You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছেন তাঁদের সম্পর্কে
অসীম মুখােপাধ্যায়

একই চিতায় একটি গােটা পরিবারকে ওঠানাে হলাে। বাপ, মা, ছেলে, ছেলের বউ একটি মেয়ে এবং দুতিনটি নাতি-নাতনী। কেউ বাদ যায়, সবাই কলেরায় মরেছে। ওপারে মধ্যযুগীয় বর্বরদের হাত থেকে পালিয়ে এসে এপারে মহামারির হাতে ধরা পড়ে গেছে এবং এখন গাদাগাদি করে ভেজা আম কাঠের চিতায় চড়ে পরলােকের যাত্রী। এই রকম আরও বহু পরলােকযাত্রীর চিতা জ্বলছিল বাদুড়িয়ার নতুন রাস্তার ধারে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।
এই এক ধরনের উদ্বাস্তু। মানুষের মতােই দেখতে, কিন্তু ঠিক যেন মানুষ নয়। ভীষণ ক্লিষ্ট, ভীষণ অপরিচ্ছন্ন, ভীষণ নির্বোধ। বােধ আছে কেবল একটি বিষয়ে, তা হলাে ক্ষুধা। ক্ষুধার তাড়নায় রাতদিন হাঁ করেই আছে। সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাগ নেই, দ্বেষ নেই, কোনও তাগিদ নেই। হাত বাড়িয়ে হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে তাে আছেই। ভাবতে কষ্ট হয় ওদের নিয়েই জীবনানন্দ একদিন কবিতা লিখেছিলেন।
এক জায়গায় একটা অতি ছােট চাটাই বা তাঁবুর নিচে কেমন করে কুড়ি বাইশজন লােক স্বচ্ছন্দে শুয়ে বসে থাকতে পারে তা এদের না দেখলে বােঝা যাবে না। যক্ষ্মা রােগী বুড়াের পাশে কোলের বাচ্চা মাটিতে পড়ে গড়াচ্ছে। ভিনদেশী পুরুষের পাশে অপরের যুবতী বউ পরম নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। কেউ কাউকে চেনে না, কেউ কাউকে জানে না। হাঁড়িকুড়ি, চটের বস্তা, হেঁড়া কাঁথা আর তােবড়ানাে টিনের বাক্স ঘাড়ের কাছে রেখে, সামান্য একটা ছাউনির তলায় অসংখ্য মানুষের মতাে দেখতে এই জম্ভরা মুখ হাঁ করে দিন কাটাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু করে হাওয়াই জাহাজে চড়িয়ে অনেক দূরের এক চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে এদের। কিন্তু আরও একদল উদ্বাস্তু এসেছে, যাদের অবস্থা ও মনােভাব নিয়ে কেউ তলিয়া ভাবছে না। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর উদ্বাস্তুরা হলাে পূর্ব পাকিস্তানগত উঠতি মধ্যবিত্ত। এদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী আছেন, ব্যবসায়ী আছেন, চিত্রতারকা আছেন, সাংবাদিক আছেন, আইনজীবী আছেন, এক কথায় মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সােজা, বাঁকা সব পেশার সব মানুষই আছেন এদের মধ্যে। আমার কথা এদের নিয়েই।
উদ্বাস্তু মধ্যবিত্ত নেতা আমি এদের প্রথম আবিষ্কার করি উত্তর কলকাতার একটি বিখ্যাত হােটেলে। সকালবেলা নিয়মমতাে কাগজ-কলম নিয়ে বসেছি এমন সময় খবর এল ‘জরুরি তলব’ অমুক দলের দুই বিখ্যাত নেতা কলকাতায় এসেছেন, উঠেছেন ঐ হােটেলে, তারা অনেক বাহানা করে শেষমেষ দর্শন দিতে রাজি হয়েছেন কাজেই সাক্ষাৎকারের জন্য যেতে হবে।
গেলাম নেতৃদর্শনে। হােটেলের দোতলার ঘরে দু’পাশে দুটি খাটে দুই নেতা চিৎপাত হয়ে পড়ে আছেন, একজন যুবক রােগা (রােগা বলব না স্লিম বলব? সাধারণ মানুষ হয় রােগা আর নেতারা হয় “স্লিম’!) আর একজন খুব মােটা। মােটা যিনি তার কোমরের লুঙ্গি বিপজ্জনকভাবে নিচের দিকে নেমে গিয়ে বিশেষ একটা জায়গায় এসে হোঁচট খেয়ে হাঁ হয়ে আছে। নেতার দেহের মধ্যাংশটুকু আমাদের গণেশ ঠাকুরের মতাে এবং শুয়ে থাকার দরুণ পাশবালিশ বলে মনে হচ্ছিল। দুজনই চুপচাপ এবং চিৎপাত হয়ে ছিলেন। আমাকে দেখেও দেখলেন না যেন! স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ঘরে ঢুকব সে সুযােগও হচ্ছিল না। কেননা ঘরময় অজস্র ফিলটারটিউপ উইলসের প্যাকেট ছড়ানাে। পরে একসময় গুণেছিলাম ষােলটা। মাঝে মাঝে দু-একটা বিলাতী সিগারেটের প্যাকেটও নজরে আসছিল। মােটা যিনি তার খাটের তলায় একটি আধ। খাওয়া জিনের বােতল। টেবিলের ওপর সদ্য কিনে আনা বাটা কোম্পানির জুততা এবং বেশ কয়েকজোড়া টেরিলিন শার্ট ও টেরিট প্যান্ট, আলনায় বেশ কিছু বম্বে ডায়িং মার্কা তােয়ালে এবং বেডকভার ঝুলছে। এগুলােও সদ্য কেনা। ও হ্যা, টেবিলের উপর এসপ্ল্যানেডের ফুটপাত থেকে কেনা কয়েকটা সেন্ট, আফটার শেভিং লােশন এবং গন্ধ তেলের শিশিও দেখতে পেলাম। চেয়ারের উপরের বেশ কিছু ধােপাবাড়ি থেকে কাচিয়ে আনা জামাকাপড় ছিল।
সুতরাং ঘরে ঢুকলেও বসব কোথায় তাই ভাবছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটা উপায় বার করলাম। যদিও আমার ঠাণ্ডা লাগেনি তাও কাশতে লাগলাম। অচিরাৎ ফল ফলল। এক নেতা চোখ খুললেন, ঘাড় ফেরালেন এবং ভ্রু কুঁচকোলেন। বুঝলাম নেতা পরিচয় জানতে চাইছেন। পরিচয় দিলাম। নেতা ভিতরে আসতে আদেশ করলেন। ভিতরে ঢুকলাম। নেতা আদেশ করলেন চেয়ারের ওপর থেকে কাপড়গুলাে সরিয়ে টেবলে রাখতে। রাখলাম। তিনি আবার আদেশ করলেন ‘বসুন’। বসলাম। ঐ নেতা এবং তার বন্ধু অপর নেতাটি কী বললেন তা এখানে না বললেও আপনারা আন্দাজ করতে পারবেন। ওরা চিৎপাত হয়ে শুয়ে কড়িকাঠ গুনতে গুনতে গেরিলা যুদ্ধ কী এবং তা কী করে করতে হয় তা বােঝালেন এবং সেইটে করতেই যে কলকাতায় আসা তাও বোেঝালেন। কিন্তু আমি চলে আসার ঠিক আগেই যে কাণ্ডটি করলেন তা পাঠক-পাঠিকাদের জানা দরকার। রােগা নেতা বললেন, ‘ওহে একটা সিগারেট দাও’, মােটা নেতা বললেন, ‘খুঁজে নিতে হবে। এত সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে, কোনটা খালি, কোনটা ভর্তি বুঝি কী করে। অতঃপর দু’জনে খাট থেকে ঝুঁকে পড়ে সিগারেটের প্যাকেটগুলাে খুলে দেখতে লাগলেন। হঠাৎ মােটা নেতাটির হাতের ধাক্কা লেগে তার খাটের তলায় রাখা জিনের বােতল মাটিতে পড়ে গড়াতে গড়াতে বেরিয়ে এল। হতচ্ছাড়া বােতলটি একেবারে লেবেলসহ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে দেখে মােটা নেতা সদ্য যৌবন তাড়িত নারীর মতাে সলজ্জ হাসি হেসে বললেন, এটা মেডিসিন’!
এরপর আরও অনেকবার ঐ দলের অনেক নেতা দেখেছি। হাসছে, খাচ্ছে, গাড়ি চড়ছে, মােটা গদি পাতা বিছানায় শুয়ে গভীর ঘুমের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়ে লড়াই করছে, ‘খান সেনা মারছে আর্তকে রক্ষা করছে, দেশ স্বাধীন করছে, কত কী করছে! এবং ঘুম ভেঙে সকাল সাড়ে সাতটায় উঠে বাজারি পত্রিকার গরম খবরে কামড় বসিয়ে, তারিয়ে তারিয়ে চা খাচ্ছে। কলকাতার দুটি বিশেষ জায়গায়, দুটি বিশেষ বাড়িতে এই রকম অনেক নেতা আছে। সুসজ্জিত ঘরে, স্বচ্ছন্দ জীবন যাপনের যাবতীয় উপকরণ পেয়ে এরা অতি দ্রুত বিপ্লব করে যাচ্ছে।
এবার সাংবাদিক উদ্বাস্তু! যার কথা বলছি তার পিতা আয়ুব খার ধ্বজাধারী ছিলেন এবং এদের আর্থিক উন্নতির জন্য আয়ুব খাই দায়ী। এই সাংবাদিক উদ্বাস্তুটি একদিন আমাকে বললেন, “কেন যে আপনারা রিফিউজি, রিফিউজি করে হাঁপাচ্ছেন, বুঝি না। আরে মশাই আপনাদের হলাে অনেক বড় লােকের দেশ। আপনারা অনায়াসে এক কোটি রিফিউজিকে প্রােভাইড করতে পারেন। চমৎকার যুক্তি! কার মাশুল কাকে দিতে হচ্ছে! এই সাংবাদিক উদ্বাস্তু বর্তমানে আরও কয়েকজন ‘দেশের ভাইকে নিয়ে বই লেখার ব্যবসায় নেমে গেছেন। বাজারে ইতিমধ্যে বহু বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও বাংলাদেশের সংগ্রাম কাহিনী বেরিয়ে গেছে। এরাও তাই করছেন তবে ইংরেজিতে। কেননা, তা হলে বিলেতের বাজারটা ধরা যাবে! পার্কন্সার্কাসের এক ধনীর বাড়িতে নিয়মিত সাহেবী খানা খেয়ে, পাখার তলায় বসে এই সাংবাদিক উদ্বাস্তুরা দেশরক্ষার সুমহান দায়িত্ব সবাই এবং যথাস্থানে বসে সংগ্রাম চলছে। একবার এক চিত্রতারকা তাে দেশের জন্য শােক প্রকাশ করতে গিয়ে মুখের ম্যাক্স ফ্যাক্টরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গলে গেলেন। রেডিওতে তার গভীর বিনুনি শােনা গেল। এই সেদিন মার্কিন কনসাল ভবনের সামনে কয়েকজন চিত্রতারকা কেঁদে উঠলেন। যথারীতি বাজারি পত্রিকায় তাদের ফোলা চোখ-মুখের ছবি উঠল, যেমন করে মন্ত্রী বা মেয়র রাস্তার ময়লা সাফ করতে এলে তাদেরও ছবি ওঠে, ঠিক তেমনি করে!
পূর্ব পাকিস্তানাগত মধ্যবিত্ত হিন্দু বা মুসলমান এসব উদ্বাস্তুরা, বিশেষ করে যারা শিক্ষিত শ্রেণীভুক্ত তারা প্রায় অনেকেই টাকা এবং সােনার গয়না যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ে আসতে পেরেছেন। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি। স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত হিন্দুরা তাদের টাকা নিয়ে ইতিমধ্যেই বাড়িঘর বানাতে শুরু করেছে, কেউ কেউ বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন। কেউ আবার ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। অসুবিধা হচ্ছে মধ্যবিত্ত মুসলমানদের নিয়ে, কারণ হিন্দুরা যত সহজে মেলামেশা করতে পারছেন বা মেলামেশার সুযােগ পাচ্ছেন এরা ঠিক ততটা, খুবই স্বাভাবিক কারণে, পারছেন না। কিন্তু তা হলেও এদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী, চিত্রতারকা, সাংবাদিক ইত্যাদিরা অপেক্ষাকৃত পালন করছেন। সংগ্রামের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখছেন ইতিহাসের পাতায়। এদেরই একজন স্থানীয় একটি বাজারি সাপ্তাহিকে নিয়মিত অগ্নিস্রাবী কাব্য পরিবেশন করে থাকেন এবং রবীন্দ্রনাথের নাম শুনলেই তার চোখে জল আসে। অথচ জানা গেছে যে, সরকারের রবীন্দ্রনাথ বিরােধী আন্দোলনের ইনি ছিলেন একজন মুখ্য হােতা!
চিত্রতারকা উদ্বাস্তুও দেখছি। কয়েকদিন আগে বর্ষণমুখর এক দুপুরে চৌরঙ্গীর একটি নামী রেস্তোরায় এদের কয়েকজনকে দেখলাম। একজন চিত্রপরিচালক, একজন উঠতি নায়ক (অত্যন্ত নারীসুলভ চেহারা) একজন টেকনিসিয়ান এবং বাকিসব সহকারী বা স্তাবক। টেবিলে চাপড় মেরে আন্দোলনের সাফল্য সম্পর্কে জোর আলােচনা চলছিল। সবাই একমত। গােটা দুনিয়া শিগগিরই স্বীকৃতি দিচ্ছে, খান-সেনারা তখন পালাতে পথ পাবে না। ভারত সরকার তাে আছেই’ ইত্যাদি। বার কয়েক চা এবং মােগলাই পরােটা এল এবং প্রচণ্ড সংগ্রামরত মুক্তিযােদ্ধারা খুব সহজেই সেগুলাে উড়িয়ে দিলেন। কী খেয়াল হলাে, পরদিন আবার গেলাম সেই রেস্তোরায়। গিয়ে দেখি, ঠিক ঐ একই কোণায়, একই টেবিল ঘিরে একই সব মানুষ। এরপর দিনও গেলাম সেই একই দৃশ্য! কদিন বাদে আবার গেলাম। দেখলাম ঠিক এসেছে ভালাে অবস্থায় আছেন। চিত্রতারকাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই এখানকার চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যােগাযােগ করে ফেলেছেন। গায়ক-গায়িকারা তাে রেকর্ড এবং জলসা দুই-ই করতে পারছেন, কয়েকজন সাংবাদিক আবার গুছিয়ে বসেছেন এবং বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস’, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনী’ বাজারি পত্রিকায় কাব্য, প্রবন্ধ ইত্যাদি চর্চার মাধ্যমে লক্ষ্মীর পাঁচ পা আবার দেখতে পাচ্ছে। শােনা যাচ্ছে, এদের কেউ কেউ নাকি বিভিন্ন কলেজে চাকরি পেয়েছেন এবং আরও পাবেন।
বুদ্ধিজীবী পূর্বপাকিস্তানীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে একটি চমৎকার ঘটনা মনে পড়ে গেল। উপভােগ্য নিঃসন্দেহে। কিছুদিন আগে খবর পেলাম যে বিখ্যাত এক বিদেশি কৃষি অর্থনীতিবিদ আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমি নিজেই তার কাছে গেলাম। তিনি উঠেছিলেন পার্ক স্ট্রিটের এক অভিজাত ফ্ল্যাটে। সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের একটি তরুণ মুসলমান অর্থনীতিবিদও ছিল। বিদেশি ভদ্রলােক একসময় তার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলেন। আমরা বসে কথা বলছি। হঠাৎ কোনও এক প্রসঙ্গে আমি বাংলাদেশ’ না বলে পূর্ব পাকিস্তান বলে ফেললাম। সঙ্গে সঙ্গে ঐ তরুণ অর্থনীতিবিদটি দু’হাতে নিজের বুক চেপে ধরে চেয়ারে ঢলে পড়ল। আমি হতবাক! থ্রমবসিস হলাে নাকি? কী করব? একটু পরে ছেলেটি সােজা হয়ে বসতে বসতে বলল- আর কখনও পূর্ব পাকিস্তান বলবেন না বুকে বড় লাগে। বলবেন ‘জয় বাংলা’। সে তখনও বুকে হাত বােলাচ্ছিল। এবার আমারই ঢলে পাড়ার পালা। জানতে পারলাম ছেলেটি বর্তমানে ফ্রান্সে যাচ্ছে, সেখান থেকে অক্সফোর্ডে যাবে। বললাম ‘জয়বাংলা না বললে বুকে লাগে, অথচ জয়বাংলা ছেড়ে বিদেশে যেতে আপত্তি নেই কেন? আপনার মতাে শিক্ষিত অনেকেই তাে এখানে এসেছে, তারা তাে কেউ বাইরে যাচ্ছে না? দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু’ কোনও উত্তর দিতে পারলেন না!
যদিও আমার অভিজ্ঞতা থেকে খুব সামান্যই বললাম, তাহলেও এই স্বল্পতম বিবরণকে সামনে রেখে ভাবা উচিত কারা কে এবং কে কী পাচ্ছে? সত্য নগ্ন অথচ নগ্ন নয়। কারণ সত্য নিরাবরণ তার আবরণের দরকার নেই, তার পরিচয় সে নিজেই। কিন্তু আমরা অসভ্য সমাজের অসভ্য মানুষরা প্রকৃত অর্থে নগ্ন বলেই সত্যের সামনে দাঁড়াতে চাই না। ভয় পাই। তা না হলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পেতাম যে, কাদের বদলে কারা কী করে নিচ্ছে, কাদের মাথায় কারা কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে। ইয়াহিয়ার এবং তারা ‘দুশমন দাদা’দের চক্রান্তের বলি হলাে পূর্ব পাকিস্তানের কোন্ আর্থিক স্তরের মানুষ এবং কী পরিমাণে? ইয়াহিয়ার চক্রান্ত সফল হলাে কাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এবং তাদের কী শাস্তি দেয়া উচিত? এবং অজস্র রক্তপাত, প্রাণহানি ও বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যদি কোনওদিন কোনাে ব্যবস্থা হয় তবে কারা ‘আম’টি পেড়ে খাবে এবং ‘অজগর তেড়ে আসবে কাদের?’
এপারেও দেখছি সময় বুঝে মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে পরের বারের জন্য গদি পাওয়ার রাজনীতি চলছে। ওপারেও দেখছি লােক খেপিয়ে দিয়ে জেলে বসে রথ দেখা কলা বেঁচা দুই হচ্ছে। কেননা দু’পারেই এক কথা- ‘আন্দোলন করা ভালাে যদি করে পরের ছেলে মেয়ে। আমরা মজা দেখব, মিছিল করব, কাঁদুনি গাইব, বই লিখব, সংগ্রামের সিনেমা করব এবং সময়ে পাকা আমটি পেড়ে খাব’!

সূত্র: দর্পণ
২৩.০৭.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!