You dont have javascript enabled! Please enable it! 1970.12.21 | দৈনিক ইত্তেফাক-৬-দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র রচনার যে কোন বিপ্ন দেশে বিপর্যয় ডাকিয়া আনিবে - সংগ্রামের নোটবুক

ডিসেম্বর ২১, ১৯৭০ সােমবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক

৬-দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র রচনার যে কোন বিপ্ন দেশে বিপর্যয় ডাকিয়া আনিবেঃ ঘােড়াশাল, ২০ ডিসেম্বর। পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঞ্চিত মানুষের সুস্পষ্ট রায় বানচালের চক্রান্তের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করিয়া বলিয়াছেন যে, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয় বানচালের দুরভিসন্ধির ন্যায় এইবার ৬-দফার প্রশ্নে বাংলার আপামর জনসাধারণের রায়কে বানচাল করার কোন অপচেষ্টা করা হইলে উহা আগুন লইয়া খেলার শামিল হইবে। আওয়ামী লীগ সম্পাদক দৃঢ়প্রত্যয় কণ্ঠে ঘােষণা করেন যে, বাংলার দুঃখী মানুষের বক এইবার বানচাল করার কোন চক্রান্ত করা হইলে যে কোন মূল্যে উহার মােকাবিলা করা হইবে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল বিকালে স্থানীয় ঘােড়শাল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে আয়ােজিত এক বিশাল জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতেছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযােগ্য যে, জাতীয় পরিষদের কালীগঞ্জ-কাপাসিয়া আসনের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনাব তাজউদ্দিন আহমদের ইহাই। প্রথম জনসভা। আওয়ামী লীগ সম্পাদক তাহার নির্বাচননাত্তর ভাষণে যাহাদের ত্যাগে দেশে জনগণের ভােটাধিকার অর্জিত এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে দেশে  প্রথম সাধারণ নির্বাচনের অনুষ্ঠানের সুযােগ অর্জিত হইয়াছে সেই অগণিত শহীদানের নাম গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করেন।

তিনি গণতন্ত্রের আমরণ সৈনিক | দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হােসেনের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং বাংলার অবহেলিত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আপােসহীন সংগ্রামের কথাও গভীর শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করিয়া বলেন, মানিক মিয়ার ক্ষুরধার লেখনীতে যখন বাংলার আনাচে কানাচে অধিকার পাগল মানুষ অনুপ্রাণিত হইয়া জাগিয়া উঠিয়াছে এবং শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ যখন মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়া পাইতে যাইতেছে, মানিক ভাইয়ের প্রিয় বাংলার আপামর মানুষের এই মহাবিজয়ের দিনে তিনি আজ বাচিয়া নাই। তিনি আরও বলেন, তাহার স্বপ্ন বাংলার মানুষের এই প্রাথমিক বিজয় আজ স্বচক্ষে দেখিবার জন্য তিনি বাঁচিয়া না থাকিলেও বাংলার আত্ম-সচেতন মানুষের এই। অগ্রযাত্রায় তাহার বিদেহী আত্মা কবরে থাকিয়াও শান্তি লাভ করিবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি