You dont have javascript enabled! Please enable it!

মে ৭, ১৯৭০ বৃহস্পতিবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক

সম্পদ পাচারের পথ খােলা থাকিলে প্রদেশের কাহারও বাঁচার উপায় থাকিবে নাঃ নারায়ণগঞ্জ, ৫ মে। অর্থনৈতিক শােষণ ও বৈষম্যের অবসান, রাজনৈতিক ও মানবিক অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসনসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকল্পে আওয়ামী লীগের জন্মের শুরু হইতেই এই প্রতিষ্ঠান অসহনীয় জুলুম সহ্য করিয়া আসিয়াছে। এ দেশের কোটি কোটি হৃতসর্বস্ব মানুষের পাশে দাঁড়াইয়া তাহাদের বাঁচার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে বাংলার নয়নমণি শেখ মুজিবকে দুনিয়ার বুক হইতে সরাইয়া দেওয়ার জন্যও ষড়যন্ত্র করা হইয়াছিল। কিন্তু দেশ্নে অগণিত কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও যুব সমাজের দুর্জয় সংগ্রাম ও চরম আত্মত্যাগের মুখে কায়েমী স্বার্থবাদীদের সকল চক্রান্ত আজ বানচাল হইলেও উহারা এখন শেষ ও সর্বাত্মক মরণ কামড় হিসাবে ধর্ম, অতি প্রগতিবাদ ও তথাকথিত সংহতির নামে জনগণের শিবিরে বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির কাজ শুরু করিয়াছে। পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আজ আদমজী নগরে সিদ্দিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ অফিস উদ্বোধনকালে সমবেত বিশ সহস্রাধিক লােকের এক সমাবেশে উপরােক্ত মন্তব্য করেন। জনাব তাজউদ্দিন দেশবাসীকে বিশেষতঃ অধিকার সচেতন শ্রমিক সমাজকে ৬দফা দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে বৃহত্তর সংগ্রামের জন্য আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগ নেতা আদমজী নগর এলাকায় অনুষ্ঠিত বিগত ১ মে তারিখের দুঃখজনক ঘটনার জন্য দায়ী কিছুসংখ্যক অস্থির মস্তিষ্ক ও অবাঞ্ছিত ব্যক্তির কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করিয়া বলেন যে, কায়েমী স্বার্থবাদীরাই সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আয়ােজন করিয়া নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ৬-দফা সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাইতে পারে। তিনি সর্বপ্রকার উস্কানি সত্ত্বেও সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়া গণঐক্যে ফাটল ধরাইবার সর্বপ্রকার কৌশলকে ব্যর্থ করিয়া দিয়া বঞ্চিত গণ-মানুষের আসল লক্ষ্য ৬-দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে দুর্বার করার উদাত্ত আহ্বান জানান। সন্ধ্যার পর স্থানীয় করিম মার্কেটে আদমজী নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব সফি সরদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অপর একটি বিরাট শ্রমিক সভায় ভাষণ দানকালে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ দেশের নি:স্ব-শােষিত-বঞ্চিত জনসাধারণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর সংগ্রামে ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত সকল মতভেদের উর্ধ্বে থাকিয়া একটি ঐক্যবদ্ধ আপােসহীন সংগ্রামী ভূমিকা গ্রহণের জন্য শ্রমিক সমাজের প্রতি আবেদন জানান। তিনি বলেন, এ দেশের স্বায়ত্তশাসন, মানবিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের লড়াইকে দুর্বল করার কাজে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সকল কায়েমী স্বার্থবাদী ও মীরজাফররা একজোট হইয়া আজ মাঠে নামিয়াছে। তাহাদের উদ্দেশ্য সফল হইলে পূর্ব-পাকিস্তানের কোন ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠানই শ্রমিক সাধারণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করিতে সক্ষম হইবে না। কারণ দেশের সম্পদ পাচারের পথ খােলা থাকিলে প্রদেশে কাহারও বাঁচার উপায় থাকিবে না। এমতঃবস্থায় দেশের সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মহান সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সদস্য, সমর্থক, অনুরাগী ও দেশপ্রেমিক সকল ব্যক্তিকে অবশ্যই সুদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!