You dont have javascript enabled! Please enable it!

১১ শ্রাবণ, ১৩৭৮ বুধবার, ২৮ জুলাই ১৯৭১

মুক্তিবাহিনী গেরিলা ইউনিটের একজন যোদ্ধা কমলাপুর মাজার সন্নিকটস্থ ইলেকট্রিক সাব-ষ্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটায় ফলে বিদ্ধস্ত হয়।

-কুমিল্লার কয়েকটি স্থানে বিএসএফ গোলাবর্ষণ করেছে। পাকিস্তান তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং হুশিয়ার উচ্চারন করেছে।

-অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যোগাযোগ সেতু বিদ্ধস্ত করেছে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ইউনিট। ঢাকায় বোমা ফাটানো অব্যাহত রয়েছে। জনবিরল ঢাকা নগরী। পাক

                                                                                বিমানবাহিনী বালুরঘাটে বোমা ফেলেছে। যশোর নাভারণ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কসবা পাকবিমানবাহিনী হামলা চালিয়েছে। হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

-ভারত মুক্তিবাহিনী সাহায্য করবে মানবিক কারণে। এদিন ডেল্টা সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন (পরে মেজর) রফিক উল ইসলাম ভারতের ব্রিগেডিয়ার সাবেগ সিং এর সঙ্গে নৌ অপারেশন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। ১০ আগষ্ট ‘অপারেশন জ্যাকপট’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। (১০ খঃ পৃঃ১২)

-সাপ্তাহিক টাইম এক প্রতিবেদন বলছেঃ পাকবাহিনী ২৫ হাজার নিহত হয়েছে বাংলাদেশ।

-বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্যাকন্যা শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জননী হলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই দৌহিত্রের না রাখা হয় ‘জয়’। সুফিয়া কামাল লিখেছেন, বিকালে বৌমা আমি হাসিনার ছেলে দেখতে হাসপাতালে গেলাম। কি ভীষণ দুর্ব্যবহার যে করল ওখানকার মিলিটারী পাহারাদারটা। হাসিনার মা মাত্র ১০ মিনিটের জন্য ওদের দেখতে পেয়েছিলেন। আজ হাট কড়া নিয়ম চালু হল, কোনো মানুষই আর ওদের দেখতে যেতে পারবে না। এ যে কি অমানুষিক ব্যবহার। জেলখানায় কায়েদীও সাক্ষাতের জন্য সময় পায়। আল্লাহ আর কত যে দেখাবে। (একাত্তরের ডাইরী পৃঃ৭২)

-সিনেটর ফুলব্রাইট মার্কিন সিনেটে এক বিবৃতিতে বলেন যে আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়েছিল কম্যুনিজমকে প্রতিহত করা জন্য। কিন্তু এই অস্ত্র বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। এখান আবার পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ক্ষীণ প্রচেষ্টা ঐ অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। আমেরিকা পাকিস্তানকে যে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়েছে, পাকিস্তান সেই অর্থনৈতিক সাহায্যের অপব্যবহার করেছে এবং অধিকাংশ অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান সরকার নির্বিচারে সামরিক অভিযান চালিয়ে পূর্ব বাংলায় হিন্দু,বুদ্ধিজীবী বাঙালী  নেতাদের হত্যা করেছে। হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে, কিন্তু এখনো আমেরিকা পাকিস্তানকে সামরিক  ও অর্থনৈতিক সাহায্য দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য সাহায্য প্রদানকারী দেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও আমেরিকা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যে নীতিতে বিশ্বাস করে সেই সমস্ত নীতির বরখেলাপ করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সমর্থন করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত যে পর্যন্ত না পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একটা সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধানে উপনীত হয়, সে পর্যন্ত পাকিস্তানকে কোনরূপ অস্ত্র বা অর্থ দিয়ে সাহায্য না করা। তিনি আরো বলেন, যদি নিক্সন প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তা হলে তিনি কংগ্রেসের সাহায্য নিতে বাধ্য হবে। (বি ডি-১ পৃঃ ৫৪০-৪২)

-ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম লন্ডনে বলেন, পাকিস্তানের পূর্ব অংশের জনসাধারণ যে ধরনের রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে উদগ্রীব তা একমাত্র পাকিস্তান সরকারই করতে পারেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে সাহায্য পাঠানোর আগে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা অবশ্যই প্রয়োজন।

-ভারত সরকারের জনৈক মুখপাত্র নয়াদিল্লীতে বলেন বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসছেন। স্বদেশ ফিরে যাওয়ার জন্যে পাকিস্তান সরকারের আহবানে পরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ শরণার্থী দেশত্যাগ করে ভারতে এসেছেন। ভারত এখন প্রায় ৭০ লাখ শরণার্থী রয়েছেন।

-বাংলার প্রবীণ জননেতা মওলানা ভাসানী ‘টাইমস অব ইন্ডিয়ার’ সংবাদদাতাকে জানায়েছেন পাকিস্তানের শুরু থেকেই আমি স্বাধীন সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের দাবি জানিয়ে আসছি। হিন্দু, মুসলমান খ্রীষ্টান ও উপজাতিদের অর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক মুক্তির সংগ্রাম চালিয়েছি, তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোন বাম পন্থী ঐক্য জোট গঠনের কথা  ২৫ মার্চের আগে বা পরে তিনি কখনোই বলেননি। (৪খঃ পৃঃ ৫৬৬)

-২৮ শে জুলাই “ দি গার্ডিয়ান” পত্রিকার সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়, ইয়াহিয়া খান ও  তাঁর পরামর্শদাতারা ধৈর্যহীন হয়ে তাঁদের সমালোচকদের প্রতি ক্ষুদ্র মনোভাব প্রকাশ করেছে। কিন্তু অসহনীয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলে তাঁদের ক্রুদ্ধ চেহারার মুখোশের ফাঁক দিয়ে আসল চেহারা উকি দিচ্ছে। সম্পাদকীয় মন্তব্যে আরও বলা হয়ঃ  “ It may be that nothing, no diplomatic intervention, can reverse this humiliating and disastrous slide. But a few dramatic gestures would help, First, the release of Sheikh Mujibur Rahman and his installation in Dhaka. Secondly, concerted action by the Security Council. Thirdly, clear warning to Yahaya that he will remain, economically and morally, beyond the pall until his Punjabi troops fly hope to the Punjab. “The Plight of Bengal”. editorial comment (The Guardian, 28 July. 1971) অর্থ্যাৎ সম্পাদকীয়তে বলা হয়, “কূটনৈতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে শরণার্থীদের ফেরৎ পাঠানো কিংবা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনা পরিহার করা যাবে না। কিন্তু কয়েকটি নাটকীয় পদক্ষেপ সমস্যা সমাধানের সহায়ক হতে পারে। প্রথমতঃ শেখ মুজিবুর রহমানকের মুক্তি দিয়ে ঢাকায় তাঁকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সু্যোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সিকিউরিটি কাউন্সিল কর্তৃক একযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয়তঃ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক পাঞ্জাবী সৈন্যদের পাঞ্জাবে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত নৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যপারে তাঁকে বিরক্তিকর ব্যক্তি হিসাবে গণ্য করা হবে বলে পরিষ্কার ভাষায় সাবধান করে দিতে হবে। উপরোক্ত সম্পাদকীয় নিবন্ধে জাতি সংঘ কর্তৃক শরণার্থীদের তদারকের জন্য নিয়োজিত হাই কমিশনার প্রিন্স সদস উদ্দিন আগাখানকে গোঁড়া মুসলমান এবং ইয়াহিয়ার প্রতি তাঁর মনোভাব দ্বর্থ্যব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদল পূর্ব বঙ্গ সফরকালে অত্যাচার ও নির্যাতন সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে সে তুলনায় তিনি বেশি কিছু দেখেছেন বলে মনে হয় না। শরণার্থীদের নিকট তিনি রক্ষাকারী হিসাবে বিবেচিত হবেন বলে আশা করা বৃথা। (স্বঃ সং: প্রঃ বাঃ পৃঃ৯৭)

-জাপানের সংসদ সদস্য মিঃ কানিচি নিশিমুরা দিল্লীতে বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের উচিত পাকিস্তানের নেতা ও আওয়ামীলীগ প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মানজন রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!