You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974 | ভাত দে হারামজাদা - চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষকালে খ্যাতি পাওয়া রফিক আজাদের কবিতা - সংগ্রামের নোটবুক

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষকালে খ্যাতি পাওয়া রফিক আজাদের কবিতা

ভাত দে হারামজাদা

রফিক আজাদ

ভীষণ ক্ষুধার্ত আছি: উদরে, শরীরবৃত্ত ব্যেপে

অনুভূত হতে থাকে-প্রতিপলে-সর্বগ্রাসী ক্ষুধা

অনাবৃষ্টি-যেমন চৈত্রের শস্যক্ষেত্রে জ্বেলে দ্যায়

প্রভূত দাহন-তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ

দু’বেলা দু’মুঠো পেলে মােটে নেই অন্য কোন দাবি

অনেকে অনেককিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়;

বাড়ি, গাড়ি, ‘টাকা কড়ি-কারাে বা খ্যাতির লােভ আছে

আমার সামান্য দাবি পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-

ভাত চাই-এই চাওয়া সরাসরি-ঠান্ডা বা গরম

সরু বা দারুণ মােটা রেশনের লাল চাল হ’লে

কোন ক্ষতি নেই-মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাই;

দু’বেলা দু’মুঠো পেলে ছেড়ে দেবাে অন্য-সব দাবি।

অযৌক্তিক লােভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা

চাইনিতাে: নাভি নিম্নে পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক;

যে চায় সে নিয়ে যাক—যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও

জেনে রাখাে: আমার ওসবের প্রয়ােজন নেই।

যদি না মেটাতে পারাে আমার সামান্য এই দাবি

তােমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘটে যাবে

ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন কানুন-

সম্মুখে যা কিছু পাবাে খেয়ে যাবাে অবলীলাক্রমে:

থাকবে না কিছু বাকি-চলে যাবে হা ভাতের গ্রাসে।

যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে তােমাকে ধরাে পেয়ে যাই-

রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে।

সর্বপরিবেশগ্রাসী হলে সামান্য ভাতের ক্ষুধা

ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে নিমন্ত্রণ করে।

দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে

অবশেষে যথাক্রমে খাবাে: গাছপালা, নদী-নালা

গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত

চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব-প্রধান নারী

উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ি

আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ

ভাত দে হারামজাদা

তা না হলে মানচিত্র খাবাে।

(রফিক আজাদ; জন্ম: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল; এই কবিতা লিখে মুক্তিযােদ্ধা এই কবিকে তৎকালে আত্মগােপনে যেতে হয়েছিল।)

Source: মুজিব বাহিনী থেকে গন বাহিনী ইতিহাসের পুনর্পাঠ – আলতাফ পারভেজ