ফুলবাড়ি আক্রমণ
দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুর থানা ও বিরামপুর থানার মধ্যবর্তী ফুলবাড়ি থানা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে (আনুমানিক) দিনাজপুর থেকে পলায়নমান পাকিস্তানি সৈন্যদের ১টি দল ফুলবাড়িতে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। শত্রুর এ প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর মিত্র বাহিনী সহকারে আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিবাহিনীর কাটলা ক্যাম্পে এসে যুদ্ধের একটি পরিকল্পনা মুক্তিবাহিনীকে জানায়।
ফুলবাড়িতে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মুক্তিবাহিনীর ১টি দলকে আফতাবগঞ্জ এলাকায় অবস্থান নেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। মুজাহিদ হাবিলদার আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে ২০জন মুক্তিযােদ্ধার ১টি দল রাতের আঁধারে আফতাবগঞ্জ চলে আসে এবং ফুলবাড়িতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যদের উপর আক্রমণের নিমিত্তে। অগ্রসর হতে থাকে। খবর পেয়ে শত্রুপক্ষ মুক্তিযােদ্ধাদের সম্ভাব্য অবস্থান লক্ষ্য করে প্রচণ্ড মর্টার ও আর্টিলারি ফায়ার দিতে থাকে। অন্যদিকে, মুক্তিযােদ্ধারা কাটলা ক্যাম্প ও মােহনপুর এলাকা থেকে ফুলবাড়ির দিকে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের উপর চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করেন। মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড আর্টিলারি ও মর্টার সমর্থন নিয়ে মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ি সিও অফিস এলাকায় শত্রুর ঘাঁটির উপর আক্রমণ করে ফুলবাড়িকে শক্রর কবল থেকে মুক্ত করে। ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ি এলাকা সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয়। এ যুদ্ধে শক্রর প্রায় ১৫-১৭জন সেনাকে হত্যা করা হয় এবং ১০-১৫জন সৈন্য মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গােলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য হতাহত হন।
দিনাজপুর শহর আক্রমণ
রংপুর ও নীলফামারী জেলার পশ্চিমে এবং ঠাকুরগাঁও জেলার পূর্বে ও পঞ্চগড় জেলার দক্ষিণে অবস্থিত সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুর। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর ২টি কোম্পানি ও ভারতীয় ২টি ব্যাটালিয়ন দিনাজপুর আক্রমণ করতে অগ্রসর হয়। দিনাজপুরের কাছে গিয়ে কাঞ্চন নদী পার হয়ে মুক্তিযােদ্ধারা দিনাজপুর আক্রমণ করেন। এখানে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের অনেকক্ষণ যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনীর ৩০-৩৫জন শহিদ ও ১০-১২জন নিখোঁজ হন। পরে মুক্তিযােদ্ধারা সেখান থেকে পিছু হটেন। ফেরার পথে দশমাইল নামক স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরেকটি ডিফেন্সের উপর আক্রমণ করা হয়। এখানে মুক্তিযােদ্ধারা (সম্মিলিত বাহিনী) ২৩জন শত্রুকে জীবিত ধরেন এবং প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করেন।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – পঞ্চম খন্ড