You dont have javascript enabled! Please enable it!
কাঞ্চন সেতু অবস্থানে আক্রমণ
দিনাজপুর জেলার সদর থানা থেকে পূর্ব দিকে একটি রেলসেতুর নাম কাঞ্চন সেতু। পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর শহরে প্রবেশের জন্য একমাত্র রেললাইনটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। শত্রুর ভারী অস্ত্র, গােলাবারুদ ও রসদপত্র ট্রেনযােগে দিনাজপুরে আনা হতাে এবং এখান থেকেই বিভিন্ন ছােটো ছােটো অবস্থানে। বিতরণ করা হতাে। সেই কারণে পাকিস্তানিসৈন্যরা কাঞ্চন ব্রিজে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের এ সুগম যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। স্বাভাবিকভাবে এ পরিকল্পনায় কাঞ্চন ব্রিজ ধ্বংস করা। বিশেষ গুরুত্ব পায়। ১৯৭১ সালের ৪-৫ জুলাই মেজর নাজমুল হকের কমান্ডে মুক্তিবাহিনীর। একটি দল কাঞ্চন ব্রিজের উপর অবস্থানরত শত্রুর উপর আক্রমণ করে। সুবেদার মেজর আবদুর রব (৮ নম্বর উইং) পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থান কাঞ্চন। সেতু এলাকা রেকি করে আসার পর রাত দেড়টায় মুক্তিবাহিনী ২ ইঞ্চি মর্টার, এলএমজি, এসএলআর দ্বারা শত্রুর উপর আক্রমণ করলে উভয় পক্ষে তুমুল। সংঘর্ষ বেধে যায়। পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মুক্তিবাহিনী পিছু হটে যায়। এ যুদ্ধে কোনাে পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।
তীরগুলা আক্রমণ
দিনাজপুর জেলার সদর থানার অন্তর্গত মণিপুর এলাকায় তীরশুলা নামক স্থানে পুকুর পাড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে তারা তীরগুলার পুকুর পাড়ে শক্ত ঘাটি গড়ে তােলে। এখান থেকে শক্ররা নিরীহ জনসাধারণসহ মুক্তিবাহিনীর উপর আঘাত হানে এবং নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। তীরশুলা স্থানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ না হলেও শক্রর প্রভাব  বিস্তারের জন্য এ ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়। তীরশুলা থেকে শত্রু উচ্ছেদের জন্য মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণের পরিকল্পনা। করেন। ভারতস্থ কাটলা ও আঙ্গিনাবাদ ক্যাম্পের মুক্তিযােদ্ধারা সম্মিলিতভাবে তীরশুলা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন কাটলা মুক্তিফৌজ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুজাহিদ আ ল ম ফজলুর রহমান এবং আঙ্গিনাবাদ ক্যাম্পের ইনচার্জ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপটেন থাপা। আগস্ট মাসে মুক্তিযােদ্ধারা তীরশুলা শত্রু ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং মুক্তিযােদ্ধারা তীরগুলা শত্রুমুক্ত করেন।
চিন্তামন আক্রমণ
দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি থানার অন্তর্গত চিন্তামন একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী চিন্তামন গ্রামের ডাকবাংলােয় ঘাঁটি স্থাপন করে। ইপিআর-এর নায়েব সুবেদার মাে. আনােয়ার হােসেনের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সৈন্যদের চিন্তামন ঘাটি আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় ইপিআর ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে চিন্তামন ক্যাম্প আক্রমণ করা হয়। ইপিআর ও মুক্তিযােদ্ধার ১ প্লাটুন সদস্যকে ঐ ঘাটিতে আক্রমণ করার জন্য কাটলা মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্প থেকে পাঠানাে হয়। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণ রচনা করেও শক্রর পালটা আক্রমণের মুখে আক্রমণকারী প্লাটুনটি পিছু হটে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ২জন হিন্দু সদস্য শক্রর হাতে ধরা পড়েন। পরবর্তী সময় তাদের মেরে ফেলা হয়।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – পঞ্চম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!