমরা শহীদদের প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধা জানাতে পারব”। আজ জাতীয় শােক দিবস উপলক্ষে ঢাকার বাসাবােতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি উপরােক্ত মন্তব্য করেন। সভায় মুক্তিযােদ্ধা শহীদ আলাউদ্দিনের দেশভক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় । মুক্তি সংগ্রামের দিনগুলাের কথা উল্লেখ করে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, “গত ২৪ বছর ধরে যাদের সাথে বাঙ্গালিরা বসবাস করল, তারা এতদিন ধরে আমাদের শাসন ও শােষণ করে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বরং তারা দেশ ত্যাগের প্রাক্কালে এ দেশকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করতে চেয়েছিল। তারা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু তারা যেটা জানত না, সেটা হল যে, বাঙ্গালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সম্পূর্ণরূপে একটি পরিবর্তিত জাতিতে পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এই প্রথম এ তথ্য প্রকাশ করেন যে, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত বছর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ প্রদানের জন্য বক্তৃতা লিখছিলেন সে সময় ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে এক বার্তা এসে পৌছায়, তাতে তিনি (ইয়াহিয়া খান) শেখ সাহেবকে জানান যে, তিনি বাংলাদেশের জন্য যে দাবি জানিয়েছেন তার চেয়ে বেশিই দেয়া হবে।

তখন থেকেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমাদের ধোকা দেওয়া হচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধু তখন থেকেই পরিস্থিতি মােকাবেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। অর্থমন্ত্রী আরাে বলেন, সত্যি কথা বলতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতা ছিল জাতির প্রতি একটি অবিস্মরণীয় নির্দেশ। অতঃপর ২৫ মার্চের পর মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে আমি যখনই কোন যুবকের সাথে সাক্ষাৎ করেছি দেখেছি তারা কঠিন পরিশ্রম করছেন। কিন্তু যখনই আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি আপনাদের কি প্রয়ােজন? তখনই তারা সবাই একবাক্যে বলেছেন, আমাদের অস্ত্র দিন, আমরা যুদ্ধ করব । আর একটি ঘটনার উল্লেখ করে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, কয়েকটি বৃহৎ শক্তি আমাদের সংগ্রামকে বানচাল করতে চেয়েছিলেন। তারা আমাদের বলেছিলেন, দু’টোর মধ্যে একটা আপনারা ইচ্ছা করলে পেতে পারেন ।

হয় স্বাধীনতা নয় বঙ্গবন্ধু, দু’টো একসাথে পাবেন না। কিন্তু আমরা তাদের বলেছিলাম আমরা দু’টোই পাব এবং আজ এটা সত্যি যে আমরা দু’টোই পেয়েছি। শহীদ আলাউদ্দিন ও অন্যান্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ আমাদের একমাত্র সান্তনা হল যে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং প্রত্যেকের কাছে স্বাধীনতার ফল পৌছে দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাছাড়া আমরা যাদের প্রতি আস্থা স্থাপন করেছিলাম, জনগণের নির্বাচিত সেই সব প্রতিনিধিরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন নাই। তিনি জনসাধারণ ও মুক্তিযােদ্ধাদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন কাজে এবং দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কঠিন দায়িত্বে আত্ম-নিয়ােগের আহ্বান জানান। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ যুবকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, বিদেশে বাংলাদেশের বদনাম করার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আরও বলেন যে, কোন রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃত দিলেই জনাব ভুট্টো তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিচ্ছেন। এর পরিণতি এটাই হবে যে, তিনি নিজেকে নি:সঙ্গ করার পথ বেছে নিচ্ছেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!