নভেম্বর ৩, ১৯৭০ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
আসন্ন নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হইবেঃ কালীগঞ্জ (ঢাকা), ১ নভেম্বর। পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় পূবালী জুট মিল এলাকায় এক বিরাট শ্রমিক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আসন্ন নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হইবে। বাংলার গণ-মানুষ ৬দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন ও ১১-দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র চায় কিনা, এ নির্বাচন তারই এক মহা-পরীক্ষা। আওয়ামী লীগ সম্পাদক বিগত আন্দোলনগুলিতে এ দেশে শ্রমিক শ্রেণীর বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিয়া বলেন, শ্রমিক শ্রেণী বিগত প্রতিটি গণআন্দোলনের উৎস ছিল। তিনি অবিলম্বে শ্রমিকদের ৫-দফা দাবি মানিয়া নেওয়ার জন্য সরকার এবং মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ শ্রমিকদের দুঃখজনক অবস্থার কাহিনী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। তিনি অভিযােগ করেন যে, যখনই শ্রমিক সমাজ তাদের উপর অন্যায় অত্যাচারের প্রতিকার দাবি করিয়াছে, তখনই তাদেরকে গ্রেফতার করা হইয়াছে এবং বিনা নােটিশে ছাঁটাই করা হইতেছে। তিনি সকল নির্যাতনমূলক শ্রম আইন বাতিল করার আহ্বান জানান এবং শ্রমিকদের উপর আরােপিত সকল গ্রেফতারি পরােয়ানা, হুলিয়া এবং দন্ডাদেশ প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
তিনি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য শ্রমিকসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করিয়া তিনি সরকার এবং দেশের সকল জনসাধারণের প্রতি গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান। এবং আসন্ন নির্বাচনে সকল গণ-বিরােধী শক্তিসমূহকে বাংলার রাজনীতি হইতে চিরদিনের মত উৎখাত করিয়া জনগণের বিজয় পতাকা উড়ানাের জন্য আওয়ামী লীগ মনােনীত প্রার্থীদের ভােট দিয়া জয়যুক্ত করার জন্য জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। গাড়াতলীতে জনসভা গত ৩০ অক্টোবর রায়পুরা থানার অধীনে গাড়াতলী হাইস্কুল ময়দানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ঘােষণা করেন, আওয়ামী লীগ ৬-দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে। ৬-দফার বিশ্লেষণ করিয়া তিনি বলেন, ৬-দফা ও ১১-দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমেই বিভিন্ন অঞ্চলের বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের পথ সুগম হইবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভােটদানের মাধ্যমে কায়েমী স্বার্থবাদীদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া দিয়া শশাষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। এক শ্রেণীর রাজনৈতিক দল ঐক্য ঐক্য করিয়া চিল্কার করিতেছেন, তাহারা যে নীতির ভিত্তিতে ঐক্যের কথা বলিতেছেন সেই নীতি বা সেই ১১-দফা তাহাদের মেনিফেস্টো ও কাউন্সিল সভার প্রস্তাবেও স্থান পায় নাই। এমনকি তাহাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও ১১-দফার সমালােচনা করিয়াছেন এবং ইহা সমর্থন না করিয়া বিরােধিতা করিয়াছেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি