You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২৭শে ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৩৮০

শ্রমিক মজুরি রিপোর্ট কার্জকর করুন

শিল্প শ্রমিকদের উৎপাদন ও উৎসব বোনাস প্রদান, ফ্রিঞ্জু বেনিফিটের মান নির্ধারণ, অদক্ষ সাধারণ শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধিকরণ, একই ধরনের কাজের একই ধরনের বেতন দান, শিফট বোনাস প্রচলন, ভালো হাজিরার জন্য পুরস্কার দান, গ্রুপ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা, শিল্প এলাকায় বসবাসকারী বিভিন্ন হারের বেতন প্রাপ্তদের বাসা ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বর্ধিতকরণ, শিল্প শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী ২০৫ টাকা নির্ধারণ, চটকল শ্রমিকদের জন্য ৮টি নতুন গ্রেডের ব্যবস্থা, সুতাকল শ্রমিকদের ৯২টি নিয়মিত পদ ৮ স্তরে বিভক্তিকরণসহ বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করে নতুন জাতীয় মজুরি কমিশন গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন তখন একজন সরকারী মুখপাত্র বলেছিলেন যে, এই রিপোর্ট কার্যকরী হলে এতে শ্রমিকরা বেশ লাভবান হবেন এবং তিনি তখন এই রিপোর্ট কবে নাগাদ কার্যকরী হবে বা হতে পারে সে সম্পর্কে সঠিক কোন তারিখ নির্ধারণ না করলেও শিগগিরই এটা কার্যকরী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু উক্ত মুখপাত্রের ওই আশা প্রকাশের পরও প্রায় আড়াই মাস চলে গেছে। কালের চাকা ঘুরতে ঘুরতে এখন আমরা একটি ঘটনাবহুল বছরেরও দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। ওই আশা প্রকাশের পর ঈদুল ফিতর ও দূর্গাপূজার মত দুটি প্রধান উৎসব পেরিয়ে গেছে, ওই কমিশনের রিপোর্ট কার্যকরী করার কোন ব্যবস্থা গ্রহীত হয়নি এবং আর সে ব্যাপারে কোন আলাপ-আলোচনাও শোনা যাচ্ছেনা। কমিশনের রিপোর্টে কতটা সরকার গ্রহণ করেছেন বা কতটা বর্জন করেছেন অথবা আদৌ কোন গ্রহণ-বর্জন, পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়েছে কি না তারও কিছু জানা যায়নি।
যাহোক, সেসব কথা টেনে আর লাভ নেই৷ ঈদুল আযহার মত আরেকটি প্রধান উৎসব এখন সামনে। অন্যদিকে বাজারেতে কিছু কিছু দ্রব্যের মূল্যের যে নিম্নগতি হয়েছিল, কোন কোন ক্ষেত্রে তা উর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। চাল ডাল, তেল নুন ও কাপড়ের দাম গত মাস দুয়েক থেকে বেশ কিছুটা কমেছিল, কিন্তু এখন আবার ঈদকে উপলক্ষ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে ঈদুল আজহা হচ্ছে কোরবানির ঈদ। ধর্মীয় উৎসব। সকলেই যে যার সামর্থমত কিছু না কিছু কোরবানি দেবেন। কিন্তু কোরবানির পশুর তথা গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির যে হারে এখন মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, তাতেও এই ত্যাগের উৎসব নিয়ে আসছে বিড়ম্বনার জ্বালা। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষ যদি ওই রিপোর্ট মোতাবেক গৃহীত ব্যবস্থাবলী তথা উৎসব বোনাস ও ফ্রিজ বেনিফিট সহ বিভিন্ন দেয় সুবিধাদি কার্যকরী করতেন, তা হলে শ্রমিকরা এসময় বেশ কিছু উপকৃতই হতেন। আমাদের বিশ্বাস সরকারও এদিকটা যথার্থভাবে বিবেচনা করে দেখবেন।

বাংলাদেশ-সোভিয়েট বাণিজ্য সফল হোক

সংবাদে প্রকাশ, সম্প্রতি মস্কোয় স্বাক্ষরিত এক নব্য বাণিজ্য চুক্তি অনুসারে আগামী চুয়াত্তর সালে বাংলাদেশ ও সোভিয়েট ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২১ কোটি টাকার পণ্য বিনিময় কাজ সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া, সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে নগদ মূল্যে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনার ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমাদের প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোভিয়েট ইউনিয়ন ঠিক কি কি ধরনের সম্ভাব্য সাহায্য দিতে পারবে সে সম্পর্কে আলাপ আলোচনার জন্য আগামী মাসে একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সোভিয়েট বাণিজ্যদল বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। আপাততঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে রাশিয়া যাবতীয় সাহায্য দেবে। এছাড়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে অপরিশোধিত তেল সরবরাহের বিষয়টিও রুশ সরকার সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে দেখছেন। এ চুক্তি অনুসারে আমরা রাশিয়া থেকে আনবো ৩০ হাজার টন কেরোসিন ১৮ হাজার টন পিগ, আয়রন ভেরাইটি, ৫ হাজার টিন এম এস বিলেট, ২শ টন জিংকইনগট, ৪ হাজার টন কাঁচা তুলা, ৫ হাজার টন সূর্যমুখী তেল, ১৫ লাখ ষ্টালিং এর বই ও সাময়িকী, ১৫ লাখ পাউন্ড ষ্টালিং এর ফিল্ম ও ফিচার ফিল্ম এবং পারস্পরিক স্বীকৃতি অনুযায়ী ৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড ষ্টালিং এর বিভিন্ন পণ্য৷ আবার বিনিময় চুক্তি অনুসারে আমরা সোভিয়েট ইউনিয়নে রপ্তানি করবোঃ কাঁচা পাট সাড়ে ১৮ হাজার টন, হেসিয়ান- ২ কোটি মিটার, জুট স্যাক্স- ১ কোটি খণ্ড, চা- ২ হাজার টন, ছাগলের চামড়া- ১৭ লাখ খন্ড, চামড়া- ৩ লাখ ৪০ হাজার ষ্টালিং পাউন্ডের বই ও সাময়িকী- ১৫ হাজার পাউন্ড ষ্টালিং এর ফিল্ম ও ফিচার ফিল্ম- ১৫ হাজার পাউন্ড ষ্টালিং এর এবং পারস্পরিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে সাড়ে ৭ লাখ পাউন্ড ষ্টার্লিং এর বিভিন্ন দ্রব্য।
আগামী বছর আমরা নগ মূল্যে রাশিয়া থেকে কিনবোঃ ৩০ হাজার টন কেরোসিন, ১ লাখ টন হাই স্পীড ডিজেল, ১০ হাজার টন তুলা, ২ হাজার টন এম এস বিলেট, ১০ হাজার টন সূর্যমুখী তেল এবং ৫ হাজার টন জিংকইনগট। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত সপ্তাহে এবং এ সময়ে বিভিন্ন পণ্যের যে আন্তর্জাতিক মূল্য ছিল ঠিক সেই ভিত্তিতেই পরবর্তী মূল্যায়ণও ধার্য করা হবে বলে স্থির হয়েছে। তথ্যগুলি প্রকাশ করেছেন আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামান। তিনি সাতদিন সোভিয়েট ইউনিয়ন সফর শেষে গত পরশু বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা প্রসঙ্গে এ তথ্য প্রকাশ করেন।
রাশিয়া আমাদের একটি মিত্ররাষ্ট্র। শুধু ‘মিত্র রাষ্ট্র’ বললেই সম্পূর্ণ হয়না। আমাদের যতগুলি প্রকৃত ও আন্তরিক বন্ধুরাষ্ট্র আছেন তাদের সবার মধ্যেই একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সর্বোজ্জ্বল স্থানের দাবিদার। আমাদের বিশাল রক্ত সাগর পেরানো মুক্তি সংগ্রামে তার ভূমিকা অদ্বিতীয়, অবিস্মরণীয়। আজো আমাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মানুষের হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে তার সে বন্ধুত্ব, সাহায্য ও সহযোগিতার কথা চির ভাস্বর, স্বর্ণোজ্জ্বল।
এমনকি, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার বিপুল, বলিষ্ঠ ও আন্তরিক ভূমিকা আমাদের সমগ্র দেশ ও জাতিকে এক সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতায় চির আনত করেছে। আমাদের সঙ্গে রুশীয়দের যোগাযোগ সমতা, সার্বভৌমত্ব ও মহা প্রীতি ও বন্ধুত্বের এক অমোঘ, অবিচ্ছেদ্য হ্রিদয়ের যোগাযোগ। আমাদের এ অকৃত্রিম বন্ধুত্ব সারা বিশ্বের একটি বিস্ময়কর আদর্শ। আমরা উভয় উভয়ের সার্বিক ও প্রচন্ডতম উন্নতিতে পরস্পর বিশ্বাসী। আমরা আমাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরানো ঈর্ষাপরায়ণ শত্রু সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ এবং এ বন্ধুত্বে শীতল হস্ত স্পর্শকারী যে কোন কলুষ ও বাধা ধূলিসাৎ করে দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বর্তমানে স্বাক্ষরিত পণ্য বিনিময় চুক্তি আমাদের এ বন্ধুত্ব আরো অক্ষয়, অমর ও অটুট করে তুলবে- আমরা সেই মহান প্রত্যাশা নিয়েই উদগ্রীব আছি।

বাস্তবতাকে মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ

উত্তর ভিয়েতনামের প্রতিনিধি মিঃ লি ডাক থো গত সোমবার প্যারিসে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের অস্তিত্ব স্বীকার ব্যর্থ হলে দক্ষিণ ভিয়েতনামের পরিস্থিতি অত্যন্ত ‘সংকটজনক’ হবে।
এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিঃ থো বলেন, পরিস্থিতির অগ্রগতি কিভাবে হতে পারে তা নির্ভর করে ওয়াশিংটন ও সায়গনের উপর।
তিনি আরো বলেন, অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে ওয়াশিংটন যদি দক্ষিণ ভিয়েতনামের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখে তাহলে পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক হবে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের দুটি সরকার, দুই সেনাবাহিনীকে স্বীকৃতি দানের জন্য মিঃ থো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।
মিঃ লি ডাক থো দক্ষিণ ভিয়েতনামের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারকে স্বীকৃতি দান প্রসঙ্গে যে বক্তব্য উপস্থাপিত করেছেন তা অত্যন্ত বাস্তব সম্মত। এ বিষয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ নেই। বিশ্ব জনমত আজ ভিয়েতনামবাসীদের পক্ষে। ভিয়েতনামের মাটিতে শান্তির শ্বেতশুভ্র কপোত ডানা মেলে উড়ে বেড়াক এটা সকলেরই কাম্য। ভিয়েতনাম ভিয়েতনামীদের হোক এই ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে আজ ভিয়েতনামের মানুষ লিপ্ত।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আভ্যন্তরীণ সংকট ও বিশ্ব জনমতের চাপে পড়ে প্যারিস শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর সকলেই আশা করেছিলেন যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। মার্কিন সৈন্য যখন প্রত্যাহার করা হয়েছে তখন সায়গনের পুতুল সরকারকে আর মদদ দেয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। নিজস্ব সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করা এবং এশিয়াবাসীদের বিরুদ্ধে এশীয়দের লেলিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করছে। সায়গন সরকারকে সমরাস্ত্র থেকে আরম্ভ করে সব রকমের সাহায্য ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। আর এ কারণেই দক্ষিণ ভিয়েতনামের অবস্থায় বিপ্লবী সরকারের বাস্তবতাকে মেনে নিচ্ছেনা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে সব কিছু একটু দেরিতে উপলব্ধি করেন তারই প্রমাণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বর্বর ইয়াহিয়া সরকারকেই সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে। কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হিসাব সেদিন ভুল হয়েছিল। বাংলাদেশে যা হয়েছে ভিয়েতনামেও তাই হতে যাচ্ছে। ভিয়েতনামের অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তেল সংকট, মুদ্রাস্ফীতি থেকে আরম্ভ করে নানান সংকটে আজ জর্জরিত। এমতাবস্থায় বুদ্ধিমানের কাজ হল ভিয়েতনামের মাটিতে যুদ্ধের আগুন না ছড়িয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলা। আর তার পথ প্রশস্ত হতে পারে দক্ষিণ ভিয়েতনামের অবস্থায় বিপ্লবী সরকারের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিলে এবং সেটাই হবে সময়োজিত বুদ্ধিমানের কাজ।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!