You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেপ্টেম্বর ২, ১৯৭০ বুধবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক

যে কোন মুখােশই ধারণ করুন না কেন জনগণ আপনাদের চিনে ঃ বরমি বাজার (ঢাকা), ৩১ আগস্ট। পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দানকালে নির্বাচনী বিরােধী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং ঘােষণা করেন যে, বাংলার গণতন্ত্রকামী মানুষ যে কোন ত্যাগের মূল্যে তাহাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া দিবে। নির্বাচন-বিরােধী চক্রান্তকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি তেজোদৃপ্ত কণ্ঠে আরও ঘােষণা করেন যে, ভােট ছাড়াই বাংলার আপামর জনসাধারণ যে পন্থায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে এবং স্বৈরাচারী আইয়ুব-মােনেম সরকারের পতন ঘটাইয়া জনগণের ভােটের অধিকার ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব-বাংলার প্রতিনিধিত্বের দাবি আদায় করিয়াছে, সেইভাবেই তাহারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিও প্রতিষ্ঠা করিবে। আওয়ামী লীগ নেতা জনাব তাজউদ্দিন আহমদ তাহার ভাষণে নির্বাচন বিরােধী চক্রান্তকারীদের স্বরূপ এবং তাহাদের নির্বাচন ভীতির কারণ জনসাধারণের নিকট ব্যাখ্যা করিয়া বলেন যে, ইহাদের পায়ের তলা হইতে মাটি সরিয়া গিয়াছে। তাই ইহারা জনগণের উপর আস্থা স্থাপন করিতে পারিতেছে না।

ইহারা একশ্রেণীর আমলার সাথে হাত মিলাইয়া নির্বাচন বানচালের চক্রান্তে লিপ্ত রহিয়াছে বলিয়া তিনি অভিযােগ করেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ নির্বাচন বিরােধী, চক্রান্তকারী এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতার অতীত কুকর্মের ইতিহাস জনসাধারণের নিকট এক এক করিয়া তুলিয়া ধরেন। তিনি এই প্রসঙ্গে সাবেক মুসলিম লীগ নেতা বর্তমান পিডিপি নেতা জনাব নূরুল আমিন সরকারের দমন ও নির্যাতনমূলক কার্যকলাপের বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যাহাদের আমলে উপ-নির্বাচন ঠেকাইয়া রাখা হইয়াছিল, হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ছাত্রদের নির্বিচারে কারাগারে নিক্ষেপ করা হইয়াছিল এবং ভাষা আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ করা হইয়াছিল তাহারাই আজ গণতন্ত্রের মুখােশ পড়িয়া ময়দানে নামিয়াছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আচকান-পাঞ্জাবি সর্বস্ব কতিপয় রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে গঠিত ইসলামপছন্দ’ ফ্রন্টের সমালােচনা প্রসঙ্গে বলেন, ইহারা যত বােরখার আবরণেই নিজদিগকে ঢাকিতে চায় না কেন, বাংলাদেশের জনসাধারণ তাহাদের আসল চেহারা চিনিয়া ফেলিয়াছে। তিনি আরও বলেন, তাহারা যদি সত্যিকারভাবেই ইসলামিক শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী হইয়া থাকে, তবে তাহারা নিজেদের দলীয় অস্থিত্ব বজায় রাখিয়া ঐক্য ফ্রন্ট করেন কেন ? তিনি বলেন, আল্লাহর ধর্ম এক, ইসলাম এক, এই এক ইসলামের নামে, একই ধর্মের নামে নিজেদের দলীয় অস্থিত্ব বিলুপ্ত করিয়া একই দলভূক্ত হইতে চায় না কেন ? তিনি ধর্মের নামে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ভাওতা না দেওয়ার জন্য তাহাদের প্রতি আহ্বান জানান।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!