৪.খ. ‘জাতীয় মিলিশিয়া’ : বাংলাদেশকে নিরস্ত্র করার প্রথম ব্যর্থ চেষ্টা
স্বাধীনতার সংগ্রাম আমাদের যত গৌরবের বিষয়ই হােক ভারতের শাসক শ্রেণীর কাছে সেটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।… নিজের নিরাপত্তার বিবেচনা থেকে ভারত সব সময় পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার নীতি অনুসরণ করেছে এবং সফল হয়েছে। আমাদের কাছে যা মুক্তিযুদ্ধ ভারতের শাসক শ্রেণীর কাছে সেটা তাদের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।
-ফরহাদ মজহার, গণপ্রতিরক্ষা, ঐতিহ্য, ২০০৬, ঢাকা, পৃ. ৯৪ ও ১০৬।
… the war in Bangladesh between India and Pakistan never really ended on December 16, 1971…
-জেনারেল (অব.) শংকর রায়চৌধুরী, ভারতীয় প্রাক্তন চিফ অব আর্মি স্টাফ (১৮তম) এবং রাজ্যসভার সদস্য২২৯
একাত্তর সালে বাংলাদেশে সংঘটিত সশস্ত্র মূলযুদ্ধের মাঝে অনেকগুলাে উপ-যুদ্ধও চলছিল। আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের জন্য এটা যেমন ছিল পাকিস্তান ভাঙার যুদ্ধ- তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা ছিল কমিউনিজম মােকাবেলার সংগ্রাম; আর সােভিয়েত ইউনিয়নের জন্য এটা ছিল অত্র অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস এবং চীনকে কোণঠাসা করার সুযােগ। বলা বাহুল্য, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শেষ হলেও যুদ্ধরত সকল পক্ষ যে তাদের সশস্ত্র গুটিয়ে ফেলেছে সেটা বলা যায় না। যেমনটি আমরা দেখবাে উপরে ভারতীয় জেনারেল (অব.) শংকর রায়চৌধুরীর উদ্ধৃত মন্তব্যে।
‘ঠান্ডাযুদ্ধ’-এ সক্রিয় আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের মতাে একাত্তরে বাংলাদেশ পক্ষেও ছিল অনেকগুলাে ধারা। তাজউদ্দীন একটি রাজনৈতিক ধারার প্রতিনিধিত্ব
………………………………………………………………
২২৯) দেখুন, Delhi can’t afford to let Dhaka slip off its radar’ The Asian Age, India,
March 24, 2009.
Page 156
করছিলেন; খন্দকার মােশতাক আহমদ এবং মুজিব বাহিনীও একইভাবে পৃথক পৃথক মতাদর্শ ধারণ করে এগােচ্ছিল । বস্তুত তাজউদ্দীন, খন্দকার মােশতাক২৩০ ও মুজিব বাহিনীর সংগঠক- সবাই ছিলেন মুজিবের ঘনিষ্ঠ এবং মুজিব বরাবরই পৃথক পৃথক উপলক্ষ্যে এসব ধারার প্রতিনিধিদের তার পরের গুরুত্ববহ ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করায় তারা সেটাকেই প্রত্যয়নপত্র জ্ঞান করে এগােচ্ছিলেন ।
মুক্তিযুদ্ধকালে এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়েও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এসব ধারার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিরােধী এবং তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ধারাগুলাের আন্তঃ সম্পর্ক আলাদাভাবে পূর্ণাঙ্গ গবেষণার দাবি করে। এর মধ্যকার তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ধারার সঙ্গে মুজিব বাহিনীর যুদ্ধকালীন দ্বন্দ্ব-বিরােধের কিছু ফিরিস্তি ইতােমধ্যে এ লেখায় প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তুলে ধরা হয়েছে। বস্তুত এটাই ছিল যুদ্ধদিনে বাংলাদেশ পক্ষের সবচেয়ে ব্রিবতকর অংশ এবং যুদ্ধের পরও তার প্রবল রেশ জারি ছিল এবং আছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ জীবনে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এসে তাজউদ্দীন আহমদ ও মুজিব বাহিনী সংগঠকদের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছিল জাতীয় মিলিশিয়া গঠন প্রক্রিয়ায়। এই বাহিনী গঠনের জন্য প্রথেমক্তজনের প্রচেষ্টা ছিল খুবই তীব্র। এক্ষেত্রে দ্রুতলয়ে এগােচ্ছিলেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ টি ইমাম লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সকল মুক্তিযােদ্ধাকে একটি জাতীয় মিলিশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।২৩১ কিন্তু মঈদুল হাসান লিখেছেন, ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মন্ত্রিসভা ‘গণবাহিনী২৩২র সকল সদস্যের সমবায়ে জাতীয়
……………………………………………………………….
২৩০) খন্দকার মােশতাক আহমদ (১৯১৮-মার্চ ৫, ১৯৯৬) ছাত্রজীবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযােদ্ধা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশাস্ত্রের এই গ্রাজুয়েট ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক। ছয়দফার আন্দোলনে দীর্ঘদিন শেখ মুজিবের সঙ্গে কারাবরণ করেন। জ্যেষ্ঠতা ও যােগ্যতার বিচারে মুজিবের পর তিনিই আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব পাওয়ার অধিকারী হিসেবে মনে করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং যুদ্ধের পর তাজউদ্দীন আহমদের মতােই তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনাে অভিযােগ শােনা যায়নি। তবে তাদের মাঝে আদর্শিক বিরােধী ও রাজনৈতিক বৈরিতা ছিল তীব্র। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভায় বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী ছিলেন।
২৩১) এইচ টি ইমাম, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১, আগামী প্রকাশনী, ২০০৪, ঢাকা, পৃ. ৩৩৫ ।
২৩২) বর্তমান লেখায় ‘গণবাহিনী’ শব্দটির দু’ ধরনের অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১টি সেক্টরে ও তিনটি ফোর্সের অধীনে থাকা নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধরত সাধারণ যােদ্ধাদের গণবাহিনী বলা হতাে। আবার জাসদ গঠনের পর তাদের যে সশস্ত্র শাখা গড়ে ওঠে তাকেও গণবাহিনী নামেই অভিহিত করা হতাে। জাসদ সম্পর্কিত আলােচনায় আমরা যখন ‘গণবাহিনী’ শব্দটি ব্যবহার করবাে তখন বুঝতে হবে যে তাদের সশস্ত্র শাখার কথা বলা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধকালীন গণবাহিনীর কথা নয়।
Page 157
মিলিশিয়া গঠনের পরিকল্পনা অনুমােদন করে।২৩৩ শেষােক্ত তথ্য প্রমাণ করে, স্বাধীন দেশে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও ভারতে অবস্থানকালেই তাজউদ্দীন মন্ত্রিসভা মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ প্রবাসী সরকার ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল । ফলে ১৮ ডিসেম্বরের যে কোনাে বৈঠক কলকাতাতেই হওয়ার কথা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে মনােযােগ আকর্ষণী দিক ছিল তিনটি : প্রথমত ১১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় মিলিশিয়া বাের্ডে৩৪ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হয়; দ্বিতীয়ত মিলিশিয়া বাহিনী গঠনে মুজিব বাহিনী যাতে বাধা না দেয় সেজন্য জেনারেল উবানকে ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আনা হয়। তবে মিলিশিয়া ধারণাটি সমন্বয় করছিলেন জেনারেল বি এন সরকার। আগেই যেমনটি বলা হয়েছে। তিনি ছিলেন ইস্টার্ন কমান্ডের ডিরেক্টর অব অপারেশনস্। যুদ্ধকালে যার পদবি ছিল ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের ‘সিভিল অ্যাফেয়ার্স লিয়াজো অফিসার এবং যার যুদ্ধপরবর্তী তৎপরতা সম্পর্কে ৪.ক উপ-অধ্যায়ে ইতােমধ্যে আলােকপাত করা হয়েছে- যুদ্ধের পর তিনিই অনেকাংশে বাংলাদেশকে পরিচালনা করছিলেন।২৩৫
তৃতীয়ত জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী সম্পর্কে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঘােষণা প্রকাশ করে (৮ নম্বর সংযুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে) তাতে প্রথমবারের মতাে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে ‘সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি যখন মিলিশিয়া বাের্ডের প্রথম বৈঠক হয় তাতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রিগেডিয়ার আনন্দ স্বরূপ। উপরােক্ত বাের্ডে মুজিব বাহিনীর তরফ থেকে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তােফায়েল আহমেদ ও আবদুর রাজ্জাক। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, মুজিব বাহিনী মিলিশিয়া বাহিনীর কার্যক্রমে সম্মতি
………………………………………………………………
২৩৩) মঈদুল হাসান, মূলধারা ‘৭১, দ্বিতীয় সংস্করণ, ইউপিএল, ২০০৪, ঢাকা, পৃ. ২৩০।
২৩৪) বাের্ডের সদস্যরা ছিলেন মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মনি সিংহ, অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ, মনােরঞ্জন ধর, তােফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, গাজী গােলাম মােস্তফা, রফিক উদ্দিন ভুইয়া, ক্যাপ্টেন সুজাত আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে উপরােক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে সেন্ট্রাল মিলিশিয়া বাের্ড গঠনের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এও সিদ্ধান্ত হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের একজন প্রতিনিধিও থাকবেন সেন্ট্রাল মিলিশিয়া বাের্ডে। প্রথম বৈঠকেই সেই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। একটি দেশের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর এইরূপ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা ছিল বিস্ময়কর।
২৩৫) বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হলে জেনারেল সরকার তাতে প্রথম ভারতীয় মিলিটারি এটাশে হন। অবসর পর্যায়ে তিনি যুক্ত ছিলেন কলকাতার আর কে মিশন ইনস্টিটিউটে।
Page 158
দিয়েছিল। বাহাত্তরের ২৪ জানুয়ারি মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে মুক্তিযােদ্ধাদের এক ক্যাম্পে জড়াে করা, অস্ত্র নিয়ে নেয়া, দেশ গঠনমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রমও শুরু হয়। মিলিশিয়া ক্যাম্পে মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য ভাতারও ব্যবস্থা করা হয়। এসব সত্তেও, মুজিব বাহিনীর তৃণমূল সদস্যরা মিলিশিয়া ক্যাম্পে যােগদানে নিরুৎসাহিত ছিলেন। তারা সরকার কর্তৃক অস্ত্র নিয়ে নেয়ার তৎপরতাকে তাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলার প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করছিল। ফলে কার্যত যা ঘটে, প্রায় প্রতি জেলাতে দ্রুত মুক্তিযােদ্ধাদের দুটি শক্তিকেন্দ্র গড়ে ওঠে। একটি হলাে মিলিশিয়া ক্যাম্প এবং অপরটি হলাে মুজিব বাহিনী। জেলার আর্থসামাজিক নানা বিষয়ে এই দুই শক্তিকেন্দ্র থেকে শক্তি প্রদর্শনের প্রচেষ্টাও শুরু হয়। উপরন্তু জাতীয় মিলিশিয়া’র নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে এ নিয়ে মুজিব বাহিনী ও জাতীয় সেনাবাহিনীর মাঝেও প্রকাশ্য মতদ্বৈততা দেখা দেয় এ সময়।২৩৭ সেই মতদ্বৈততার খােলামেলা ছাপ পড়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় মিলিশিয়া বাের্ডের প্রথম বৈঠকেই। বৈঠকের minutes-এ মুজিব বাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য এভাবে উল্লিখিত হয় :
Mr. Razzak, MPA, agreed that the young fighters must go to the Militia camps. He was also of the view that command of the National Militia should be given to political leaders since most of the freedom fighters were politically motivated…”
অন্যদিকে বৈঠকের অন্যতম আলােচক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেই সময়কার কর্মকর্তা কর্নেল খালেদ মােশাররফের বক্তব্য উল্লিখিত হয় এভাবে :
Col. Khaled Mosharraf, Adviser on behalf of the Mukti Bahini, was of the opinion that the command
…………………………………………………………….
২৩৬) মুজিব বাহিনীর সদস্যদের মিলিশিয়া ক্যাম্পে না যাওয়ার বিষয়ে সমর্থনসূচক বক্তব্য পাওয়া গেছে নঈম জাহাঙ্গীর (জামালপুর) এবং সামছুল আলম খান (মানিকগঞ্জ)-এর কাছ থেকেও। শেষােক্তজন যুদ্ধ করেছেন ১১ সেক্টরে। বর্তমানে জাতীয় কৃষক জোটের প্রশিক্ষণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাসদ গড়ে ওঠার পর তিনি মানিকগঞ্জের গণবাহিনীর নেতৃস্থানীয় সংগঠক ছিলেন। তাঁর ভাষায়: ‘মুজিব বাহিনীর সাধারণ সদস্যরা তখনও নিশ্চিত ছিল না শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত অবস্থায় বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন কি না। তাদের মাঝে শঙ্কা ছিল তিনি ফিরে না এলে এবং তাজউদ্দীন আহমদ তাদের নিরস্ত্র করতে সক্ষম হলে মুজিব বাহিনী দ্রুত রাজনৈতিক কর্তত্ব হারিয়ে ফেলবে। অন্যদিকে নীতিনির্ধারক ও সংগঠক পর্যায়ে অস্ত্রসমর্পণের বিপক্ষে আরও গুরুতর কারণ ছিল। বিশেষত কে এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করবে সে নিয়ে মতভেদ ছিল তীব্র।
২৩৭) মিলিশিয়া বাহিনী কার্যক্রমে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে এসময় সেনাবাহিনীও ফরমেশন কমান্ডারদের বৈঠকের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে।
Page 159
(of the National Militia) should be given to Army officers, who are trained in this type of work and who can discharge the function more effectively.২৩৮
স্পষ্টতই এখানে নীতিগত একটি মীমাংসার চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু মিলিশিয়া বাের্ড তার চূড়ান্ত কোনাে সমাধান দিতে পারেনি। এইরূপ বিবাদের পাশাপাশি মিলিশিয়া ক্যাম্পের ব্যয় নির্বাহে রাষ্ট্রীয় অপারগতার পরিণতিতে২৩৯ বন্দিদশা থেকে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পরই মিলিশিয়া বাহিনীর কার্যক্রম পরিত্যক্ত হয়। অনেক জেলার মতাে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায়ও (পিলখানায়; রাইফেলস-এর কার্যালয়টিই ছিল মিলিশিয়া বাহিনীর কেন্দ্রীয় দপ্তর) মিলিশিয়া কার্যক্রম নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
যে বিবেচনা থেকে এই বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তার রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল ব্যাপক। মূলত মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তােলার প্রক্রিয়ায় দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী মহল চাইছিল মুজিব বাহিনী বহির্ভূত গণচরিত্রের সকল মুক্তিযােদ্ধার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার তথা তাদের নিরস্ত্র করা। ধারণা করা হয়, সে লক্ষ্য অর্জনের পথেই এই বাহিনীতে ভারতীয় প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সরকার। এই কার্যক্রমে সরকারের যুক্তি ছিল-ব্যাপকভিত্তিক অস্ত্র উদ্ধার ও মুক্তিযােদ্ধাদের পুনর্বাসন ছাড়া কোনােক্রমে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে ঘটনাবলির ভিন্ন তাৎপর্যও প্রবল অনুসন্ধানের দাবি রাখে । ইতিহাসের এই সময়টিতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পুরাে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ‘নকশাল আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। ভারতীয়দের আশঙ্কা ছিল (এবং সম্ভবত তাজউদ্দীন আহমদেরও) মুক্তিযােদ্ধা গণবাহিনীর হাতে অস্ত্র থাকলে (যাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৪ হাজার) এটা যেমন একদিকে ভারতীয় নকশালদের হাতে যেতে পারে তেমনি বাংলাদেশেও সশস্ত্র শ্রেণিসংগ্রাম বিকশিত রূপ নিতে পারে । এইরূপ বাস্তবতাতেই মিলিশিয়া বাহিনীর ধারণা পরিত্যক্ত হওয়ার পর রক্ষীবাহিনী গঠন আওয়ামী লীগ
………………………………………………………….
২৩৮) বৈঠকের পুরাে minutes -এর জন্য দেখুন, মঈদুল হাসান, পূর্বোক্ত, পৃ. ৩২৫-৩৩০।
২৩৯) মুজিবের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাহাত্তরের এপ্রিলে মিলিশিয়া ক্যাম্পগুলাে বন্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন তসলিম আহমেদ। ঐ মুহূর্তটিকে ফরিদপুরের একজন মুক্তিযােদ্ধা আবু সাঈদ খান ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে : মিলিশিয়া ক্যাম্প ভেঙে দেয়ার পর মুক্তিযােদ্ধাদের যার যার পুরানাে পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য বলা হলেও অনেকেরই পুরানাে পেশায় ফিরে যাওয়ার কোনাে বাস্তব পরিস্থিতি ছিল না। তাছাড়া যুদ্ধ তাদের মনােজগতে যে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল তার ফলে “আগের জীবনে ফিরে যাওয়া তাদের পক্ষে ছিল প্রকৃতই অসম্ভব। বাহাত্তর-উত্তর রাজনৈতিক সংকটের এটাও এক বড় কারণ।’ আবু সাঈদ খান ফরিদপুরে জাসদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ছিলেন এবং পরে দৈনিক সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হন। তার সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয় ২০১২ সালের ২ নভেম্বর।
Page 160
সরকার ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। আর তার জন্য প্রয়ােজন পড়ে মুজিব বাহিনীর। তবে লে. জে. অরােরা দাবি করেছেন, তাঁরা প্রথমে মুজিব বাহিনী ভেঙে দিতেই চেয়েছিলেন, কিন্তু মুজিবের কারণে তারা সেটা পারেননি।২৪০ নতুন রাষ্ট্রে অনেকগুলাে বাহিনী থাকার পরও রাজনৈতিক চরিত্রের আধা-সামরিক আরেকটি বাহিনী গঠনে মুজিবের বিশেষ আগ্রহ কিংবা সম্মতির পেছনে সেই সময়কার বিশিষ্ট সাংবাদিক এস এম আলী (পরে ডেইলী স্টারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক) একটি বড় কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছেন মুজিবের এইরূপ মনস্তাত্ত্বিক ভয় যে, বামপন্থীরা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিতে পারে। বাহাত্তরের পটভূমিতে এস এম আলী লিখেছেন, “The fear of take-over of the country by militant left forces continues to dominate the thinking of Sheikh Mujibur Rahman.২৪১
ভিন্ন ভঙ্গিতে প্রায় একই ধরনের মূল্যায়ন করেছেন ঐ সময়ের আরেক সাংবাদিক এনায়েতুল্লা খান। তার মতে, মুজিবের জনপ্রিয়তা এক পর্যায়ে ভিন্ন রূপ নিতে শুরু করে- যা অক্ষম ছিল সেই সময়কার অবদমিত জনচেতনাকে মােকাবেলা করতে । ফলে মুজিব ও শাসক গ্রুপ সন্ত্রাসনির্ভর নিয়ন্ত্রণ কাঠামাের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু যুদ্ধোত্তর পুলিশ, সেনাবাহিনী বা অন্যকোনাে প্যারা-মিলিটারি দিয়ে এই আরাধ্য কাজ করানাে সম্ভব ছিল না। কারণ দেশপ্রেমিক যুদ্ধে এদের মনােভঙ্গিতে অনেক পরিবর্তন সূচিত হয়ে যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এরাই প্রথম গড়ে তুলেছিল সশস্ত্র প্রতিরােধ । ফলে নতুন দেশে তারা অন্ধভাবে কোনাে শাসক গ্রুপের নিজস্ব স্বার্থে নিয়ােজিত হবে এমনটি সম্ভব ছিল। এভাবেই শাসকদের কাছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর আনুগত্য প্রশ্নবিদ্ধ এবং সন্দেহের শিকার হয়ে পড়েছিল। যার পরিণতিতে একই শাসকদের প্রয়ােজন পড়ে নতুন একটি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের যে যন্ত্র ঔপনিবেশিক আদলে তাদের স্বার্থকে সুরক্ষা দেবে।”২৪২ কার্যত এভাবেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নতুন এক দফা সম্প্রসারণ ঘটে
……………………………………………………………..
২৪০) দেখুন, লে. জে, অরােরার সাক্ষাত্তার, ফুয়াদ চৌধুরী, বাংলায় অনুবাদ : আহসানুল আলম, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, বিজয় দিবস সংখ্যা, ১৯৯১, ঢাকা, পৃ. ৩৭। উক্ত সাক্ষাৎকারে অরােরা বলেন, “যুদ্ধের পর আমরা মুজিব বাহিনী ভেঙে দিতে চেয়েছিলাম, যেন এ বাহিনীর সবাই আবার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে পারে। এর জন্য পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল । কিন্তু যখন শেখ মুজিব ফিরে এলেন, তখন তিনি মুজিব বাহিনী না ভেঙে একে গড়ে তুলতে চাইলেন। এর জন্য তিনি আমার কাছে যন্ত্রপাতি, গাড়ি ইত্যাদি ভারতীয় সহায়তা চাইলেন।
২৪১) S. M. Ali, ibid, p.194.
২৪০) এনায়েতুল্লা খান অবশ্য উক্তরূপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র হিসেবে কেবল রক্ষীবাহিনীই নয়- ‘লাল বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকেও চিহ্নিত করেছেন। প্রথমােক্ত বাহিনীকে প্যারামিলিটারি ফোর্স বললেও শেষােক্ত দুটিকে বলেছেন, “আধা-আনুষ্ঠানিক প্রাইভেট বাহিনী। বাস্তবে এসব বাহিনী দেশব্যাপী তখন তাদের কার্যক্রম চালালেও সেগুলাের প্রাইভেট’ চরিত্রটি এমন ছিল যে, শাসক গ্রুপের বা শাসক দলের পূর্ণাঙ্গ কোনাে প্রভাব ছিল না কোনাে বাহিনীর ওপর; বরং একেক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতেন ২-১ জন ব্যক্তি মাত্র। এ সম্পর্কে আরাে বিস্তারিত দেখুন, Enayetullah Khan,” ibid, p. 238. উল্লিখিত রচনায় এনায়েতুল্লাহ খান পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশসহ আরও কিছু অভিজ্ঞতার আলােকে তাত্ত্বিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছেন এভাবে: In the socio-political matrix of the Third World, counter- revolution is openly aggressive, because it has to contend with the highest degree of revolutionary potential and, at times, with revolution itself. That is why it is unabashed in its brutality…ibid, p.242
Page 161
রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে।২৪৩ যার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল মুজিব বাহিনী সদস্যদের অস্ত্রসমর্পণের পর পিলখানায় ব্রিফিংকালে ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ইতােমধ্যে সে বিষয়ে ৩.ঙ উপ-অধ্যায়ের শেষে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রক্ষীবাহিনী গঠন যে উপরােক্ত ব্রিফিং ও জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠন প্রচেষ্টারই ধারাবাহিকতা এবং এসবের যে আন্তঃসম্পর্ক ছিল তা অপর একটি বিষয় থেকেও অনুমান করা যায়। জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ক্যাপ্টেন এ. এন. এম. নূরুজ্জামানকে। এই দায়িত্বের ব্যাংক ছিল লে. কর্নেল। মিলিশিয়া ধারণা পরিত্যক্ত হলেও পরবর্তীকালে আমরা দেখবাে জনাব নূরুজ্জামানকেই রক্ষীবাহিনীর প্রধান করা হয়। পেশাগত যােগ্যতায় অপেক্ষাকৃত সামর্থ্যবান অনেক সামরিক অফিসার থাকলেও এ এন এম নূরুজ্জামানের প্রতি সেই সময়কার দেশি-বিদেশি নীতিনির্ধারকদের এই ‘আস্থা’ ছিল বিস্ময়কর। জাতীয় মিলিশিয়ার কেন্দ্রীয় দপ্তর পিলখানাতে ‘৭২-এর ১৬ ফেব্রুয়ারিতে তার উপস্থিতিতেই গুরুতর বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে গােলাগুলি হয়। তিনি নিজেও সেখানে অধীনস্তদের আঘাতে আহত হয়েছিলেন । মিলিশিয়া বাহিনীর হবু সদস্যদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক আনুগত্য যাচাইয়ের জন্য স্ক্রিনিং কার্যক্রম নিয়ে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। এই বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধাবস্থা। সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্ষুদ্র একটি দলকে পাঠিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না এবং বিদ্রোহীদের দাবি অনুযায়ী, এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে সেখানে যেতে হয়েছিল পরিস্থিতি সামাল দিতে। মিলিশিয়া প্রকল্প পরিত্যক্ত হওয়ার পেছনে এই সংঘর্ষও একটি অনুঘটকের ভূমিকা রেখেছিল। এতসব কিছুর পরও অবশ্য ধাপে ধাপে ব্রিগেডিয়ার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন নূরুজ্জামান। তাঁর সম্পর্কে পরে রক্ষীবাহিনী গঠন বিষয়ক আলােচনায় (৫.খ ও ৫.ঘ উপ-
……………………………………………………………
২৪৩) রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে নবীন রাষ্ট্রের নতুন ধারার এই সম্প্রসারণ চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন ক্ষুরধার শেখ মণিও, ১৯৭২ সালেই; যখন তিনি বড় বড় হেডলাইনে দ্বিধাহীন চিত্তে লিখেন, মুজিবের শাসন চাই—আইনের শাসন নয়। দেখুন, বাংলার বাণী, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, ঢাকা।
Page 162
অধ্যায়ে) আমরা আরও তথ্য তুলে ধরবাে। আপাতত এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা-উত্তর সময়কার একজন এডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মইনুল হােসেন চৌধুরীর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ থেকে পাওয়া নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি তুলে ধরা হচ্ছে যা পাঠককে ঐ সময়কার অনেক ঘটনাবলির যােগসূত্র উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
“রক্ষীবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান শেখ মুজিব হত্যার সময় দেশের বাহিরে ছিলেন। কয়েকদিন পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।…নভেম্বরের ৩ (১৯৭৫) তারিখে খালেদ মােশারফের অভ্যুত্থানে যদিও ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান সরাসরি জড়িত ছিলেন না। তবে বিভিন্নভাবে পরে তাকে এক্ষেত্রে সক্রিয় দেখা গেছে। ৭ তারিখের (নভেম্বর ১৯৭৫) অভ্যুত্থানের পর তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।…১৯৭৬ সালে তৎকালীন সিজিএস জেনারেল মঞ্জুর তাকে ভারতে থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেন। পরে তিনি ভারত থেকে সরাসরি লন্ডন আসেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি (মেজর জেনারেল মইনুল হােসেন চৌধুরী) তাঁকে লন্ডন থেকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। তিনি সেখানে তার শ্যালক আমেরিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে অবস্থান করেন। ১৯৮৬ সালে আমি যখন সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তখন সেখানে ভারতীয় দূতাবাসে হাইকমিশনার হয়ে আসেন ভারতের গােয়েন্দা সংস্থা ‘র’- এর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শংকর নারায়ণ । একদিন কথা প্রসঙ্গে তিনি ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। আমি সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাই।”২৪৪
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে রক্ষীবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামানের জড়িত থাকার বিষয়ে মেজর জেনারেল মইনুল হােসেন চৌধুরী উপরােক্ত উদ্ধৃতিতে কিছু ইঙ্গিত দিলেও তা অস্পষ্ট। প্রকৃত সত্য হলাে, ঐ অভ্যুত্থান সংগঠকদের মাঝে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফের পরই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র অফিসার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান।২৪৫ অন্যদিকে মইনুল
………………………………………………………………..
২৪৪) মেজর জেনারেল মইনুল হােসেন চৌধুরী, এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক, মাওলা ব্রাদার্স, ২০০০, ঢাকা, পৃ. ১০৬-৭। ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান, রক্ষীবাহিনী ও মধ্য-পঁচাত্তরে সেনাবাহিনীর বিশৃঙ্খলায় এদের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে এ লেখার অন্যত্র অনেকগুলাে ফুটনােটে আরও তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
২৪৫) বিস্তারিত দেখুন, কর্নেল শাফায়াত জামিল (অব.), একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, সাহিত্য প্রকাশ, ১৯৯৮, ঢাকা। উল্লেখ্য, এই অভ্যুত্থানে যুক্ত সেনা অফিসারের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭। দেখুন, মেজর নাসির উদ্দিন, পূর্বোক্ত, পৃ. ১২৩।
Page 163
হােসেন চৌধুরী যে শংকর নারায়ণের (আসলে নাম K. Sankaran Nair) উল্লেখ করেছেন তিনিই একাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে আগরতলা মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে মূল যােগাযােগ রাখতেন ‘কর্নেল মেনন’ ছদ্মনামে।২৪৬ ধারণা করা হয়, তখন থেকে নূরুজ্জামানকে জানতেন তিনি। এই K. Sankaran Nair ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
উল্লেখ্য, পঁচাত্তরের আগস্টের ঘটনাবলির একটি কাকতালীয় (এবং হয়তাে তাৎপর্যবহও বটে) দিক হলাে, সেই সময়কার বিবদমান দুটি বাহিনী (রক্ষীবাহিনী ও গণবাহিনী)-এর সংশ্লিষ্ট প্রধান ব্যক্তি হিসেবে যথাক্রমে ব্রিগেডিয়ার নূরজ্জামান যেমন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের কিছু আগে দেশের বাইরে চলে। যান- তেমনি সিরাজুল আলম খানও ঐ সময় ভারতে অবস্থান করছিলেন। আবার ঐ সময়কার বাংলাদেশে প্রভাবশালী দুই রাষ্ট্রদূত সমর সেন (ভারত) এবং আন্দ্রে ফোমিনও (সােভিয়েত ইউনিয়ন) ছিলেন তখন কর্মস্থলের বাইরে।
দেশের তখনকার আরেক প্রভাবশালী বামপন্থী নেতা- যাকে বাকশালে যােগদানের অনুরােধ করেছিলেন শেখ মণি- সেই কাজী জাফর আহমেদও ১৫ আগস্টের আগে ভারত চলে যান। সিপিবি প্রধান মনি সিংহ চলে যান মস্কোতে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল উল্লিখিত ১৫ আগস্ট ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসে তাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনমূলক কোনাে অনুষ্ঠান না হওয়া।
…………………………………………………………
২৩৬) দেখুন, অশােকা রায়না, ইনসাইড ‘র’, অনুবাদ: লে. (অব.) আবু রূশদ, মিলার প্রকাশনী, ১৯৯৪, ‘ঢাকা, পৃ. ৬১। উল্লেখ্য, কাও-এর পর K. Sankarati Nair-ই ‘র’-এর প্রধান হন।
Source: মুজিব বাহিনী থেকে গন বাহিনী ইতিহাসের পুনর্পাঠ – আলতাফ পারভেজ