জানুয়ারি ৩, ১৯৭২ সােমবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
স্বাধীন ও দায়িত্বশীল সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠাই সরকারের লক্ষ্য ঃ ঢাকা, ২ জানুয়ারি (এপিবি)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ নবগঠিত বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। পুনর্গঠিত করার কাজে সর্বাত্মক সহযােগিতা দানের জন্য দেশের সাংবাদিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার একটি বিপ্লবী সরকার এবং দেশের সবকিছুই বিপ্লবের গতিতে এবং যুদ্ধাবস্থার মত চালিত হবে। প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, স্বাধীন ও দায়িত্বশীল সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠাই তার সরকারের লক্ষ্য। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের জন্য অনেক কিছু। করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে তিনি। অবগত আছেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সব সমস্যা সমাধানে সরকার যত্নবান হবেন। হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েও যে সব সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, এখন তাদের নবলব্ধ স্বাধীনতা রক্ষা করতে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। অহেতুক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে এই জাতীয় সংবাদ যাতে পরিবেশিত হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য তিনি সম্পাদকদের কাছে আবেদন জানান।
তিনি যে কোন মূল্যে আইন-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান। ধর্মের নামে শােষণ চলবে না : অপর এক খবরে প্রকাশ, একটি বৌদ্ধ প্রতিনিধি দল আজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে তিনি বলেন যে, ধর্মের উপর ভিত্তি করে দেশে কোন রাজনৈতিক দল থাকবে না। অর্থনৈতিক ও গঠনমূলক কর্মসূচির উপর ভিত্তিশীল রাজনৈতিক দলগুলােকেই শুধু এখানে কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, নবলব্ধ রাষ্ট্র বাংলাদেশ হবে একটি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। বাংলাদেশে প্রতিটি ধর্মের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। রাষ্ট্র কোন ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। ধর্মের নামে কাউকে শােষণ করতে দেয়া হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী ঘােষণা করেন। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, এই সত্যকে যে সব রাষ্ট্র মেনে নেবে তার সরকার তাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতি অনুসরণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় ভিত্তিতে সমাজে কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থাকবে না। দেশের সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত দলই শুধু সংখ্যালঘু হিসাবে অভিহিত হবে।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি