You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযােদ্ধাদের দ্বারা সৃষ্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস (আইএমএস) সম্পর্কে পিএসসি’র মন্তব্য - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযােদ্ধাদের দ্বারা সৃষ্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস (আইএমএস) সম্পর্কে পিএসসি’র মন্তব্য

বিশেষ বাহক মারফত

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন

৯৭ তােপখানা রােড

(চামেলী হাউস)

ঢাকা-২

নম্বর এস, ইআর-২-১৫/৮২/২৪০১ পিএসসি          তারিখঃ ১৫-৬-১৯৮২

প্রেরক : শেখ আনওয়ার আহমদ

              সচিব

               বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন

প্রাপক : সচিব

সংস্থাপন বিভাগ

বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

(দৃষ্টি আকর্ষণ রিক্রুটমেন্ট শাখা)

বিষয় : আইএমএস ক্যাডার বিলুপ্ত করিয়া ক্যাডারভুক্ত অফিসারদের অন্যান্য ক্যাডারে আত্মীকরণ প্রসঙ্গে

জনাব,

আদিষ্ট হইয়া উপরােক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ২৪-০৫-৮২ তারিখে লিখিত এস এ আর ২-১৫/৮২/২০৯৩-পিএসপি নম্বর চিঠির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জানাইতেছি যে, বিগত ১০-৬-৮২ তারিখ এবং ১৪-৬-৮২ তারিখে সংস্থাপন বিভাগ, শিল্প বিভাগ এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের প্রতিনিধিদের সহিত কমিশনের এই বিষয়ে বিশদ আলােচনা হইয়াছে। আলােচনার সময় আইএমএস গঠন সংক্রান্ত ১৯৭৩ সালের রেগুলেশন, ১৯৭৬ সালে জারিকৃত ইহার গঠন ও নিয়ােগবিধি এবং অন্যান্য যেসব কাগজপত্র সংস্থাপন বিভাগ এবং শিল্প বিভাগ হইতে সরবরাহ করা হইয়াছে সেইগুলি পরীক্ষা করিয়া দেখা হয়। এই পরীক্ষার সময় দেখা যায় যে, ১৯৭৬ সালে আইএমএস গঠন ও নিয়ােগবিধি জারি করা হয় অথচ তাহার ৩ বৎসর আগে অর্থাৎ ১৯৭৩ সালেই আলােচ্য সার্ভিসে লােক নিয়ােগ করা হয়। ইহাও প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত নিয়ােগবিধি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সহিত আলােচনা ব্যতীতই জারি করা হইয়াছে যদিও সংবিধানের ১৪০(২) অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী কমিশনের সহিত আলােচনার পরই নিয়ােগবিধি জারি করা প্রয়ােজন ছিল।

Page 582

২। কোন সম্মিলিত পরীক্ষার মাধ্যমে যখন কোন ক্যাডারে লােক নিয়োেগ করা হয় তখন মেধা, বিভিন্ন ক্যাডার/পদের জন্য প্রার্থীর পছন্দ এবং সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোটার ভিত্তিতে কমিশন বিভিন্ন পদ/ক্যাডার সার্ভিসে প্রার্থী মনােনয়ন করিয়া থাকেন। কিন্তু আলােচ্য ক্ষেত্রে কমিশন শুধু মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করিয়া মেধাতালিকা প্রণয়ন করিয়াছিলেন। কমিশনকে উক্ত দুই দিনের আলােচনার সময় বলা হয় যে, একটি সেক্রেটারীস্ কমিটি বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস ও পদে নিয়ােগের জন্য প্রার্থী মনােনয়ন করিয়াছিলেন। কোন বিধি এবং কি পদ্ধতি অনুযায়ী আলােচ্য কমিটি প্রার্থী মনােনয়ন করিয়াছেন তাহা বুঝা যাইতেছে না। এইভাবে প্রার্থী মনােনয়ন এবং নিয়ােগ নিশ্চিতভাবে ব্যতিক্রমধর্মী ও অস্বাভাবিক। ইহাতে প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে প্রার্থী নির্বাচন সংক্রান্ত সংবিধানের ধারাও লংঘিত হইয়াছে। রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা আইনে এই সকল পদকে কমিশনের আওতা বহির্ভূত করা হইয়াছে কি না তাহাও কমিশনের জানা নেই।

৩। কমিশন এখানে উল্লেখ করিতে চান যে, যখনই এই রকম অনিয়মিত নিয়ােগ করা হয় তখনই ব্রিবতকর অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয়। পরবর্তীকলে এই জটিলতার নিরসন দুরূহ হইয়া পড়ে।

৪। ১৯৭৩ সালের রেজুলেশন, ১৯৭৬ সালের নিয়ােগবিধি এবং নিয়ােগপত্র পরীক্ষান্তে আরাে দেখা যায় যে, এই গুলিতে পরস্পরবিরােধী নিয়মাদি রহিয়াছে। আইএমএস-এ নিযুক্ত কর্মকর্তাগণ ব্যক্তিগতভাবে স্থায়ী হইয়াছেন এবং বিভিন্ন সময়ে কীভাবে তাহাদের সরকারি চাকুরিতে নিযুক্ত করা হইয়াছে এবং বেতন বৃদ্ধি করা হইয়াছে তাহা স্পষ্ট নয়। আইএমএস কর্মকর্তারা সরকারি কর্মকর্তা কি না সে সম্পর্কেও আলােচনা হয়। কারণ বিধিগুলাের কোন কোন জায়গায় এমন সব বক্তব্য রহিয়াছে যাহা নিয়মিত ক্যাডার বা যে কোন সরকারি চাকুরির বিধিতে কখনােই সংযােজিত থাকে না। যেমন- (১) ১৯৭৩ সালের রেজুলেশনে উল্লেখ করা হইয়াছে যে সকল বাস্তব কারণে তাহারা সরকারি কর্মকর্তা বলিয়া গণ্য হইবেন (to intents and purposes)। সরকারি কর্মচারীদের বেলায় এইরূপ উল্লেখ থাকে না; (২) ১৯৭৬ সালের নিয়ােগবিধি অনুযায়ী তাহাদিগকে শুধু কর্পোরেশনে নিয়ােগ করা হইবে এবং কর্পোরেশনের উচ্চতর পদে পদোন্নতির জন্য তাহারা যােগ্য হইবেন। আইএমএস-এ নিযুক্ত কর্মকর্তারা যে প্রকৃতই সর্ব অর্থে সরকারি কর্মচারী সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়ােজন। অবশ্য সরকার যদি তাহাদিগকে নিয়মিত সরকারি চাকুরে বলিয়া গ্রহণ করিতে চান।

৫। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষান্তে মনে হয় যে, কর্পোরেশনগুলাের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সরকার একটি বিশেষ স্বতন্ত্র সার্ভিস গঠন করিয়াছিলেন। এই সার্ভিসে নিযুক্ত ব্যক্তিদের শুধু কর্পোরেশনে নিযুক্ত করা হইবে। তবে মাত্র একবারই এই সার্ভিসে লােক নিয়ােগ করা হইয়াছিল এবং তাহাও নিয়ােগবিধি প্রণয়নের অনেক পূর্বে। ১৯৭৩-এর পরে এই সার্ভিসে কোন নিয়ােগ করা হয় নাই। দীর্ঘকাল আলােচনার পর সরকার বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন বিসিএস ক্যাডার গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে উহার নিয়মাবলি প্রণয়নও সমাপ্ত করা হইয়াছে। এই দীর্ঘকালের মধ্যে কখনই আইএমএস নামক সার্ভিসের বিষয় কখনও আলােচনায় উত্থাপিত হইয়াছে বলিয়া কমিশন অবগত নহেন এবং আইএমএস সমন্বিত বিসিএস-এর

Page 583

অন্তর্ভুক্ত নহে। সুতরাং অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের ন্যায় আইএমএস-কে নিয়মিত ক্যাডার সার্ভিস হিসেবে গণ্য করা যায় না।

৬। কি কারণে এখন আইএমএস বিলুপ্ত করার প্রশ্ন উঠিয়াছে তাহা কমিশন অবগত নহেন। আইএমএস অফিসারদের অভিমত ভিন্ন ধরনের। বিসিএস-এর বিভিন্ন ক্যাডারে তাহাদের আত্মীকরণ করিলে সংশ্লিষ্ট বিসিএস ক্যাডারের চাকুরির মান হ্রাস পাইবে এবং ঐসব ক্যাডারে যাহারা নিয়ােজিত আছেন তাহাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হইবে। সুষ্ঠু প্রশাসনব্যবস্থার খাতিরে এইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হইবে না।

৭। উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, আইএমএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিসিএস ক্যাডারে আত্মীকরণ করা হইলে এইরূপ আত্মীকরণের দাবি অন্যান্য চাকুরিতে বিযুক্ত ব্যক্তিদের তরফ হইতেও উঠিতে পারে। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সুপিরিয়র পদ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে নিয়ােগের জন্যও প্রার্থী মনােনয়ন করা হয়েছে। জানা যাইতেছে যে, তাহাদের তরফ হইতেও বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে আত্মীকরণের দাবি উঠিয়াছে। কাজেই বিভিন্ন বিসিএস ক্যাডারে আইএমএস কর্মকর্তাদের আত্মীকরণের ফলে অন্যত্র ইহার কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে তাহা দেখা দরকার।

৮। উপরের বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এই অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন যে, আলােচ্য সমস্যা সমাধান কল্পে সরকার নিম্নে বর্ণিত যে কোন একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারেন:

(১) যে কারণে আইএমএস গঠন করা হইয়াছিল সে কারণ এখনও বলবৎ থাকিলে কর্পোরেশনসমূহে নিতর হইতে উচ্চতর পর্যায়ে পদ সৃষ্টির মাধ্যমে এইরূপ একটি স্বতন্ত্র সার্ভিস তাহাদের জন্য চালু রাখা এবং ইহাতে নিয়মিত নিয়ােগ অব্যাহত রাখা;

(২) সরকার যদি মনে করেন কর্পোরেশনগুলির জন্য একটি স্বতন্ত্র সার্ভিস বহাল রাখার প্রয়ােজন নাই তবে আইএমএস-এ নিয়ােজিত ১৯৬ জন কর্মকর্তাকে এককালীন ভিত্তিতে বিভিন্ন কর্পোরেশনে আতীকরণ করা। আইএমএস-এর কর্মকর্তারা যদি সরকারি কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃত হন তবে তাহারা সরকারি কর্মচারির মর্যাদায় তথায় নিয়ােজিত থাকিবেন এবং কর্পোরেশনের উচ্চতর পদে পদোন্নতিরও সুযােগ পাইবেন। পানি উন্নয়ন বাের্ড/বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ডে বিলুপ্ত বিদ্যুৎ ও সেচ পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়ােজিত আছেন এবং তাহারা অদ্যাবধি সরকারি কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হইতেছেন। এই ব্যবস্থার ফলে আইএমএস কর্মকর্তাগণ যে অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ লাভ করিয়াছেন তাহারও সুষ্ঠু প্রয়ােগ সম্ভব হইবে।

(৩) যদি সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন আইএমএস ক্যাডার বিলুপ্ত করিয়া বিসিএস ক্যাডারে তাহাদের আত্মীকরণ করা হইবে তবে বিসিএস (ইকনমিক এন্ড ট্রেড) ক্যাডারের অধীনে (ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট) নামে একটি সাব-ক্যাডার সৃষ্টি করিয়া উক্ত ক্যাডারে তাহাদের আত্মীকরণ করা যাইতে পারে।

বিনীত

স্বাঃ/জা, আহমদ

সচিব

[হুবহু সংযুক্ত]

Source: মুজিব বাহিনী থেকে গন বাহিনী ইতিহাসের পুনর্পাঠ – আলতাফ পারভেজ