You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোয়েন্দা বিভাগ আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে সরিয়ে নেবার ফলে কী সমস্যা দেখা দেয়? বিকল্প কী?

যেহেতু আর্মি হেডকোয়ার্টারে আমাদের DFI এর কার্যালয়, তাই নতুন TO&E (Training Operation & Execution) পরিকল্পনায় MI Dte এর কাজ বৃদ্ধি করা হয়নি। সরকারের এপ্রুভালের জন্য আমরা আর্মির অর্গানোগ্রামটা ডিভিশনভিত্তিক করেছিলাম। কিন্তু যখন DFI কার্যালয় আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে সরিয়ে নেয়া হয় তখন আমরা অন্ধ ও বধির হয়ে গেলাম। তাই এই স্বল্পতা কাটাতে আমি MI Dte এর অপারেশন বাড়াতে চেষ্টা করলাম। সেভাবে একটি অর্গানোগ্রাম করে ডিফেন্স মিনিস্ট্রিতে পাঠালাম। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই এপ্রুভাল পেতে দেরী হচ্ছিলো। কিন্তু সরকারের এপ্রুভাল ছাড়া আমি আগাতে পারছিলাম না এবং MI Dte কে পুনর্গঠন করতে পারছিলাম না। এমনকি আমার জোরালো প্রস্তাবনার পরেও সেটি পাশ হচ্ছিলোনা। ফলে পরিস্থিতির মোকাবিলায় আমি আশা করছিলাম অন্তত MI Dte এর অংশটুকু যেন এপ্রুড হয়। এই আশায় আমি ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার প্রফেসর নুরুল ইসলামের সাথে দেখা করলাম এবং তাকে আমার সমস্যার কথা খুলে বললাম। আমি তাকে NCO থেকে পাওয়া সেই লিফলেটটাও দেখালাম।

প্রফেসর নুরুল ইসলাম ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পেরে অতি সত্বর প্রেসিডেন্টের সাথে একটি এপয়েন্টমেন্ট করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা গণভবনে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে গেলাম। আলোচনার সময় আমি প্রেসিডেন্টকে বললাম আমার কোন ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি নাই যার থেকে আমি আমার ট্রুপ্স সম্পর্কিত কোন তথ্য পেতে পারি। কোন গোয়েন্দা সংস্থা না থাকলে আমার চারপাশে কী ঘটছে সেটা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব না। এই এজেন্সিগুলো আমার চোখ আর কানের মত। এগুলো ছাড়া আমি সম্পূর্ণ অন্ধকারে। যে ঘটনাটা সম্পর্কে আমি রিপোর্ট করতে এসেছিলাম সেটি হঠাত করে আমাদের গোচরে এসেছিলো। এর পেছনে কোন গোয়েন্দাপ্রচেষ্টা নেই। হতে পারে এটা অনেক ছোট কোন পরিকল্পনা; কিন্তু এর পেছনে বড় কিছু থাকতে পারে। এরপর আমি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করলাম, যদি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার কারণে পুরো TO&E এপ্রুভ করতে সময় লাগে তাহলে অন্তত MI Dte এর অংশটুকু যেন এপ্রুভ করে দেয়া হয়। সেই লক্ষ্যে অতি সত্বর কিছু লোক নিতে হবে, তাদের অর্গানাইজ করতে হবে এবং কাজে লাগানোর আগে ট্রেনিং করাতে হবে।

সমস্যার গুরুত্ব বুঝিয়ে আমি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করলাম DFI এর কার্যালয় সাময়িক সময়ের জন্য পুনরায় আর্মি হেড কোয়ার্টারে শিফট করতে যাতে করে সাময়িক সময়ের জন্য আমরা সেই সাপোর্টটা পাই। এবং পাশাপাশি যেন MI Dte এর আংশিক এপ্রুভাল যে দেয়া হয়। এটি যখন একটু দাঁড়িয়ে যাবে তখন DFI এর কার্যালয় পুনরায় বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসা যাবে। কিন্তু আমি অবাক হলাম যে যতোটা গুরুত্বের সাথে আমি বিষয়টা উপস্থাপন করলাম বঙ্গবন্ধুর প্রতিক্রিয়া ছিলো সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি যতোটা আশা করেছিলাম তিনি বিষয়টা ততোটা সিরিয়াসলি নিলেন না। তখন প্রেসিডেন্টকে আমার বলতে হল, “স্যার আপনি যদি আমাকে কার্যকর দেখতে চান তাহলে আমার দৈনন্দিন কাজের জন্য এই ভাইটাল অর্গানগুলো আমার লাগবে। এই মুহুর্তে আমি একেবারেই জানিনা আমার চারপাশে কী ঘটছে।”

আমার কথা শুনে প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন করলেন, “রউফ (ডি জি এফ আই এর ব্রিগেডিয়ার রউফ) কি তোমাকে সে যা কালেক্ট করে তা দেয়না?” উত্তরে আমি বললাম, “স্যার, যদি সে দিত তাহলে তো আমি আপনাকে অফিসটা আর্মি কার্যালয়ে পুনরায় শিফট করতে বলতাম না। আমার বিশ্বাস ডিজি ব্রিগেডিয়ার রউফ ইচ্ছাকৃতভাবেই আমাকে তথ্য দেন না এবং আমাকে অন্ধকারে রাখেন। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, স্যার, আপনাকে আজকে আমি যে কাগজটা দেখালাম সেটার ব্যাপারে তিনি কি আপনাকে অবগত করেছেন? যদি সে করে থাকে তবে সে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে অন্ধকারে রাখছে। একারণেই আমি চিন্তিত স্যার।” যেহেতু প্রেসিডেন্ট কোন মন্তব্য করেননি, তাই আমি বুঝতে পারলাম DGFI প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছে। প্রফেসর নুরুল ইসলাম নিজেও আমার প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করলেন। এবং প্রস্তাব করলেন যে MI Dte আংশিক পাশ করা যেতে পারে। তখন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর নুরুল ইসলামকে বললেন অতিসত্বর বিষয়টা বাছাই করতে।

ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার প্রফেসর নুরুল ইসলাম এই মিটিং এর বিষয়টি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত “দৈনিক আজাদী” পত্রিকায় একটি আর্টিকেলে উল্লেখ করেন ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ। তিনি লেখেন, জেনারেল শফিউল্লাহ ইচ্ছা করে সেই মিটিং এর কিছু তথ্য পত্রিকার কাছে বলেননি। লেখাটা ধাবারাবাহিকভাবে বাংলাবাজার পত্রিকায় ১৫ থেকে ১৯ আগস্ট ১৯৯৪ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় এবং ১৫ থেকে ১৮ আগস্ট ১৯৯৪ পর্যন্ত “ভোরের কাগজ” এ প্রকাশিত হয়। এটা ঠিক যে প্রেসিডেন্টের সাথে যত কথা হয়েছে তার সব আমি পত্রিকার কাছে বলিনি। তবে আমি তাদেরকে আমাদের মিটিং এর সারসংক্ষেপ বলেছি। তাছাড়া, সেসময় পত্রিকার কাছে সব খুলে বলায় কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সফল হত বলেও আমি মনে করিনা। আমি তাদেরকে যেটুকু প্রযোজ্য শুধু সেটুকুই বলেছি। নুরুল ইসলাম নিজেও সেই অংশটুকু বলেননি যা আমি বলিনি বলে তিনি দাবী করেছেন। তিনি বলেছেন এই মিটিং টা ১৫ আগস্ট ‘৭৫ এর দুই তিন দিন আগে হয়েছিলো। এখানেও সম্ভবত তার স্মৃতিভ্রম হয়েছে। কারণ মিটিংতা হয়েছিলো ‘৭৫ এর জুলাইয়ের শুরু দিকে।

পাঠক এই অবস্থায় ভাবতে পারেন যে চিফ এখন কেন আর্মির অর্গানাইজেশন এর সমস্যা সম্পর্কে কথা বলছেন। তিনি নিজেই তো ১৯৭৫ সালে চিফ ছিলেন। এখানে বলা দরকার যে ১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশের কোন আর্মি ছিলোনা। আর এটা পুর্ব থেকে স্টাবলিসড কোন আর্মি নয়। এখন আমরা যা দেখি ১৯৭২ সালে চিত্রটা সেরকম ছিলো না। আজকের সেনাবাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধের ফসল। আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করেছি যারা শুধু অস্ত্রটা ধরতে জানতো। তাছাড়া এই বাহিনীতে হরেক রকম সংগঠন থেকে লোক যুক্ত হয়েছে। যেমন, পাকিস্তান আর্মি, ই পি আর, মুজাহিদ এবং মুক্তিযোদ্ধারা। তাদেরকে একসাথে গড়ে তোলা হয়েছে, যুদ্ধের ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটাকে একটা অর্গানাইজড আর্মি বলা যাবেনা। একটা সময় আসবে যখন এদের সবাইকে একই কমান্ডের অধীনে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই হাত লাগাই এবং একটি TO&E প্রস্তুত করি এবং পাশ করার জন্য সরকারের কাছে সাবমিট করি। এটা তৈরি করতে আমাদের বছরখানেক সময় লেগেছে। এবং এটাই আগের পেইজগুলোতে আমি লিখেছি। DFI এর প্রথম ডিজি ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে AVM) আমিনুল ইসলাম। এরপর তার স্থলে আসেন লে কর্নেল (পরে ব্রিগেডিয়ার) এ রউফ। তিনি পাকিস্তান থেকে রিপ্যাট্রিয়েটেড হয়ে জয়েন করেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি DFI এর প্রধান ছিলেন। তার স্থলে আসেন কর্নেল জামিল আহমেদ যিনি প্রেসিডেন্টের MS (P) ছিলেন। কথা ছিলো ১৫ আগস্ট ‘৭৫ এ ব্রিগেডিয়ার রউফ কর্নেল জামিলের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।

Source: 15th August A National Tragedy Major Gen K M Safiullah BU PSC

Translated by: Dr Razibul Bari

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!