You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
৩০শে জানুয়ারী, ১৯৭৩, মঙ্গলবার, ১৬ই মাঘ, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ

কৃষি বিপ্লব কৃষক সংগঠনের উপর নির্ভরশীল

বাংলাদেশ কৃষক লীগের কাউন্সিল অধিবেশন গত রোববার ঢাকায় ইসলামিক একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্বমন্ত্রী ও কৃষক লীগের সাংগঠনিক কমিটির সদস্য জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত একটি মূল্যবান ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি উল্লেখ করেছেন—কৃষি সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার উপর। একমাত্র কৃষকদের সমস্যার সমাধান হলেই জাতির আর্থিক মেরুদন্ড শক্তিশালী হতে পারে। কৃষকদের উন্নতিই জাতির সত্যিকার উন্নতি। মূলতঃ জাতীয় জীবনে কৃষক লীগের এই সম্মেলন অত্যন্ত মূল্যবান। এর গুরুত্ব আমাদেরে দেশের কৃষক আন্দোলনকে এগিয়ে নেবে। বাংলাদেশ যেহেতু কৃষিপ্রধান দেশ সেহেতু এর মূল আর্থিক কাঠামো কৃষির উপর নির্ভরশীল। এদেশের বিপ্লব সংঘটিত হওয়া উচিত কৃষিক্ষেত্রে। এবং কৃষকদের দ্বারা সে বিপ্লব গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে ইতিপূর্বেও আমরা আমাদের বক্তব্য প্রকাশ করেছি। এ দেশ যেহেতু শিল্পায়িত দেশ নয় এবং শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপ্লবও যেহেতু এদেশে সম্ভব নয় সেহেতু দেশের মূল বিপ্লব ও তার সার্থক রূপশ্রী নিহিত রয়েছে কৃষি বিপ্লবের মধ্যে। দেশব্যাপী কৃষি আন্দোলন গড়ে তোলা যদি না হয় তাহলে দেশের আর্থিক পরিবর্তনের সাথে গোটা জাতীয় জীবনের পরিবর্তন অসম্ভব। বাংলাদেশ কৃষক লীগকে এ ব্যাপারে বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধনের জন্যে কৃষক আন্দোলন আজ অপরিহার্য। রাজস্বমন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত তার বক্তৃতায় বলেছেনে—কৃষকদের জীবনের উন্নতির জন্যে কৃষি উন্নয়ন পূর্বশর্ত—তার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় উন্নতি নিহিত রয়েছে কৃষি জীবনের উন্নতির মধ্যে। আমাদের দেশের শতকরা পঁচাশি জন যেহেতু কৃষক সেহেতু কৃষকদের জীবনের উন্নতি ছাড়া জাতীয় উন্নতি অকল্পনীয়। কর্তৃপক্ষ কৃষকদের উন্নতির জন্যে যে সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করুন না কেন কৃষি জীবনের উন্নতির প্রায় সবটুকুই নির্ভর করছে কৃষক সংগঠনের আত্মনির্ভরশীলতার আন্দোলনের উপর। কৃষি সংগঠন যদি ব্যাপক ও সংঘবদ্ধ না হয় তাহলে কৃষি ক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পিছিয়ে যেতে বাধ্য। আমাদের দেশের কৃষি খাতে সরকার অন্যদিকের চাইতে বেশী বরাদ্দ করেছেন। এতে সমস্যার সুরাহা হতে পারেনা। সরকারী প্রচেষ্টাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে দরকারী কৃষি সংগঠন এবং আদর্শ কৃষক। যারা বিভিন্ন আধুনিক ও কারিগরি কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তনের জন্যে আন্দোলন করবে এবং কৃষকদের মানসিকতা গড়ে তুলবে। কিন্তু আমরা সেই কৃষি বিপ্লব সাধনের সরকারী ইচ্ছা পূরণের মতো কৃষক সংগঠনের অভাব লক্ষ্য করছি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষক লীগের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে এবং তারা সেই দূরদৃষ্টি নিয়ে যেমন সংগঠন মজবুত করবেন তেমনি কৃষিক্ষেত্রেও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে জোরদার করবেন বলে আমরা আশা রাখি।
০০০

তার কন্ঠে আরব বিবেক কথা কয়

সে বিবেক সোচ্চার ছিলো, তার ভাষাও ছিলো, প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটেছে বাংলার মাটিতে সাম্প্রতিক কালে। বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামেও আরব বিশ্বের এই বিবেকের কন্ঠ আমরা শুনেছি, দেখেছি অত্যাচার, নির্যাতন ও ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাঁর প্রবল ধিক্কার। মিসরের আধাসরকারী আল আহরাম পত্রিকার সম্পাদক এবং আধুনিক মিসরের জনক পরলোকগত জামাল আব্দুল নাসেরের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বান্ধব জনাব হাসনাইন হেইকলের নেতৃত্বাধনী এক সাংবাদিক প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই তারা বঙ্গবন্ধু সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আরব বিশ্ব যে বাংলাদেশের বাস্তবতা থেকে আর চোখ ফিরিয়ে নেই একথা তাদের এই আলোচনাসমূহ থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনাব হেইকল সমর্থন জানিয়েছিলেন। বলিষ্ঠ কন্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। জনাব হেইকল সম্প্রতি বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামকালীন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্বন্ধে আরব বিশ্বের অজ্ঞতার ফলেই সেখানকার জনগণের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। বস্তুতঃ পাকিস্তানী অপপ্রচার সেখানকার জনগণকে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো। পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিকবাদী চরিত্রের চাইতেও যা সেখানকার লোকের সামনে বড় করে তোলা হয়েছিলো তা হলো পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। আনুপূর্বিক ঘটনাটা বিশ্লেষণ না করে মধ্যপ্রাচ্যের সহজ সরল মুসলিম জনসাধারণকে যা বোঝান হয়েছিলো তা ছিলো একপেশে, ধর্মান্ধতার সংকীর্ণতায় আচ্ছন্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করবার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সাময়িকভাবে তা আরব জনসাধারণকে বিভ্রান্তও করেছে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে বেশ ক’টি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ থেকে নানা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আগমন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বাস্তব পটভূমি আরব জনগণের নিকট উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই তিমিরাচ্ছন্ন চিন্তা চেতনারও পরিবর্তন ঘটেছে। কিছুদিন পূর্বে মিসরের একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।
বাংলাদেশের বাস্তব রাজনৈতিক অবস্থা এর অগ্রযাত্রা ও এর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রসমূহ স্বাধীনতা-উত্তরকালে এগিয়ে এসেছেন বান্ধবের অনুভূতি নিয়ে। সংগ্রামী আরব বিশ্বের সঙ্গে রয়েছে আমাদের সহানুভূতির বন্ধন। সেখানকার জনগণের ইচ্ছেকে মেনে নিয়ে আরব রাষ্ট্রসমূহ যত শীঘ্রই বাংলাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নেবেন আমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার পক্ষে তা ততই অনুকূল বলে বিবেচিত হবে। শুধু কথার সহানুভূতি নয়, কার্যক্ষেত্রে এর প্রতিফলন চাই। আরব বিশ্বের বিবেক যা অনুভব করেন, আরব রাষ্ট্রসমূহের সরকার তা অনুধাবন করবেন এ আশা এবং বিশ্বাস শান্তিকামী প্রগতিশীল বিশ্ববাসীর।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!