You dont have javascript enabled! Please enable it!

মার্চ ১৬, ১৯৭১ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

অধিকতর ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে : পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন গতকাল সােমবার সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃংখল সগ্রাম নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অহিংস ও অসহযােগ আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছেন জনগণ তার প্রতি অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন। ফলে সরকারের সকল শাখাসহ সকল স্তরের মানুষ গণ-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের নামে আমরা যে সব নির্দেশাবলী জারি করেছি। সেগুলাে মেনে চলার জন্য জনগণ তাদের সর্বশক্তি নিয়ােগ করেছেন। যে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে প্লাবিত করে দিয়েছে তা আবার গণঅধিকার কায়েম করার প্রশ্নে জনগণের মধ্যে সার্বিক ত্যাগের প্রেরণা সৃষ্টি করেছে। এই প্রেরণা সৃষ্টিতে প্রত্যেক ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করার জন্য সঠিকভাবে প্রবাহিত করতে হবে। আমরা অবশ্যই প্রমাণ করবাে যে, সমাজের মৌলিক প্রয়ােজন মেটানাের জন্য জাগ্রত মানুষ চরম প্রতিবন্ধকতাও কাটিয়ে উঠতে পারে। আমি প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানাই এবং মাঠে ও কারখানায় তাদের উৎপাদনের কাজে নিয়ােজিত থাকার আহ্বান জানাই যাতে করে এ নিশ্চয়তা বিধান করা যায় যে, আমাদের অর্থনৈতিক জীবন বিচ্ছিন্ন হয়নি এবং জীবনযাত্রা নির্বাহের মৌলিক প্রয়ােজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। সাথে সাথে জনগণকে কষ্ট ও আত্মত্যাগের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। কেননা এ সংগ্রাম দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়ার প্রয়ােজন হতে পারে। ১৯৭১ সালের ১৪ মার্চ যে সব নির্দেশ জারি করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত ব্যাখ্যাগুলাে দেয়া হল ।

ক) জারিকৃত নির্দেশ কার্যকরি করার জন্য সরবরাহ ও পরিদর্শন ডিরেক্টরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিভিন্ন দ্রব্যাদি যেমন সিমেন্ট, গ্যানি বস্তা, রিলিফ দ্রব্য ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য কাজ করে যাবেন। (খ) জারিকৃত নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রয়ােজনীয় আবগারি ও শুল্ক বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থার কর্মচারিবৃন্দ তাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে তাদের কাজের রিপাের্ট পেশ করবেন। বিশেষ নির্দেশের ব্যাখ্যা ঃ ৪নং নির্দেশ ঃ যে সমস্ত বৈদেশিক রাষ্ট্রের সাথে লেটার অব ক্রেডিট খােলা। হয়েছে তাদের সাথে রফতানি বাণিজ্য চলতে পারবে। তবে ২৫নং নির্দেশের ‘এন’ ক্লোজ অনুসারে রফতানি বিলের অর্থ সংগ্রহ করা হবে। ৫নং নির্দেশ ? বিমান ও বিদেশী ডাকযােগে আমদানি ছাড়ানাে যাবে। শুল্ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট অফিস এবং অন্যান্য প্রয়ােজনীয় সংস্থা এ । জন্য খােলা থাকবে। ১৬নং নির্দেশ আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য খালাস করার জায়গা না থাকলে ভােলা জেটির উপরই খালাস করা হবে। ১৯নং নির্দেশ ঃ সড়ক যােগাযােগ সংরক্ষণ কাজ অব্যাহত থাকতে পারে। ২০নং নির্দেশ : ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় বিলিঙ্গ ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় রিলিফ দ্রব্যাদি আনা-নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। ২৫নং নির্দেশ ঃ ব্যাঙ্কসমূহ বাংলাদেশের পার্টিগুলাের প্রয়ােজনে বাংলাদেশের।

মধ্যে কার্যকরি ব্যাংক গ্যারান্টি ও ইনডেমনিটি বন্ড ইস্যু করতে পারবে। ৩১নং নির্দেশ ? প্রাদেশিক ট্যাক্সসমূহ পূর্বের মত দিতে হবে। কাস্টমস ও আবগারি শুল্ক এবং সেলস ট্যাক্সসহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন । পরােক্ষ ট্যাক্স আদায়ের বেলায় নিম্নলিখিত নিয়ম মানতে হবে। (ক) কাষ্টমস এবং আবগারি অথবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক । নির্ধারিত শুল্ক বা কর ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনের বিশেষ এ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। উপরােক্ত কাজের প্রয়ােজনে কাস্টমস এবং আবগারি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সেকশন এবং অন্যান্য এজেন্সিগুলাের কাজ চলবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!