বাংলার বাণী
২৮শে জানুয়ারী, ১৯৭৩, রবিবার, ১৪ই মাঘ, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশ-নেপাল যুক্ত ইশতেহার
নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী জ্ঞানেন্দ্র বাহাদুর কারকির সরকারীভাবে চারদিন বাংলাদেশ সফরের পর প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে সমতা, স্বাধীনতা, দু’দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন এবং দু’দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিকে নেপাল এবং বাংলাদেশ উভয়ে দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার কথা পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে। ইশতেহারে বলা হয় যে, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোর পরিবেশ ছিলো সৌহার্দ ও আন্তরিকতাপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং জোটনিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের নীতি সম্পর্কে পুনরায় আস্থা প্রকাশ করেন।
নেপালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন যে, পাকিস্তানে আটক বাঙালীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সমস্যাটির সমাধান মানবতার খাতিরেই ত্বরান্বিত করা উচিত।
ইশতেহারে ভিয়েতনামের ঘটনাবলী সম্পর্কে স্বস্তি প্রকাশ, দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
প্রতিবেশী দেশ নেপাল। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক দিনের। নেপালী জনসাধারণ স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে আমাদের নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন। নেপালের জনসাধারণ বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম সাফল্যমন্ডিত হোক এ কামনাই করেছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর নেপাল বাংলাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে এসেছেন প্রীতি ও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন রচনার জন্য।
নেপালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী কারকির বাংলাদেশ সফরের একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিলো দু’দেশের মধ্যে প্রীতি ও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করা।
বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়—এ মৌল নীতিকে বাংলাদেশ সরকার জন্মলগ্ন থেকেই গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার একথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে, এ উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করা। সৌহার্দ ও সহযোগিতার মধ্যেই পারস্পরিক উন্নয়ন নির্ভরশীল।
আমরা আশা করি, দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ-সহযোগিতা বিশেষ করে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে উভয় সরকার একটা বাস্তবসম্মত ও সুদূরপ্রসারী কর্মসূচী গ্রহণ করবেন। শুধু তাই নয়, দু’দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক চুক্তিও সম্পাদিত হবে বলে আমরা আশা করি।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানে আটকে পড়া নিরীহ ও নিরপরাধ বাঙালীদের সম্পর্কে যে অভিমত শ্রী কারকি প্রকাশ করেছেন সেজন্য বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ আনন্দিত হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা একথাই বলবো যে, পাকিস্তানে আটক পাঁচ লক্ষাধিক বাঙালী আজ অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন। পাকিস্তানের এহেন অন্যায় ও অসঙ্গত আচরণে আজ বিশ্ববিবেক বিক্ষুব্ধ। সুতরাং বিশ্ববিবেকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এ সমস্যার একটা সুষ্ঠু সমাধান যাতে হয় সে চেষ্টা যে নেপাল করবেন এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক