You dont have javascript enabled! Please enable it!

মে ১৪, ১৯৭০ বৃহস্পতিবার : দৈনিক ইত্তেফাক

শোষণের অবসান না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে : পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গত মঙ্গলবার ঢাকা জেলার শ্রীপুর থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মাওনা হাইস্কুল মাঠে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, যতদিন এ দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হইবে, যতদিন গরীবের মুখে হাসি না ফুটিবে এবং যতদিন পর্যন্ত শােষণের অবসান না ঘটিবে ততদিন আওয়ামী লীগ সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বিগত ২৩ বৎসরের শােষণের করুণ চিত্র তুলিয়া ধরিয়া বলেন যে, এই সময় বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করিয়া তাহা পশ্চিম পাকিস্তানের ২২টি পরিবারের হাতে তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। তিনি বলেন যে, যে বাংলাদেশ এককালে ছিল খাদ্যে উদ্বৃত্ত্ব, আজ সেই বাংলাদেশকে আমদানিকৃত খাদ্যের উপর নির্ভর করিতে হয়। অথচ এককালের ঘাটতি পশ্চিম-পাকিস্তানে আজ বৎসরে ৬ লক্ষ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত হয়।

তিনি বলেন, বাংলার সম্পদ যদি পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের জন্য নেওয়া হইত তা হইলে বাঙ্গালিদের মনে এত দুঃখ থাকিত না। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ তথাকথিত ইসলাম দরদীদের সমালােচনা করিয়া বলেন যে, বাংলার স্বায়ত্তশাসন আর ৬-দফার বিরুদ্ধে ফতােয়া দেওয়া হয় অথচ বাংলায় বন্যা সমস্যার সমাধান না করিয়া যখন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পশ্চিমপাকিস্তানে পর পর তিনটি রাজধানী গড়া হয়, তখন এই বে-ইনসাফীর বিরুদ্ধে কোন ফতােয়া দেওয়া হয় না। তিনি প্রশ্ন করেন ইহাই কি ইসলাম ? জনাব তাজউদ্দিন বলেন যে, এককালে যাহারা পাকিস্তান বিরােধী ছিল আজ নির্বাচনের প্রাক্কালে তাহারাই ধর্মের নামে ধোকা দিতে চেষ্টা করিতেছে। তিনি ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানান। জনাব তাজউদ্দিন আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করিয়া বলেন যে, স্বায়ত্তশাসন ও গরীবের অধিকার আদায় এবং গণ-দুষমনদের বিতাড়ণই এই নির্বাচনের লক্ষ্য।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!