অক্টোবর ২, ১৯৭০ শুক্রবার ও দৈনিক ইত্তেফাক
নির্বাচন বানচাল করা হইলে তীব্র গণ-আন্দোলনের সৃষ্টি হইবে ঃ গত বুধবার রাত্র ৯টায় পাটুয়াটুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইসলামপুর রােডের উপর এক বিরাট কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে বক্তৃতা করেন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, আওয়ামী লীগ সংগ্রামের ভিতর দিয়াই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এবং এই প্রতিষ্ঠানের জন্মের পর হইতেই জনগণের সামগ্রিক স্বার্থকে সম্মুখে রাখিয়া কুচক্রীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হইয়াছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে দেখা যায় যে, গত ২৩ বৎসর ধরিয়া জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করিতে যাইয়া আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা ও কর্মীকে জেল-জুলুমের সম্মুখীন হইতে হইয়াছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মন্ত্রীত্ব বা ক্ষমতা লাভের জন্য রাজনীতি করে না, যদি ক্ষমতার রাজনীতি করিত তাহা হইলে জেল-জুলুম হইতে অব্যাহতি পাইয়া অনেক আগেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগের পদতলে লুটাইয়া পড়িত। কিন্তু আওয়ামী লীগ নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী, তাই মন্ত্রীত্ব বা ক্ষমতার লােভ কোনদিন না করিয়া আওয়ামী লীগ নির্যাতনকেই সঙ্গি হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চায় ৬-দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র রচনা করিয়া পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটাইতে।
নির্বাচন বানচাল করিবার জন্য একদল কুচক্রী যাহাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক সরকারী কর্মচারিও রহিয়াছেন তাহারা চান দেশে যেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয়। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যে, তাহারা যেন অবিলম্বে এই নির্বাচন বিরােধী গােষ্ঠী সম্পর্কে সতর্ক থাকেন। তিনি পুনরায় বলেন, জনগণ নির্বাচন বানচাল করার কোন ষড়যন্ত্র সহ্য করিবে না। যদি কোন কারণে নির্বাচন বানচাল হইয়া যায়, তাহা হইলে দেশে এমন এক দুর্বার গণ-আন্দোলন আরম্ভ হইবে, যাহা কোন সরকারের পক্ষেই ঠেকাইয়া রাখা সম্ভব হইবে না। পরে জনগণই ৬-দফা দাবি কায়েম করিবে। জনাব তাজউদ্দিন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক শ্রমিক ও ছাত্র বন্দিদের মুক্তির দাবি জানান।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি