You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
২৫শে জানুয়ারী, ১৯৭৩, বৃহস্পতিবার, ১১ই মাঘ, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ

সম্পর্কের মধ্যে কোন গোপনীয়তা নেই

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী নিয়ে বহুদিন ধরে অনেক ভাল কথা মন্দ কথার অবতারণা হয়েছে। উভয় দেশের বন্ধুত্বকে নিয়ে নানা প্রকার কটাক্ষ বা মন্তব্যও ইতিপূর্বে বহুবার করা হয়েছে। শেষ অবধি তথাকথিত কয়েকটি বিরোধীদল বিশেষ করে ভাসানী ন্যাপ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতারা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে গোপন চুক্তি আবিষ্কার করেছেন। তাদের বক্তব্য বিবৃতিতে বার বার তারা উচ্চারণ করেছেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গোপন চুক্তি রয়েছে। যার দ্বারা দেশের সার্বভৌমত্বের উপর ভারত প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তাদের মতে ভারত বাংলাদেশকে গ্রাস করতে চলেছে। এ ধরনের বক্তব্য বিবৃতিকে মোটেই সহনীয় হিসেবে দেশবাসী মেনে নিতে পারেনি। এর বিরুদ্ধে গোটা দেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গতকালের একটি সংবাদে প্রকাশ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং ঘোষণা করেছেন—ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোন গোপন চুক্তি নেই। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন—বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা হলো—শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তি। এবং এ চুক্তির মধ্যে কোন গোপনীয়তা তো নেইই, বরং প্রকাশ্যভাবে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং মনে করেন, এক ধরনের সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ও বাংলাদেশ-ভারতের শত্রুভাবাপন্ন তথাকথিত প্রগতিশীল নেতারাই এ ধরনের অলীক বক্তব্য রাখছেন। দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাবার জন্যেই এ ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। বস্তুতঃ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর মধ্যে কোনরূপ গোপনীয়তা নেই। দু’দেশের মধ্যে যে মৈত্রীর সম্পর্ক রয়েছে তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট এবং কল্যাণমুখী। অন্যান্য সম্পর্ক রয়েছে ঠিক তদ্রুপ সম্পর্কই রয়েছে ভারতের সঙ্গে। ভারত বাংলাদেশের পরম বন্ধু। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুধু সমর্থকই নয়, এদেশের স্বাধীনতার জন্যে ভারতই এককভাবে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে। সেদিন রাশিয়াও যে সমর্থন দিয়েছিলো তাও এ জাতি কোনদিন ভুলবে না। স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই সকল বহুপরীক্ষিত বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাভাবিক সম্পর্কই রয়েছে তবু এটাকে বিকৃত করে রূপ দেবার প্রচেষ্টা চলছে। সে সব বন্ধুদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুভ হোক এটা তারাই চায়না যারা অকৃতজ্ঞ। তারা প্রকারান্তরে উভয় দেশের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। ইতিপূর্বে এদেশের কিছু সংখ্যক তথাকথিত বিরোধীদল ও তার দায়িত্বহীন নেতারা ভারতবিদ্বেষী নানা প্রকার উস্কানি দিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন। ভারতের প্রতিটি জিনিসের প্রতি মানুষের মনকে বিরূপ করে তুলবার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। শেষে এদেরই একটা দায়িত্বহীন মুখপত্র আবিষ্কার করেছে ভারতে বাংলাদেশের টাকা তৈরী ও তা এদেশে পাচার করে ফায়দা লুটার কাহিনী। অথচ এটা এমন একটা ভ্রান্ত ব্যাপার যে এত তাদের মূর্খতারই প্রমাণিত হয়েছে। কেননা জাল টাকা তৈরীর ঘটনা ইতিপূর্বেইও আমরা লক্ষ্য করেছি। তখন যেহেতু ভারতের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিলোনা সেহেতু জাল টাকা ভারতের তৈরী বলে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। আর আজ একটি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্ব নষ্ট করার মানসে এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা বিরোধী শিবির থেকে বলা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি এটা দীর্ঘদিন চলতে পারেনা। দেশের মানুষের সচেতনতার সঙ্গেই ভারতবিরোধী প্রচারণার সমাপ্তি হতে বাধ্য। তাছাড়া দু’দেশের মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত তার মধ্যেকার বন্ধুত্ব কেউ বিনষ্ট করতে পারবেনা। রক্তের বিনিময়েই প্রয়োজন হলে তা সংরক্ষিত হবে।
০০০

ছাউনিতে ফিরে এসেছেন বীর জওয়ানেরা

তাদের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা স্ব স্ব ছাউনিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন। বিগত ১৫ই অক্টোবর চোরাচালান, অবৈধ যাতায়াত প্রভৃতি রোধ করার জন্য এদের সীমান্তে প্রেরণ করা হয়েছিলো। চোরাচালান বন্ধ হয়েছে, এরাও ফিরে এসেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে এই কয়েক মাসে আট হাজার চোরাচালানী গ্রেফতার হয়েছে যাদের অর্ধেক ধরা পড়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। সেনাবাহিনীর এ কাজ প্রশংসার্হ। জনগণের স্বার্থে, জাতীয় প্রয়োজনে তাদের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব যে তারা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন এজন্য তারাও নিশ্চয়ই গর্বিত।
জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংহতির স্বার্থে যে সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয় একটি দেশে, জাতীয় জরুরী প্রয়োজনে তাদেরই অন্যত্র কাজে লাগানোর দৃষ্টান্তও বিরল নয়। বন্যা, ব্যাপক আকারে মহামারী ও অন্যান্য বিশেষ অবস্থায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী এই সেনাবাহিনীর জওয়ানরা সুশৃঙ্খলার সঙ্গে এগিয়ে আসেন, তাদের নির্ধারিত কর্ম সম্পাদনের পর আবার ছাউনিতে ফিরে যান। পাকিস্তান আমলে সেনাবাহিনীর অপব্যহারের যে নানা দৃষ্টান্ত রয়েছে তা মুছে ফেলতে হবে জনগণের স্মৃতি থেকে, দেশের মানুষের মনে গড়ে তুলতে হবে তাদের জওয়ানদের সম্বন্ধে পবিত্র ও সম্মানজনক ‘ইমেজ’। এ বিষয়ে জনগণের বাস্তব ইচ্ছা, তাগাদা ও চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে সীমান্তে চোরাচালান রোধে সেনাবাহিনীর নিয়োগ ও তাদের সাফল্য গণমনে বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করবে।
সীমান্তে চোরাচালান রোধ সম্ভব হয়েছে এটা সুখবর। বিশেষ অবস্থায় সেনাবাহিনীকেই সেই দায়িত্ব নিতে হয়েছিলো। এখন অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এ দায়িত্ব এখন যাদের সেই বাংলাদেশ রাইফেলস এর হাতে তা অর্পণ করে সেনাবাহিনী স্ব স্ব ছাউনিতে ফিরে এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধের বীর ত্যাগী সৈনিকদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ রাইফেলস বাহিনী তাদের কর্তব্য কর্ম সফলতার সঙ্গে সম্পাদন করতে সক্ষম হবেন সে বিশ্বাস আমাদের আছে। এবার তাই দায়িত্ব বুঝে নেবার পালা। কোন কোন স্থানে অবশ্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশ রাইফেলস-এর সদস্যরাও চোরাচালান এবং অবৈধ যাতায়াত রোধ করার কাজে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এখন তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থা ও শুল্ক বিভাগীয় পুলিশ। দেশ পুনর্গঠন ও উন্নয়নের এই বিশেষ ক্রান্তিলগ্নে তাদের দায়িত্ব যে সমধিক একথা নিশ্চয়ই তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে না। আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি এবং একই সঙ্গে অভিনন্দন জানাই ছাউনিতে ফিরে আসা আমাদের বীর জওয়ানদের যারা জাতীয় সম্পদের পাচার থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করেছেন, গণদুশমনদের কর্মতৎপরতাকে দেশপ্রেমের আদর্শ দিয়ে প্রতিহত করেছেন।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!