You dont have javascript enabled! Please enable it!

ডিসেম্বর ২৬, ১৯৭১ রবিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

বাংলাদেশ সবার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতে চায় : ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর (এপিবি)। প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, বাংলাদেশ বিশ্বের সবার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহ অবস্থান করতে চায় এবং এই নতুন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দানের জন্য তিনি সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান। আজ বিকালে তিনি বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলােচনা করছিলেন। চীনের সাথে সম্পর্ক ঃ চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কি রকম সম্পর্ক থাকবে এই মর্মে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশ সবার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চায়। ফলে কোন রাষ্ট্রের সাথে শত্রুতা করার প্রশ্ন ওঠে না। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি সকলকে এই বাস্তব সত্য স্বীকার করে নিতে বলেন। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, চীন একটি মহান জাতি, সে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সবসময় সংগ্রাম করে এসেছে। বাংলাদেশের স্বার্থের ব্যাপারে চীন নেতৃবৃন্দের মনােভাব পরিবর্তন করতে চীনা জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। শাসনতন্ত্র ঃ দেশে খুব শীগগির একটি শাসনতন্ত্র দেয়া হবে এই মর্মে এক আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে জনগণের আশা-আকাংখা প্রতিফলিত হবে।

কারণ মানুষ মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে নিয়ে সংগ্রাম করেছে। তাদের সে সংগ্রাম ব্যর্থ হবে না। তিনি বলেন যে, শাসনতন্ত্র প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত যে সব পুরানাে আইন দেশের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর নয় তা বলবৎ রাখা হবে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, জাতির সম্মুখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেটা, সেটা হল দেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করা। গত নয় মাস যাবত যে সকল নাগরিক দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। জাতীয় সরকার ঃ বাংলাদেশে একটি জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সম্পর্কে ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মােজাফফর আহমদের সুপারিশ সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হয়েছে। তিনি আরাে বলেন যে, গত বছরের সাধারণ নির্বাচন বিশ্বের সম্মুখে এক নয়া নজির স্থাপন করেছে। তার মতে জনগণ আওয়ামী লীগকে জাতীয় সরকার গঠন করতে তাদের রায় দিয়েছে। জনগণ শুধু ৬-দফাকে ভােট দেয়নি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণ আওয়ামী লীগকে ধর্ম-নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের রায় দেয়। মুক্তিবাহিনীর অস্ত্র প্রসঙ্গে এবং মুক্তিবাহিনীকে নিরস্ত্র করা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, একটি দখলদার বাহিনীকে খতম করে দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা অস্ত্র ধারণ করেছেন তারা কোন অবস্থায় সাধারণ মানুষ নন, বরং বিশেষ ধরনের মানুষ। তিনি বলেন, কখন অস্ত্রধারণ করতে হয় এবং কখন গঠনমূলক কাজে হাত দিতে হয় তা তাদের ভালভাবে জানা আছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, সরকার তাদের নিরস্ত্র করার কথা বলে নাই, তবে যারা নিয়মিত বাহিনীর লোেক নন তাদের জাতীয় মিলিশিয়া করা ও জাতীয় পুনর্গঠন কাজে ব্যবহার করা হবে।

স্বাধীনতার পূর্বে গঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, কমিটির কাজ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ মন্ত্রিসভা ও কমিটির মধ্যে মতপার্থক্যের কোন কারণ নেই। সকল সদস্য এখানে এসে উপস্থিত হলে কমিটির এক বৈঠক খুব শীগগির ডাকা হবে বলে তিনি জানান। শাসনতন্ত্রে গণ-মানসের প্রতিফলন থাকবে : স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ঘােষণা করেছেন, দেশে খুব শীগগিরই একটি শাসনতন্ত্র দেওয়া হবে। ভবিষ্যৎ এই শাসনতন্ত্রে জনগণের আশা-আকাংখা প্রতিফলিত হবে। কারণ মানুষ মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে নিয়ে সংগ্রাম করেছে। তাদের সে সংগ্রাম ব্যর্থ হবে না। শাসনতন্ত্র একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অপরিহার্য দলিল। যতদিন পর্যন্ত এই মহান দলিলটি প্রস্তুত করা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বর্তমানে প্রচলিত আইনাবলীর যেগুলি নতুন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের আদর্শের পরিপন্থী নয় সেগুলি যথাযথ প্রযােজ্য হবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!