আগস্ট ১২, ১৯৭০ বুধবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
আওয়ামী লীগ শোষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে ঃ শিবপুর (ঢাকা), ১১ আগস্ট। গতকাল বিকেলে শিবপুর হাইস্কুল প্রাঙ্গণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দান প্রসঙ্গে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, আওয়ামী লীগ শােষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইবেসে শােষক যেখানকার অধিবাসীই হােক না কেন। বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, পশ্চিম-পাকিস্তানে পর পর তিনটি রাজধানী ও বড় বড় বাঁধ নির্মাণের জন্য টাকার অভাব হয় না; অথচ পূর্বপাকিস্তানের প্রলয়ংকারী বন্যা সমস্যা সমাধানের জন্য টাকার অভাব হয়। তিনি পূর্ব-পাকিস্তানের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বে প্রদেশের বন্যা নিরােধ পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। জনাব তাজউদ্দিন সকল সরকারী চাকুরিতে পূর্ব-পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ ভাগ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। তিনি সামরিক বাহিনীতেও এই প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। তিনি পূর্ব-পাকিস্তানের গরীব কৃষকদের দুরবস্থার করুণ চিত্র তুলিয়া ধরিয়া বলেন যে, পাট চাষ করিয়া চাষিরা মণপ্রতি ৩০ টাকা দামও পায় না। অথচ পাট ব্যবসায়ীরা মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা মুনাফা অর্জন করিয়া থাকে। তিনি পাট চাষিদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। পূর্বাহ্নে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ও অন্যান্য নেতা ট্রেনযােগে নরসিংদী পৌছিলে সেখানে তাহাদিগকে বিপুল অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হয়।
শিবপুরে জনাব তাজউদ্দিন বিগত গণ আন্দোলনের বীর শহীদ আসাদুজ্জামানের মাজার জিয়ারত করেন এবং আসাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পলাশে জনসভা গত ৯ আগস্ট পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগ আহুত প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষে পলাশ কো-অপারেটিভ জুট মিলস খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দান প্রসঙ্গে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ চট্টগ্রামের এম. এ. আজিজ সহ সকল রাজনীতিক, ছাত্র ও শ্রমিক বন্দির মুক্তি দাবি করেন।
তিনি বলেন যে, দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থেই সকল রাজনৈতিক ধরনের মামলা ও গ্রেফতারী পরােয়ানা প্রত্যাহার করা উচিত। তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছভাবে সামরিক বিধি প্রয়ােগের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব-পাকিস্তানের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় কম হওয়ায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, পূর্ব-পাকিস্তানে নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় কম হওয়ার কোন যুক্তি থাকিতে পারে না। তিনি তাঁতীদের সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি