মুজিব বাহিনী থেকে রক্ষীবাহিনী : পটভূমি, বিকাশ ও বিস্তৃতি
Intro: মুজিব বাহিনীর সদস্যভুক্তির জন্য সর্বাধিনায়ক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে শেখ ফজলুল হক মণি’র প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেই শপথনামা পাঠ করা হতাে। তথাপি ‘মুজিবনগর সরকারের’ শুরু থেকেই কিছুটা ভিন্ন পথে তাদের যাত্রা যা স্বাধীন বাংলায় ধীরে ধীরে বটবৃক্ষে পরিণত হয়। বিস্তারিত লিংকে –
Though the Mujib Bahini didn’t declare any submission to the Mujibnagar Govt they were spirited and affiliated with Sheikh Mujib. Henceforth, political complexities developed even after their conversion into Rakkhi Bahini. This article tried to add few basic words on the issue.
ক. ভারতে মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণের প্রধান দিক :
রাজনৈতিক প্রশাসন দখল ও কমিউনিস্টদের মােকাবেলা
এই বাহিনীর (মুজিব বাহিনীর) সদস্যভুক্তির জন্য সর্বাধিনায়ক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে শেখ ফজলুল হক মণি’র প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেই শপথনামা পাঠ করা হতাে।
-মঈদুল হাসান, মূলধারা ‘৭১, পৃ. ৭১
আমরা যখন শিবপুরে (নরসিংদী) পাক বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করে চলেছি তখন ভারতের মাটিতে আওয়ামী লীগের একটা মহল থেকে আমাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় এক গভীর ষড়যন্ত্র। …সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিএলএফ-এর একটি দল শিবপুরে আসে। এই দলের সঙ্গে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল। তাদের গােপন উদ্দেশ্য ছিল মান্নান ভাইকে (আবদুল মান্নান ভূইয়া) হত্যা করা। কিন্তু শিবপুরে এসে এবং আমাদের কার্যক্রম দেখে তারা বুঝতে পারে- মান্নান ভাইকে হত্যার কোন রকম প্রচেষ্টা নিলে তারা কেউ আর শিবপুর থেকে ফিরে যেতে পারবে না ।
-হায়দার আকবর খান জুনাে, মুক্তিযােদ্ধা৩২৯
…………………………………………………………………
৩২৯) ১৯৭১ সালে দেশের অভ্যন্তর থেকে স্ব-উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ গড়ে তােলার যেসব প্রচেষ্টা ছিল তার মধ্যে নরসিংদী জেলার শিবপুরের অভিজ্ঞতা অনন্য। কমউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটি”-এর পরিচালনায় এখানে বিশাল এক মুক্তাঞ্চল গড়ে উঠেছিল আবদুল মান্নান ভূইয়া, হায়দার আকবর খান জুনাে প্রমুখের নেতৃত্বে। বামপন্থীদের এই ধারার অন্যান্য নেতা ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ, রাশেদ খান মেনন ও হায়দার আকবর খান রনাে। দেখুন, একাত্তরের রণাঙ্গন: শিবপুর, দীপ্র প্রকাশন, ঢাকা, ২০০১।
উল্লেখ্য, নরসিংদীতে মুক্তিযুদ্ধের আরেকজন বিখ্যাত সংগঠক ছিলেন ন্যাভাল সিরাজ (পুরাে নাম সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে চাকরি করতেন বিধায় তাকে ন্যাভাল সিরাজ বলা হতাে)। আবদুল মান্নান ভূইয়াদের সঙ্গে সমন্বয় করেই তার বাহিনী যুদ্ধ করছিল। একাত্তরে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার হত্যা চেষ্টা সফল না হলেও যুদ্ধের পর বাহাত্তরের জানুয়ারিতে ন্যাভাল সিরাজ খুন হয়ে যান একই শক্তির হাতে। বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাই তাঁকে মুজিব বাহিনীর কালাে তালিকায় ফেলে দেয়।
Page 210
ইতােপূর্বে (৪.ক ও ৪.ঘ উপ-অধ্যায়ে) বলা হয়েছে, একাত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে মনােযােগ আকর্ষণী একটি ভাষাগত প্রপঞ্চ ছিল সােনার বাংলা’। মুজিব এবং সিরাজুল আলম খান অনুসারীরাই এই জাদুকরী শব্দযুগলের সবচেয়ে উচ্চকিত প্রচারক ছিলেন। যুদ্ধের পর সিরাজপন্থীরা পুরানাে শ্লোগান বদলে নতুন আরেকটি প্রপঞ্চ হাজির করে সমাজ বিপ্লব’ । এবারও তাদের সমাজ বিপ্লব’-এর আওয়াজ বিদ্যুতায়িত করে তােলে শিক্ষাঙ্গনগুলােকে। তবে সিরাজুল আলম খানরা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়ে এসময় নতুন দল গড়ার কাজে নেমে পড়লেও মুজিব বাহিনীতে তাদের ভূমিকা নিয়ে গতানুগতিক বাম শিবিরে তখন বিস্তর প্রশ্ন। মুজিব বাহিনী সংক্রান্ত আলােচনায় যে প্রশ্নগুলাে এসময় খুব যৌক্তিকভাবে উঠছিল, তা হলাে, ভারত কেন মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি এ ধরনের একটি ভিন্ন বাহিনী গঠনে ভূমিকা রেখেছে? তাছাড়া, যাদের নিয়ে এ বাহিনী গড়ে ওঠে তাদের অতীত সম্পর্কে কতটক অবহিত ছিল ভারত কিংবা এরূপ যােগাযােগ কতটা পর্ব থেকে ছিল? ইত্যাদি।
এ লেখায় ইতােমধ্যে দেখানাে হয়েছে, মুজিবের পছন্দকৃত ব্যক্তি ডা. আবু হেনা ও চিত্তরঞ্জন সূতারের মাধ্যমেই ছাত্র-যুবনেতাদের সঙ্গে ভারতের যােগাযােগ ঘটেছিল। সুতরাং আওয়ামী ও মুজিবের প্রতি এদের আনুগত্য ভারতের কাছে ছিল সন্দেহাতীত। ভারতীয় গােয়েন্দারা নিজস্ব সূত্রেও যে যুবনেতাদের সম্পর্কে নিঃসন্দিগ্ধ’ ছিল সে বিষয়ে উবানের ভাষ্য ইতােমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবের অবিসংবাদিত নেতৃত্ব সম্পর্কে চার নেতার মধ্যে কোন দ্বিমত ছিল না। ভারত মনে করেছে এরাই মুজিবের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও শক্তিশালী অনুসারী। তবে সিরাজুল আলম খানদের সমাজতান্ত্রিক অভিলাষ সম্পর্কে ভারত শুরুতে অবহিত ছিল বলে মনে হয় না। কিংবা তারা এটাকে বিপজ্জনক মনে করেনি। শ্রেণিসংগ্রামের ধারণা বর্জিত মধ্যবিত্ত তরুণদের এইরূপ সমাজতান্ত্রিক মনােভঙ্গি এক ধরনের কৌশলগত ভাবালুতা বলেও প্রতীয়মান হয়ে থাকতে পারে। কারণ বরাবরই সিরাজুল আলম খানরা ‘মুজিবের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র কায়েমের আকাঙ্ক্ষা পােষণ করতেন৩৩০ এবং ভারতীয় জাতীয়
……………………………………………………………….
৩৩০) এ বিষয়ে চমৎকার এক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ২০১২ সালের আগস্টে ড. আবুল হােসেন ভূইয়া, যিনি আলাপচারিতার সময় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার ভাষায় : দেরা দুনে বিএলএফ-এর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে যুদ্ধের কলাকৌশল শেখা ছাড়াও সুযােগ পেলেই আমরা আলাপ জুড়ে দিতাম স্বাধীন বাংলাদেশ কী রূপ নেবে সে সম্পর্কে। লক্ষ্য করা যেত মনিরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল তখন বলতাে মুজিব যা বলবেন সেভাবেই গড়ে তুলবাে আমরা দেশ। আরেক গ্রুপ মুজিবের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র গড়ার কথা বলত- এদের নেতা ছিলেন আফতাব আহমাদ। প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে শেষােক্ত বক্তব্যের আবেদন ছিল অপেক্ষাকৃত অধিক। (এটা অস্বাভাবিক নয় যে, ১৬ ডিসেম্বরের পর মনিরুল হক চৌধুরী প্রমুখ মণির অনুসারী হয়েছেন এবং আফতাব আহমাদ প্রমুখ সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে জাসদ গঠন করেছেন। তবে ‘মুজিবের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র কায়েমের কোনাে সুযােগই পাননি তারা। পাশাপাশি এও দেখতে হয়েছে, মনিরুল হক চৌধুরী পরবর্তী জীবনে জেনারেল এরশাদের দলে যােগ দিয়েছেন এবং আফতাব আহমাদ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন-লেখক।)
Page 211
কংগ্রেসেরও সেসময় নিরীহ ধাঁচের এক ধরনের সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি ও ইমেজ ছিল । অনেক পর্যবেক্ষকের দাবি, নিজস্ব ক্যাডারদের সমাজতন্ত্রমুখী শ্রেণি উপাদান মুক্ত রাখার জন্য মুজিব বাহিনীর রিক্রুটমেন্টকারীরা ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। এ প্রসঙ্গে যুদ্ধকালীন যুবশিবিরের মহাপরিচালক এস আর মীর্জা বলেছেন,
..মুজিব বাহিনীতে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, এই বাহিনীতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার ছাড়া কোন গরিব কিংবা চাষী পরিবারের ছেলেদের নেওয়া হয়নি। কোন শ্রমজীবী মানুষকেও এই বাহিনীতে নেওয়া হয়নি। তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল এই আন্দোলন বা যুদ্ধ যাতে বামপন্থীদের হাতে চলে না যায়। সে জন্যই কোন গরিব মজুর, চাষী বা সাধারণ ঘরের মানুষকে নেয়া হয়নি। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের যে গেরিলা বা গণবাহিনী- সার্বিকভাবে যারা ছিল মূলধারার মুক্তিযােদ্ধা, তাদের ৭০ ভাগই ছিল বিভিন্ন শ্রেণীর বিশেষত কৃষক পরিবারের।…মুজিব বাহিনী ছিল ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল একটি বাহিনী।৩৩১
এস আর মীর্জার বক্তব্যের শেষাংশ সম্পর্কে প্রবল ভিন্নমত পােষণ করেও রিত্রটমেন্ট সম্পর্কিত ওইরূপ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পােষণ করেছেন কষ্টিয়ার দৌলতপুরের মুজিব বাহিনী সদস্য জিয়ারুল ইসলাম (পঞ্চম ব্যাচ)। এই বাহিনীতে তিনি রিক্রুট হন নদীয়ার করিমপুরের শিকারপুর ক্যাম্প থেকে। তাকে রিক্রুট করেন কুষ্টিয়ার আবদুল বারী- যার উর্ধ্বতন নেতা ছিলেন নূর আলম জিকু। যুদ্ধ শেষে জিয়ারুল ইসলাম শিক্ষা জীবনে ফিরে যান এবং তারপর সরকারি চাকরিতে। দীর্ঘ পেশাগত জীবন শেষে বর্তমানে অবসরে থাকা জিয়ারুল ইসলাম ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর ঢাকায় প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে শিকারপুর ক্যাম্পের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, মুজিব বাহিনীর সংগঠকরা ক্যাম্পে শুধু শিক্ষিত তরুণদের খুঁজতেন। অন্যদের আলাদা করে রাখা হতাে- যারা আবার সুযােগ পেলেই মুক্তিবাহিনীতে চলে যেত। আর আমাদের, অর্থাৎ মুজিব বাহিনীর জন্য বাছাইকৃতদের বােঝানাে হতাে, এই বাহিনী হবে আলাদা। এটা হবে একটা পলিটিক্যাল গেরিলা ফোর্স। এটা একটা এলিট বাহিনী। এই ফোর্স দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে লড়বে; মূলত মুজিবের বাহিনী হবে। সাধারণ যুদ্ধ তাে সেক্টরভিত্তিক হচ্ছেই…এই বাহিনীর কাজ হবে মুজিবের আদর্শ রক্ষা করা।…শিলিগুড়িতে আমাদের প্রশিক্ষণ-
………………………………………………………………..
৩৩১) এ কে খন্দকার ও অন্যান্য, পূর্বোক্ত, পৃ. ১২০-১২১।
Page 212
পূর্ব যে ব্রিফিং হয় (৫ আগস্ট) সেখানেও সিরাজুল আলম খান দীর্ঘ বক্তৃতায় জানান, এ যুদ্ধের মহানায়ক মুজিব। মুজিবের কারণেই ভারত সাহায্য করছে। আমাদের বাহিনীকে পলিটিক্যাল কাজ করতে হবে। চীন এ যুদ্ধে সমর্থন দেয়নি। অথচ দেশের ভেতরে চীনের বহু সমর্থক রয়েছে। এদের কমব্যাট করতে হবে। এদের মটিভিশন থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে।’
এ পর্যায়ে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর এ টি এম হায়দার বীর উত্তমের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ঢাকার একজন মুক্তিযােদ্ধা সিরাজুল কাদের রাজু’র একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরাও প্রাসঙ্গিক হবে। সিরাজুল কাদের ছিলেন রসায়ন প্রকৌশলী এবং ছাত্রলীগ না করলেও ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় সংগঠকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সূত্রে তার বন্ধু ছিল। মুজিব বাহিনী সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা হলাে :
“কলকাতা থেকে আগরতলা যাই ট্রেনিং নেয়ার জন্য। মেলাঘরে গেলাম। ওখানে দেখা হলাে তােফায়েল, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রব প্রমুখের সঙ্গে। সিরাজুল আলম খান বললেন, ট্রেনিং নেবে, সেততা খুবই ভালাে কথা। তবে আর্মস এন্ড এ্যামুনেশন নিয়ে দেশে ঢােকার পরে যুদ্ধ করাে না। সব কিছু ভাঁজ করে ফেলো পলিথিনে ভরে। দেশ স্বাধীন ইন্ডিয়ায়ই করবে। আমাদের লড়তে হবে মুজিববাদ বিরােধীদের সঙ্গে। তারাও এখন দেশে যুদ্ধ না করে অস্ত্র ডাম্প করছে। তুমি লড়বে মুজিববাদের জন্য। …বেশ তর্ক হয়েছিল সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে। রাগারাগি করেই বেরিয়ে এসেছিলাম সেখান থেকে।”৩৩২
প্রশিক্ষণকালে মুজিব বাহিনীর সদস্যদের কী ধরনের রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়া হতাে সেটাও এ পর্যায়ে বিবেচনাযােগ্য এক জরুরি প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে বিএলএফ-এর অন্যতম জনপ্রিয় মুখ এবং পরবর্তীকালে জাসদ ছাত্রলীগের অন্যতম চুম্বক সংগঠক আ ফ ম মাহবুবুল হক বলেছেন, “বিএলএফ-এর প্রথম ব্যাচ হিসেবে আমাদের সামনে বক্তব্য তুলে ধরা হলাে, ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর্যন্ত অবস্থা থেকে উন্নীত হয়ে ভারত এই অঞ্চলের সামরিক শক্তি হিসেবে আস্থাযােগ্য অবস্থায় এসে পুনরায় দাঁড়িয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরােধী পরাশক্তিদের মােকাবেলা করে এই যুদ্ধে সহযােগিতা করা ও তাকে বিজয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া তার জন্য অসুবিধাজনক হবে না। আমরা যারা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি, তাদের যেমন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে, তেমনি কমিউনিস্টদেরও মােকাবেলা করতে হবে।৩৩৩
……………………………………………………………….
৩৩২) পুরাে সাক্ষাৎকারের জন্য দেখুন, আফসান চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ. ১১১।
৩৩৩) আ ফ ম মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স : একটি পর্যালােচনা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা, সম্পাদনা : মেসবাহ কামাল, গণপ্রকাশনী, ঢাকা, ২০০১, পৃ. ২৬৩। গুরুত্ব বিবেচনায় এই লেখাটি পরিশিষ্টে যুক্ত করা হলাে। দেখুন, সংযুক্তি: দুই।
Page 213
আরেক সংগঠক ও প্রশিক্ষণার্থী আফতাব আহমাদ প্রশিক্ষণকালীন বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলােকপাও করতে গিয়ে বলেন, “মােটিভেশন ক্লাসে এ রকম বলা হতাে, একজন রাজাকারকে যদি তােমরা ধর- তাকে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবে। প্রয়ােজনে তথ্য পেতে কিছু শারীরিক নির্যাতনও করতে পারাে। তথ্য সংগ্রহ শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেবে। আর যদি কোনাে কমিউনিস্টকে ধরাে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণসংহার করবে।৩৩৪
কেবল নিজ উদ্যোগে কমিউনিস্টদের পাকড়াও ও প্রাণসংহারের শিক্ষাই নয় মুজিব বাহিনীর সদস্যরা কমিউনিস্ট কর্মীদের আটক বা নির্মূল করার ক্ষেত্রে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকেও সহায়তা করত। কমিউনিস্ট নেতা হায়দার আকবর খান রনাে এ বিষয়ে জানাচ্ছেন :
…ভারতে চলাফেরা আমাদের জন্য নিরাপদ ছিল না। চীনপন্থী সন্দেহে অনেক ন্যাপ ও কমিউনিস্ট কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। অনেকের কোন হদিসও পাওয়া যায়নি। একবার ত্রিপুরায় কিছু সংখ্যক ন্যাপ কর্মী গ্রেফতার হলে আমরা সিপিএম অফিসে গিয়ে খবরটা জানাই। সিপিএম নেতা কমরেড নৃপেন চক্রবর্তী সঙ্গে সঙ্গে আগরতলায় অবস্থিত আওয়ামী লীগ অফিসে যান এবং শেখ ফজলুল হক মণি’র কাছে এই গ্রেফতারের কারণ জানতে চান। মণি উত্তর দেন, ‘আমরা তাে কিছু জানি না, এটা তাে ভারত সরকার…। নৃপেন চক্রবর্তী বেশ রেগে গিয়েই উত্তর দিলেন, আপনারা খবর না দিলে কি করে ভারত সরকার জানবে কে ন্যাপ, কে কমিউনিস্ট আর কে আওয়ামী লীগ?…দেখুন, এ দেশে থাকতে হলে এ দেশের জনগণের সহযােগিতা নিয়েই থাকতে হবে। সিপিএম এখানকার জনগণকে প্রতিনিধিতু করে। অন্যথায় মাসি- পিসি (অর্থাৎ ইন্দিরা গান্ধী) কেউ আপনাদের রক্ষা করতে পারবে । আশ্চর্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করলাম, নৃপেন চক্রবর্তীর এই। হুমকির পরই আটক ন্যাপ কর্মীরা ছাড়া পান।৩৩৫
স্পষ্টত এখানে এস আর মীর্জা, আ ফ ম মাহবুবুল হক, অধ্যাপক আফতাব আহমাদ এবং হায়দার আকবর খান রনাের বক্তব্য অনেকাংশে মিলে যাচ্ছে। সিরাজুল কাদের রাজু’র অভিজ্ঞতারও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলােতে বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে এভাবে সমাজতন্ত্রীদের মােকাবেলার পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর এটা বলা অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ যে, আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যকার সমাজতন্ত্রের আদর্শিক মিল’ই ভারতকে পূর্ববাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সহযােগিতায় উৎসাহিত করে থাকবে। ভারত স্পষ্টত
…………………………………………………………………
৩৩৪) দুঃসময়ের চালচিত্র : সরাসরি, দৈনিক ইনকিলাব, ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০০০।
৩৩৫) হায়দার আকবর খান রনাে, রাজনীতির কথা প্রসঙ্গে, তরফদার প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০৩, পৃ. ১০৪।
Page 214
পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা, অত্র অঞ্চলে মাওপন্থী বিদ্রোহের বিস্তৃতি প্রতিরােধ এবং তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলাের স্বাধীনতার সংগ্রামকে প্রতিরােধের জাতীয় স্বার্থেই লড়ছিল।
এ প্রসঙ্গে সেই সময়কার একজন বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা কাজী জাফর আহমদ-এর নিম্নোক্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটিও উল্লেখ করা যেতে পারে- যা তিনি বয়ান করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের ১৫ শ খণ্ডে (১৯৮৫; পৃ. ২০২) :
দেশে ফেরার পথে জুনের মাঝামাঝি আগরতলায় আমাকে ভারতের কেন্দ্রীয় গােয়েন্দা সংস্থা ‘র’ আটক করে নিয়ে যায় শিলংয়ের একটি ডাকবাংলােয়। সেখানে আমাকে সাতদিন রাখা হয়। ঘটনাটিকে আমি গ্রেফতার বলবাে না। কেননা কোন খারাপ আচরণ করা হয়নি। কিন্তু সাত দিনব্যাপী অবিরাম প্রশ্নের মাধ্যমে আমাকে ব্যতিব্যস্ত রাখা হয়। আমাকে প্রশ্ন করছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় গােয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান মি, সুব্রামনিয়াম। তিনি অবশ্য সমগ্র ব্যাপারটিকে নিজেদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ আলােচনা হিসেবে বােঝাতে চেয়েছিলেন। এই আলােচনায় দেশের অতীত ও বর্তমান রাজনীতিতে বামপন্থীদের ভূমিকাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ এসেছিল। তিনি বারবার আওয়ামী লীগ ও ভারতের প্রতি বামপন্থীদের মনােভাব সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন।…
বামপন্থা ও বামপন্থীদের প্রতি এইরূপ সতর্ক মনােভাবের আবহেই ‘র’ মুজিব। বাহিনীর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছিল। মাঠ পর্যায়ে মুজিব বাহিনীর সদস্যদের আচরণ থেকেও বিএলএফ-এর প্রশিক্ষণ কারিকুলাম সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। যুদ্ধকালের অভিজ্ঞতা থেকে এ বিষয়ে নবম সেক্টরের স্টাফ অফিসার ওবায়দুর রহমান মােস্তফা লিখেছেন, “মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর যদিও লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, কিন্তু দুই বাহিনীর হাইকমান্ড ভিন্ন থাকায় যুদ্ধকালে মাঝে মাঝে রণক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।…মুক্তিযােদ্ধারা পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে ওদের।খতম করাসহ গােলাবারুদ ও স্থাপনা ধ্বংস এবং অধিগ্রহণ করে নিত। কিন্তু মুজিব বাহিনীর মূল কাজ ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের সৃষ্ট মুক্তাঙ্গনে রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে ও দৃষ্টিকোণ দিয়ে ঐসব এলাকায় বিজয় পরবর্তী বেসামরিক প্রশাসনসহ স্থানীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শগত অবস্থান দৃঢ় করা।…মুক্তিযােদ্ধারা দলমত নির্বিশেষে যুদ্ধ করেছে দেশ শত্রুমুক্ত করতে, বেসামরিক প্রশাসন দখল বা রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তারা নজর দেবার মানসিকতা নিয়ে যুদ্ধ করেনি। মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক প্রভাব অক্ষুন্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সেভাবেই ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করত।৩৩৬
……………………………………………………………….
৩৩৬) ওবায়দুর রহমান মােস্তফা, মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর ও আমার যুদ্ধকথা, ভাস্কর প্রকাশনী, ২০০৭, ঢাকা, পৃ. ১২০।
Page 215
নােয়াখালী অঞ্চলের বিএলএফ সংগঠক আ ও ম শফিক উল্ল্যাহ’র বক্তব্য থেকেও ওবায়দুর রহমান মােস্তফা’র বক্তব্যের সত্যতা মেলে। শফিক উল্লাহ সাক্ষাৎকারে বলছেন, নেতৃস্থানীয় বিএলএফ কমান্ডারদের আমাদের লিডাররা বলতেন, বেশি ঝুঁকি নেয়ার প্রয়ােজন নেই। এমুহূর্তে সিরিয়াস যুদ্ধে involve হওয়া যাবে না। রাজাকার নিধনই যথেষ্ট। ঝুঁকি নেয়ার সময় এলে আমরা তােমাদের বলবাে।…তবে সাধারণ কর্মীদের এসব কথা জানানাে হতাে ।…আমাদের লিডাররা ভাবতেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে।৩৩৭ মুজিব বাহিনীর আরেকজন যােদ্ধা এও জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণকালে তাদের এ রকম ধারণাও দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ভারত কনফেডারেশন গড়ে তুলবে।৩৩৮
উপরিউক্ত বয়ানগুলাে থেকে এই উপসংহারে আসা যায় যে, ভারত মুজিব বাহিনীর মাধ্যমে ন্যূনতম চারটি উদ্দেশ্য অর্জন করতে চেয়েছিল : ১. মুক্তিযুদ্ধকালে এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক-সামরিক ফোর্সকে প্রস্তুত রাখা। ২. যুদ্ধকালে ‘মুক্ত এলাকায় এবং যুদ্ধোত্তর সমাজে ‘স্বাধীন দেশে’-এর রাজনীতি ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব পুরােপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়া। ৩. মুজিব ফিরে না এলে এবং যুদ্ধকালে বা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তাজউদ্দীন ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ প্রজন্ম কোনাে কারণে ব্যর্থ হলে কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করলে সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স হিসেবে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শক্তিকে সে স্থানে অভিষিক্ত করা। ৪. মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। কট্টর ধারার উদীয়মান বামপন্থী শক্তিকে দমন করা এবং যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সাধারণ আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ নির্বিঘ্ন রাখা। এ ছাড়া ভারত সরকার সে সময় এমন একটি তত্ত্ব দ্বারা চালিত হচ্ছিল- বাংলা করলে যার অর্থ দাঁড়ায়, এক বাক্সে সব ডিম রেখাে না।৩৩৯ এই তত্ত্বের
………………………………………………………………..
৩৩৭) আ ও ম শফিক উল্ল্যাহ, পূর্বোক্ত।
৩৩৮) মুজিব বাহিনীর এই যােদ্ধা, মেজর (অব.) রেজা, পরে রক্ষীবাহিনীতেও নিয়ােগ পান। এই লেখার অন্যত্রও তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। মুজিব বাহিনী থেকে রক্ষীবাহিনী পর্যন্ত নানান বিষয়ে ২০১২ সালের জুলাইয়ে ঢাকার ধানমন্ডিতে তার সঙ্গে লেখকের আলাপচারিতা হয়।
দেরা দুনের তান্দুয়া ক্যাম্পের পঞ্চম কোর্সের আরেক প্রশিক্ষণার্থী জিয়ারুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষণকালে আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ নানানভাবে ধারণা দেয়া হতাে যে, বাহিনীটি ইন্দিরা গান্ধীর আশীর্বাদপুষ্ট। যেমন এক সেট শার্ট-প্যান্ট দেয়ার সময় বলা হতাে এটা ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষ থেকে উপহার। কিংবা শরীরচর্চা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে শেষপর্যায়ে এলে বলা হতাে এবার ইন্দিরা গান্ধির নামে একটা ফ্রগ জাম্প দাও তাে, ইত্যাদি। সাক্ষাৎকার, পূর্বোক্ত।
৩৩৯) সাক্ষাৎকার, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (১৫ শ’ খণ্ড), তথ্য মন্ত্রণালয়, ১৯৮৫। প্রায় অনুরূপ মন্তব্য করেছেন সম্প্রতি ভারত থেকে পদ্মভূষণ খেতাবপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানও। তাঁর ভাষায়, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখতে চাননি। বৈধ সরকার ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন সেনাবাহিনীর সমান্তরালে সেই সরকারের প্রকাশ্য সমালােচক একটি সশস্ত্র বাহিনীও তারা গড়ে তােলেন। দেখুন, আমার একাত্তর, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ১৯৯৭, পৃ. ১৫১। উল্লেখ্য, আমিরুল ইসলাম ও আনিসুজ্জামান উভয়ে ছিলেন
যুদ্ধকালে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযােগী ।
Page 216
ধারাবাহিকতা আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের পরও লক্ষ্য করবাে মুজিব বাহিনীর পরবর্তী বিকাশ ধারায়। তাজউদ্দীনকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিলেও ভারতীয়দের কিছু কিছু পরিকল্পনা মুজিব আরও অধিক যত্নের সঙ্গে এগিয়ে নিতে শুরু করেন। এসময় আওয়ামী লীগ ও মুজিবের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐকতানের নানারূপ মূর্ত হয়ে উঠতে শুরু করে। একদিকে পূর্ব-পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাকে ভারতীয় শাসক কংগ্রেসের তাত্ত্বিকরা দ্বিজাতিতত্ত্বের সংশােধন, উপমহাদেশে মুসলিম জাতীয়তাবাদের কাঠামােগত বিপর্যয় এবং পাকিস্তানের এক অংশের ভারতের কাছে প্রত্যাবর্তন হিসেবে যেমন দেখছিলেন তেমনি নেহেরু জ্যাকেটের আদলে ‘মুজিব কোর্ট চালু, পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কংগ্রেসকে পরােক্ষ সহায়তা দিতে মুজিবের সেখানে গিয়ে বক্তৃতার প্রস্তাব, তাঁকে মহাত্মা গান্ধীর মানসপুত্র হিসেবে অভিহিত করা ইত্যাদি ছিল উপরিউক্ত পারস্পরিক আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসেরই বিবিধ প্রকাশ। উল্লেখ্য, ভারতে কংগ্রেস এসময় নেহেরু মডেলের সমাজতান্ত্রিক আবরণে নকশালবাড়ি বিদ্রোহের মূল উৎপাটনে সর্বশক্তি নিয়ােগ করে চলেছে। আর বাংলাদেশেও ঠিক তখনি ‘সমাজতন্ত্র’-এর আওয়াজের মাঝেই ‘নকশালদের মােকাবেলায় রক্ষীবাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসে রক্ষীবাহিনীর আবির্ভাবের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক দিক ছিল এটাই। এটা স্রেফ মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত কোনাে সমস্যা ছিল না।
Source: মুজিব বাহিনী থেকে গন বাহিনী ইতিহাসের পুনর্পাঠ; আলতাফ পারভেজ