জানুযারি ৬, ১৯৭০ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
শােষিত মানুষের বিজয়ের সম্ভাবনায় নসরুল্লাহ প্রমাদ গণিতেছেন ? নিজস্ব সংবাদদাতা। নারায়ণগঞ্জ, ৪ জানুয়ারি। গত রবিবার সিদ্দিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন কাফন চোরের গল্পের অবতারণা করিয়া বলেন, বিগত ডিকেডী আমলের চরম কুশাসনের সময় যাহারা বিরাট সম্ভাবনাময় এ দেশকে শ্মশানে পরিণত করিয়া দেশের সমগ্র সম্পদ মাত্র গুটিকতক ভাগ্যবান পরিবারের হাতে তুলিয়া দিয়া নিজেদের জন্যও সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করেন, গত গণ-আন্দোলনের জোয়ারের মুখে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত সেই মুখচেনা মহলটি জনগণের মুক্তির ইঙ্গিত দেখিতে পাইয়া উহা নস্যাৎ করার জন্য আবার মাঠে নামার পাঁয়তারা করিতেছেন। তিনি জনসাধারণকে তাহাদের সম্পর্কে হুশিয়ার করিয়া বলেন, শহীদ শামসুজ্জোহা, মনু মিয়া, আসাদ, মাজহার, মতিউর প্রমুখ। অগণিত শহীদের রক্তে রাঙা এই বাংলা এবার অবশ্যই ঐসব কুচক্রীর কবর রচনা করিবে। আওয়ামী লীগ সম্পাদক অতঃপর বলেন, বিগত ২২ বৎসর ঐ সকল লোেক ও তাহাদের বিভিন্ন বর্ণের দালালরাই পাকিস্তানের দুই অংশের মতভেদ দুরতিক্রম্য করিয়া তুলিয়াছেন।
একমাত্র ৬-দফার বাস্তবায়নই সেই মতভেদ ঘুচাইয়া দিয়া এ দেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধিশালী এবং জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করিতে পারে। পি.ডি.পি. নেতা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানের সাম্প্রতিক কতিপয় বেসামাল উক্তির তীব্র সমালােচনা করিয়া তিনি বলেন যে, পূর্ব ও পশ্চিম-পাকিস্তানের অগণিত শশাষিত জনসাধারণের স্বপ্ন-সাধ অর্জিত হইতে যাইতেছে, এই সম্ভাবনায় নওয়াবজাদা প্রমাদ গণিতেছেন ও তাহার ধৃষ্টতা আজ শালীনতার সকল সীমা লংঘন করিয়া গিয়াছে। সামরিক শাসকদের প্রশ্রয়ে শেখ মুজিবের সাহস বাড়িয়া গিয়াছে বলিয়া নওয়াবজাদা যে উক্তি করিয়াছেন, উহার জবাবে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, সামরিক শাসকরা নয় বরং আল্লাহই শেখ সাহেবকে দুর্জয় সাহসের প্রতীক করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। তাহার অল্পবয়স হইতেই দেশবাসী সেই সাহসের ভুরি ভুরি প্রমাণ পাইয়াছে।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি