নভেম্বর ১০, ১৯৭০ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হইলে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তাহা প্রতিহত করা হইবেঃ কাপাসিয়া (ঢাকা), ৮ নভেম্বর। কাপাসিয়া থানার কপালেশ্বর হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, বিগত ২৩ বছরে শাসনের নামে একশ্রেণীর পশ্চিমা শােষক পূর্ব-বাংলাকে সর্বস্বান্ত করিয়া দিয়াছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের গত ২৩ বছরের ইতিহাস ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের ইতিহাস। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা বাঁচার স্বপ্ন দেখিতেছে। কায়েমী স্বার্থবাদীরা যদি নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তবে আওয়ামী লীগ দুর্বার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করিবে। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, গরীব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মােচনের জন্য, বিশেষ করিয়া পূর্ণ। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন আদায়ের জন্য ৬-দফা পেশ করিয়া তা আদায়ের জন্য আমরা সংগ্রাম করিয়া যাইতেছি। শত জেল-জুলুম ও আগরতলার মত মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ন্যায়ের জন্য বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করিয়াছি।
জনাব তাজউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলার মাটিকে, বাংলার মানুষকে ভালবাসে; তাই বাংলার স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও তার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপােসহীন সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়িয়াছে। সে জন্যই বাংলার ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ বিনাদ্বিধায় আপন বুকের রক্ত ঢালিয়া দিয়া আমাদেরকে কারাগার হইতে মুক্ত করিয়া আনিয়াছে। প্রয়ােজনে আমরাও আমাদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশের মানুষের দাবি আদায় করিবই । জনাব তাজউদ্দিন বলেন, বহু রক্তের বিনিময়ে ভােটাধিকার আসিয়াছে; তাই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভােট দিয়া মীরজাফরদের বাংলার মাটি হইতে চিরদিনের জন্য উৎখাত করিতে হইবে। তিনি বলেন, আজ একশ্রেণীর ভাড়াটিয়া আলেম, যারা সত্যিকার আলেম সমাজের কলঙ্ক, তারা বাংলার নিপীড়িত জনসাধারণের দাবির বিরুদ্ধে ফতােয়া দেওয়া শুরু করিয়াছেন। তিনি লবণ, তামাক, সুপারি কেরােসিন ও সারের উপর ট্যাক্স ধরার তীব্র নিন্দা করেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি