মার্চ ৯, ১৯৭১ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
বাংলাদেশের বীর জনতা অভিনন্দিত ও বাঙ্গালিতে বাঙ্গালিতে ভুল বােঝাবুঝি সৃষ্টির অপচেষ্টা। স্টাফ রিপাের্টার। পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, ইতিহাস রচনাকারী বাংলার দুর্জয় বীর জনগণকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। ক্ষমতাসীন চক্র শক্তির দ্বারা বাংলার জনগণের ওপর তাদের খেয়াল চাপিয়ে দেবার জন্য যে হীন অপ-প্রচেষ্টায় নেমেছে বাংলার বীর জনগণ এক অভূতপূর্ব ঐক্য ও সংকল্পে বলীয়ান হয়ে তাদের সেই অপ-প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করে নবতর ইতিহাস রচনা করে চলেছে। শক্তিই যে সব নয়, কজির দ্বারা সব কিছু যে জয় করা যায় না, জোর যার মুলুক তার যে সত্যি নয়, এই কথাটি প্রমাণ করতে বিশ্ববাসীর সম্মুখে জনতার শক্তি দেখানাের জন্য আমরা যখন আহ্বান জানিয়েছিলাম, সকল শ্রেণীর সরকারী কর্মচারিসহ সকল বাঙ্গালি তাতে স্বতঃস্ফূভাবে সাড়া দিয়েছে। সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রেসনােটে যে কথা বলেছেন আমি তার নিন্দা করছি। প্রেসনােটে হতাহতের সংখ্যা যে কেবল একেবারে নগণ্য করে দেখানাে হয়েছে তা নয় বরং কান্ডজ্ঞানহীনের মত বলা হয়েছে যে, নিহতের সংখ্যা ১৭২ এবং আহতের সংখ্যা ৩৫৮। এই হত্যাকান্ড ভীতি ও নিন্দা প্রকাশের পক্ষে যথেষ্ট নয়। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক গুলি চালানাের ফলে কেবলমাত্র বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেই যে অপরিমেয় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে তা নয় বরং সর্বত্রই শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষের মধ্যেই তা ব্যাপক ক্ষোভের উদ্রেক করেছে। কেবলমাত্র লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযােগের ক্ষেত্রেই গুলি চালানাে হয়েছে বলে প্রেসনােটে যে কথা বলা হয়েছে তা জানা ঘটনাসমূহের বা প্রকৃত ঘটনাসমূহের সম্পূর্ণ বিপরীত।
স্বাধিকারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে যারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল তাদের মিছিলের উপর গুলি চালানাে হয়েছে। প্রেসনােটে আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজের জন্য পুলিশ যথেষ্ট ছিল না বলে যে যুক্তি দেখানাে হয়েছে তা যে কতখানি মিথ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কর্তৃক আইন ও শৃঙ্খলা এবং শান্তি রক্ষার মাধ্যমে। এ ছাড়া আজ মহররমের মিছিলে আওয়ামী লীগের সুশৃঙ্খল স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালনের যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, জনগণকে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কিভাবে নিয়ােজিত করতে হয়। পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীই গুলি চালিয়েছে বলে প্রেসনােটে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যে কথা বলা হয়েছে আমি তার তীব্র নিন্দা করছি। বাঙ্গালির বিরুদ্ধে বাঙ্গালিকে লেলিয়ে দেবার জন্য এবং বাঙ্গালিদের মধ্যে ভুল বােঝাবুঝির সৃষ্টির জন্যই গুলি। চালনার আহ্বান পুলিশ ও ইপিআর-এর ঘাড়ে চাপানাে হয়েছে। বাঙ্গালিরা আজ সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ ও একক শক্তিতে বলীয়ান হয়েছে এবং এ ধরনের ভুল বােঝাবুঝি ও সন্দেহ সৃষ্টির কোন প্রচেষ্টাই আজ আর সফল হবে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য যে, পুলিশ যে সব এলাকার শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সে সব এলাকার কোথাও একটি গুলি হয়নি। এ ক্ষেত্রে আমি এ কথা উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়ােজন বলে আমি মনে করি যে, জওয়ানদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ঘােষণা করার পরও এখনও বিভিন্ন এলাকায় তাহাদিগকে দেখা যাচ্ছে। অবিলম্বে সকল সৈন্যকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আবারাে দাবি জানাচ্ছি। আমরা আনন্দের সংগে ঘােষণা করছি যে, গত ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্সে শেখ মুজিবুর রহমান যে কর্মসূচি ঘােষণা করেছেন সকল শ্রেণীর মানুষ তা সক্রিয়ভাবে কার্যকরি করেছেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি