You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুজিব বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো ও অপারেশন মাউন্ট ঈগল

৩.ঘ    মুজিব বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামাে ও ‘অপারেশন মাউন্ট ঈগল’

ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েটের সেক্রেটারি শ্রী আর এন কাও এসময় (যুদ্ধকালে) আমার উর্ধ্বতন সিভিলিয়ান কর্মকর্তা ছিলেন। আওয়ামী লীগের যুব উইংয়ের নেতৃত্ব এবং খােদ সংগঠনটি সম্পর্কে বিস্তারিত গােয়েন্দা তথ্য জানার সুবিধা তাঁর হয়েছিল এবং তাঁরও গভীর উপলব্ধি ছিল, তিনি আমার তত্ত্বাবধানে যে যুবনেতাদের দিয়েছিলেন কেবল তাদের দ্বারাই আসল কাজটি হবে এবং তাদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া দরকার।

    -মেজর জেনারেল এস এস উবান, ফ্যান্টমস্ অব চিটাগং১৪৩। উবান উল্লিখিত আর এন কাও ছিলেন ‘র’-এর প্রধান। তাঁর সম্পর্কে ৩.খ উপ-অধ্যায়ে পরিচিতিমূলক তথ্য রয়েছে।

বর্তমান গ্রন্থের পূর্ববর্তী আলােচনায় এক পর্যায়ে (২.ক) সংগঠনের প্রাক্তন নেতা আ স ম আবদুর রবের জবানিতে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, ছাত্রলীগে তাদের নিউক্লিয়াস’-এর সদস্য সংখ্যা সত্তর সালের দিকে প্রায় সাত হাজারে উন্নীত হয়েছিল। তবে সেই একই সংগঠনের দ্বিতীয় দফা সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে ‘মুজিব বাহিনী’র কাঠামাে ও সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে তদ্রুপ সুস্পষ্ট তথ্য জানা যায় না। একজন আঞ্চলিক সংগঠক অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীর বর্ণনা, অনুযায়ী১১৪ এই বাহিনীর নেতৃস্থানীয় সদস্য ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, তােফায়েল আহমেদ, আমীর হােসেন আমু, শেখ সেলিম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, আব্দুল হামিদ, আ স ম রব, নূর আলম জিকু, হাসানুল হক ইনু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, শাজাহান সিরাজ, আ ফ ম মাহবুবুল হক, মনিরুল ইসলাম, মঈনউদ্দিন খান বাদল, আফতাব আহমাদ, স্বপন চৌধুরী (যুদ্ধকালে চট্টগ্রামে শহীদ), মনিরুল হক চৌধুরী, হাসানউদ্দিন সরদার প্রমুখ। এর মধ্যে প্রথম চার জনকে মুখ্য শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতাে। এর পরে আ স ম আব্দুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদুস মাখন ও শাজাহান সিরাজ- এই চার জনকে মুখ্য শক্তির মূল শক্তিভিত হিসেবে চার খলিফা উল্লেখ করা হতাে। উল্লেখ্য, তােফায়েল আহমেদ ও আ স ম আব্দুর রবের পরে ১৯৭০ সালে নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ যথাক্রমে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন।

—————————————————————-

১৪৩) এস এস উবান, পূর্বোক্ত, পৃ. ২১।

১৪৪) বিস্তারিত দেখুন, আবদুল মান্নান চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিব বাহিনী, বৈশাখী প্রকাশনী, ১৯৯৮, ঢাকা।

Page 103

‘টিম’ হিসেবে মুজিব বাহিনীর উপরােক্ত নেতৃত্ব যুদ্ধকালে চারটি আঞ্চলিক কাঠামােতে বিন্যস্ত ছিল। প্রধানত চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চলের প্রধান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি; সিলেট ও ময়মনসিংহে একাংশ নিয়ে গঠিত উত্তর- পূর্বাঞ্চলের প্রধান করা হয় আবদুর রাজ্জাককে; দিনাজপুর ও রংপুর নিয়ে গঠিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং ফরিদপুর-যশাের রাজশাহী নিয়ে গঠিত পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান ছিলেন যথাক্রমে সিরাজুল আলম খান ও তােফায়েল আহমেদ। এর মধ্যে ফজলুল হকের সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন আবদুর রব, আবদুল কুদুস মাখন, আবদুল মান্নান চৌধুরী, সৈয়দ রেজাউর রহমান, এম এ রশিদ, আবদুল মান্নান মজুমদার প্রমুখ। আব্দুর রাজ্জাকের প্রধান সহকারী ছিলেন সৈয়দ আহমদ ও শাজাহান সিরাজ; সিরাজুল আলম খানের প্রধান সহকারী ছিলেন মনিরুল ইসলাম; তােফায়েল আহমেদের সঙ্গী ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ, নূর আলম জিকু, নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ। অন্যদিকে শাজাহান সিরাজ মুজিব বাহিনী ও অস্থায়ী প্রবাসী সরকারের মধ্যে যােগাযােগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন কাজী আরেফ আহমেদ।১৪৫ ঢাকায় মুজিব বাহিনীর পক্ষে সামরিক অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চলের জন্য মােস্তফা মহসিন মন্টু, পূর্বাঞ্চলের জন্য কামরুল আলম খান খসরু।১৪৬ সাধারণভাবে প্রায় প্রতি জেলাতেই বিএলএফ একজনকে মুখ্য

—————————————————————

১৪৫) দেখুন, কাজী আরেফ আহমেদ, পূর্বোক্ত! সিরাজুল আলম খানের জীবন ও আদর্শকে ভিত্তি করে রচিত একটি গ্রন্থে সম্প্রতি উল্লেখ পাওয়া যায়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসাবে রেখে স্বাধীনতা পূর্বকালে গঠিত সিরাজ-রাজ্জাক-আরেফ এর ‘নিউক্লিয়াস’ জয়বাংলা বাহিনী নামে একটি সামরিক উইং’ও গড়ে তুলেছিল। যার কমান্ডার ছিলেন আ স ম আব্দুর রব এবং ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন কামরুল আলম খান খসরু। ছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তােলা হয়েছিল ‘নারী ব্রিগেড’ যার প্রধান ছিলেন মরহুম মমতাজ বেগম। সত্তরের সাতই জুন উপরােক্ত জয়বাংলা বাহিনী’ই সিরাজদের নকশাকৃত সম্ভাব্য স্বাধীন দেশের পতাকা মুজিবের হাতে তুলে দেয়। দেখুন: সিরাজুল আলম খান-এর দর্শন ও চেতনালােক, কামাল উদ্দিন আহমেদ, ইন্টারন্যাশনাল হিস্টোরিক্যাল নেটওয়ার্ক, ঢাকা, ২০১০। উল্লেখ্য, শ্লোগান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জয়বাংলা’ প্রথম উচ্চারিত হয় ১৯৭০ সালের ১৮ জানুয়ারী সিরাজুল আলম খান কর্তৃক ঢাকার পল্টনে আওয়ামী লীগের এক জনসভায়। ভারতের ‘জয়হিন্দ শ্লোগানের ভাবদুর্শিক প্রভাব ছিল এক্ষেত্রে। একই প্রভাবে তখন সিন্ধুতেও ‘জিয়েসিন্দ’ শ্লোগান উচ্চারিত হতে থাকে। ছাত্রলীগে এই শ্লোগানটির চর্চা এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আফতাব আহমাদ ও চিশতি হেলালুর রহমানেরও প্রভাবক ভূমিকা ছিল।

 দেখুন, https://www.facebook.com/pages/সিরাজুল-আলম-খান-পাঠ-চক্র-Serajul-Alarm-Khan-Study-circle/54528515495471?ref=ts&fref=ts (২৮ মে ২০১৩)। উল্লেখ্য, সিরাজুল আলম খান পাঠচক্রের উপরােক্ত সূত্রে এও জানা যায়, সিরাজুল আলম খান গ্রুপ কর্তৃক জয়বাংলা’ শ্লোগান দেয়ার কারণে ছাত্রলীগে তাঁদের বিরােধী গ্রুপ মুজিবের কাছে এ বিষয়ে নালিশ করেছিল।

১৪৬) শেখ মােহাম্মদ জাহিদ হােসেন, মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স, অংকুর প্রকাশনী, ঢাকা, পৃ. ২৬।

Page 104

কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেছিল। যেমন চট্টগ্রামে বিএলএফ প্রধান ছিলেন মাহফুজুর রহমান, সিলেটে আখতার আহমদ, কুমিল্লায় সৈয়দ রেজাউর রহমান, নােয়াখালীতে মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, খুলনায় কামরুজ্জামান টুকু, বরিশালে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, মানিকগঞ্জে মফিজুল ইসলাম খান কামাল, টাঙ্গাইলে খন্দকার আবদুল বাতেন, ময়মনসিংহে সৈয়দ আহমদ, ফরিদপুরে শাহ আবু জাফর প্রমুখ।

আলােচ্য বাহিনীর অন্যতম সংগঠক মনিরুল ইসলাম জানাচ্ছেন, মে মাসের শেষ নাগাদ তাঁদের প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল। প্রশিক্ষণে যাওয়া এবং ফিরে এসে বাংলাদেশে প্রবেশের আগে ‘অপেক্ষা করার জন্য বিএলএফ-এর চারটি আঞ্চলিক ‘ঘাটি বা ক্যাম্প ছিল ভারতের অভ্যন্তরে (ব্যারাকপুর, পাঙ্গা, তুরা এবং আগরতলা)। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ৪-৫ মাস পরে মুজিব বাহিনীর যােদ্ধাদের বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু হয়। দ্রুতই তারা প্রায় সকল জেলাতে নিজেদের পৃথক সাংগঠনিক কাঠামাে তৈরি করে ফেলে। এসব কাঠামাের সদস্যরা অধিকাংশ ছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়য়া সংশ্লিষ্ট জেলার বা ভিন্ন জেলার শহুরে তরুণ।

ভারতের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার ক্ষেত্রে মুজিব বাহিনী ছিল বিশেষ সৌভাগ্যের অধিকারী। মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান এ কে খন্দকার বলছেন, ‘একটি বিষয় লক্ষ্য করেছিলাম, তারা (মুজিব বাহিনী) যখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে আসছিল, তখন তাদের কাছে আমাদের সাধারণ গেরিলা যােদ্ধাদের তুলনায় অনেক বেশি। রয়েছে। পরে শুনেছি, উন্নত মানের অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি ভারত সরকারের অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে।১৪৭ তবে ভিন্ন একটি ভাষ্য বলছে, গুণগতভাবে উন্নত অস্ত্র দেওয়া হলেও দেশের অভ্যন্তরে একেবারে নিম্নস্তরের কর্মী পর্যন্ত সেই অস্ত্রের বিস্তৃতি ছিল না। তৃণমূলে কর্মী সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চললেও তাদের হাতে কম ক্ষেত্রেই ঐ ধরনের উন্নত অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল।১৪৮

ভারতে বিএলএফ-এর সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির ছিল দু’টি- উত্তর প্রদেশের দেরাদুনে এবং আসামের হাফলঙে। মুজিব বাহিনীর সদস্যরা সবচেয়ে বেশি

——————————————————————-

১৪৭) এ কে খন্দকার ও অন্যান্য, পূর্বোক্ত, পৃ. ১১৮।

১৪৮) মুক্তিযােদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরের সাক্ষাৎকার। ২০১২ সালের ১৬ মে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা

হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি প্রথমে জেড ফোর্সে এবং পরে কর্নেল তাহেরের সঙ্গে ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ পরবর্তীকালে যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগ কিংবা জাসদ কোনাে পক্ষেই যুক্ত ছিলেন না সে কারণে মুজিব বাহিনী সম্পর্কিত মতামতের জন্য নেতৃস্থানীয় এই মুক্তিযােদ্ধাকে বাছাই করা হয় । নঈম জাহাঙ্গীর পরে বাংলাদেশ মুক্তিযােদ্ধা সংসদের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।

Page 105

সংখ্যায় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন দেরা দুনে। যে কারণে দেরাদুনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যতটা আলােচিত হাফলঙের ততটা নয় । হাফলঙও ছিল দেরাদুনের মতােই পাহাড়ি এলাকা। আসামের উত্তর কাছাড়ের দিয়াং নদী সংলগ্ন এই জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে যােগাযােগের মূল মাধ্যম ট্রেন। দেরা দুনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিটি ব্যাচকে সাধারণভাবে ৪৫ দিন মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতাে। প্রথম ব্যাচে প্রায় ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় সংগঠক। এই ব্যাচের নেতৃত্বে ছিলেন নূর আলম জিকু। এ ব্যাচের একজন প্রশিক্ষণার্থী যিনি বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক- নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সাধারণভাবে মুজিব বাহিনীতে প্রশিক্ষণার্থীদের দুটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রে পাঠানাে হতাে। যেসব প্রশিক্ষণার্থীকে অধিক ‘বিশ্বাসযােগ্য মনে করা হতাে তাদের পাঠানাে হতাে দেরাদুনের কেন্দ্রে। আর যাদের ভবিষ্যৎ বিশ্বাসযােগ্যতা নিয়ে পুরােপুরি নিশ্চিত হওয়া যেত না তাদের হাফঙে পাঠানাে হতাে। মুজিব বাহিনীর আরেক পরিচিত সংগঠক অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী অবশ্য লিখেছেন, দেরা দুনে প্রশিক্ষণ হতাে “সিনিয়র লিডার’দের এবং হাফলঙে হতাে ‘জুনিয়র লিডার’দের। উভয় কেন্দ্রে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ছিল উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা প্রবাসী সরকারের অধীনস্ত মুক্তিবাহিনীর সাধারণ সদস্যরা যা কখনােই পায়নি। হাফলঙে দ্বিতীয় ব্যাচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাহাব উদ্দীন সাথীও আবদুল মান্নান চৌধুরীর বক্তব্য সমর্থন করেছেন। তবে তাঁর মতে, প্রথম দিকে যদিও সিদ্ধান্ত ছিল দেরা দুনে নেতৃস্থানীয়দের এবং হাফলংয়ে পরবর্তী স্তরের সংগঠকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে- কিন্তু এ নিয়ে শেষােক্ত স্থানের প্রশিক্ষণার্থীরা প্রতিবাদ করায় পার্থক্যসূচক পরিকল্পনাটি বাদ দেওয়া হয়। সাথী অবশ্য এও জানিয়েছেন, দেরা দুনের প্রশিক্ষণের ধরন ছিল রাজনৈতিক ধাঁচের আর হাফলংয়ে প্রশিক্ষণের ধরন ছিল। পুরােপুরি সামরিক চরিত্রের।১৯৯ দেরা দুনের প্রথম ব্যাচের আরেকজন প্রশিক্ষণার্থী আ ন ম শফিক উল্লাহ জানাচ্ছেন, প্রশিক্ষণকালে যথেষ্ট পকেটমানিও দেওয়া হতাে। পঞ্চম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী জিয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাধারণভাবে তাদের খাবারের মানও ছিল অত্যন্ত উন্নত।১৫০

——————————————————————–

১৪৯) সাহাব উদ্দীন সাথী’র এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকায়। যুদ্ধকালে সাথী বিএলএফ-এর ইস্টার্ন কমান্ডের অধীনে মূলত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় নিয়ােজিত ছিলেন।

১৫০) অপ্রকাশিত সাক্ষাঙ্কার। আ ন ম শফিক উল্ল্যাহ-এর সাক্ষাৎকার ধারণ করা হয় ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই ঢাকার হাতিরপুলে; অন্যদিকে জিয়ারুল ইসলামের সাক্ষাৎকার ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর ঢাকার মােহাম্মদপুরে ধারণকৃত। জিয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাদের প্রশিক্ষণকাল আট সপ্তাহ বলা হলেও কার্যত তা ছিল ৩৭ দিনের; তবে পূর্ববর্তী ব্যাচগুলােতে প্রশিক্ষণ আরও দীর্ঘ ছিল।

Page 106

মুজিব বাহিনীর প্রতি ভারতীয় বিশেষ কর্তৃপক্ষের আনুকূল্যের নানান রূপ ইতােমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে । এইরূপ সুদূরপ্রসারী আনুকূল্যের তথ্যাদি বিশেষ তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে যখন সাম্প্রতিক এ সত্য তার সঙ্গে যুক্ত হয় যে, পূর্ব- পাকিস্তানের এই গেরিলা যােদ্ধাদের জন্য মুজিবনগর মন্ত্রিসভা গঠনের আগেই ভারত সিআইএ-এর কাছে অস্ত্র প্রার্থনা করেছিল।১৫১

এইরূপ তথ্য থেকে ধারণা করা যায়, পাকিস্তানকে দ্বি-খণ্ডিত করার বিষয়ে।ভারত একাত্তরের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব থেকে দেশে-বিদেশে সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিল। ভারতীয় এইরূপ প্রকল্পে সিআইএ’র সংশ্লিষ্টতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে থাকবে উপরে উল্লিখিত ছাত্র-যুবনেতাদের তীব্র কমিউনিস্ট বিদ্বেষ- যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব থেকে যা ছিল খুবই প্রকাশ্য। যুদ্ধপূর্ব সেই সময়কার উত্তাল দিনগুলােতে যুক্তরাষ্ট্রও যে পূর্ব-পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট উপাদান যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল তার প্রমাণ মেলে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানাে তাদের নিম্নোক্ত গােপন বার্তায় :

The indiscriminate pillage, execution, collective punishment and molestation which appears to have characterized the Army’s operations in certain areas of East Pakistan- against Muslims as well as Hindus- might have created a psychological climate where fear only barely submerges a desire for revenge on the part of some peasants personally affected by the Army’s actions. The Army may have by inadvertence and maladroitness created the ‘water in which the Mukti Fauj can swim, to use Mao’s analogy.১৫২

যুদ্ধকালে মুজিব বাহিনীর সঙ্গে বা ভারত বহির্ভূত বিদেশি উৎসের সংশ্লিষ্টতা আঁচ করা হয় এর সদস্যদের ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন দেখেও। এ বিষয়ে মঈদুল হাসান ও এ কে খন্দকারের সূত্রে পাওয়া বক্তব্য ইতােমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এ পর্যায়ে একই বিষয়ে মুজিব বাহিনীর একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী শামসুদ্দীন আহমেদ-এর বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। যুদ্ধকালে শেখ মণি’র সঙ্গে কাজ করলেও জাসদ গঠনের পরে তিনি এই দলের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। উদ্ধৃতিটি দীর্ঘ হলেও পাঠক তার মধ্যে চিন্তার অনেক খােরাক পাবেন।

—————————————————————-

১৫১) এ কে খন্দকার ও অন্যান্য, পূর্বোক্ত, পৃ. ১৩৪।

১৫২) The American Papers: Secret and Confidential, India-pakistan-Bangladesh Documents 1965 to 1973, Compiled and selected by Roedad khan, Oxford, 1999,New York, P. 616.

Page 107

“…আমি হাফলংয়ে ট্রেনিং নিয়েছি। এলিট বাহিনীর মতাে…সেখানে সবাই ছিল মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। আমাদের ইন্ট্রাক্টররা ‘আপনি করে বলতেন। পৃথক পৃথক থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল চমৎকার। অনেক উইপন্স…অটোমেটিক যেগুলাে…সেগুলাের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পরে এসে দেখি অন্যান্য, এমনকি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনেকেও এসব উইপন্সের নামও কখনও শােনেনি। মাঠ পর্যায়ে আমরা এসকেএস (Self-loading Carbine of (the) Simonov system] নামের রাইফেল ব্যবহার করতাম। আমাদের সবার কাছে এই রাইফেল ছিল। আমরা যখন দেশের ভিতরে ঢুকছি আমাদের সঙ্গে ইন্ডিয়ার আর্মির বেশ কিছু সােলজারও ঢুকলাে। তারা দেখলাম আমার উইপনের…মানে দেখা তাে দূরের কথা নামই জানতাে না। বললাে, এতনা খুব সুরত…। আমি বললাম, এটা তাে ইন্ডিয়ার। ওরা বলছে, না, না, এটা ইন্ডিয়ার নয়।”১৫৩

প্রকৃতই ঐ অস্ত্রগুলাে ভারতীয় ছিল না। ইতােমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, জেনারেল উবানের প্রকল্পটি একই সঙ্গে ছিল ভারতীয় এবং পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেরও। মুজিব বাহিনীর যােদ্ধাদের অস্ত্রগুলােও তাই অত্যন্ত উন্নত মানের থাকাটা অস্বাভাবিক ছিল না। তিব্বতকে ‘উদ্ধার’, কমিউনিস্ট গণচীনকে প্রতিরােধ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগা, মিজো ইত্যাদি র্যাডিক্যাল স্বাধীনতাপন্থীদের ধ্বংসের জন্য জেনারেল উবানের পূর্বতন কর্মস্থল ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’ গঠিত হলেও একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে মাও সেতুঙের আদর্শে চারু মজুমদারের নেতৃত্বে নকশাল আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় কমিউনিস্ট আদর্শের প্রভাব নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল যুগপৎ দিল্লির শক্তিশালী একটি মহল এবং যুক্তরাষ্ট্রের গােয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। পরে তিব্বত উদ্ধারের আশা ত্যাগ করে উবানের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতাপন্থীদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিপ্লবের দিকেই মূল মনােযােগ দেয়। এই প্রকল্পে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের অন্যতম উৎস ছিল সিআইএ। এই বিষয়ে ইতােমধ্যে আমরা ৩.খ উপ-অধ্যায়ে আলােকপাত করেছি। এ পর্যায়ে বাড়তি শুধু এটাই বলা যায়, ১৯৫০-এর পর থেকে তিব্বত নিয়ে চীনে যে সংকট তৈরি হয় তার ফলে অত্র অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গােয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বিশেষভাবে অনুপ্রবেশ করেছিল। তিব্বতি বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামা সেসময় ১৯৫৯ সালের ৩১ মার্চ সিআইএ’র প্রশিক্ষিত এক দল গেরিলার সহায়তায় তিব্বত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন। এরপর ১৯৬২ সালের অক্টোবরে চীন-ভারত যুদ্ধ বাঁধে। উপরােক্ত দুটি ঘটনার পর চীনকে মােকাবেলায় ভারতীয় গােয়েন্দা

—————————————————————–

১৫৩) শামসুদ্দিন আহমেদ-এর সাক্ষাৎকারের জন্য দেখুন, আফসান চৌধুরী, পূর্বোক্ত।

Page 108

বাহিনীসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তা সুসংহত করার জন্য সিআইএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে চীনের ভেতরে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানাের জন্য এসময় তিব্বতি শরণার্থী তরুণদের নিয়ে সিআইএ বিশেষ বাহিনী গড়ে তােলার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেয়- যে বাহিনীর নাম ছিল স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বা এসএফএফ। আকাশে নজরদারির ক্ষেত্রে এই ফোর্সকে সহায়তার জন্য তখন সৃষ্টি হয় আরেকটি সংস্থা এভিয়েশন রিসার্স সেন্টার বা এআরসি । প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর দুটি ছােট বিমান দিয়ে শুরু হয় এআরসি’র কার্যক্রম। এসএফএফ-এর অধীনে প্রশিক্ষিত অনেককে পরে চীনের ভেতরেও পাঠানাে হয়। চীন বিরােধী সামগ্রিক সহযােগিতার পাশাপাশি এসময় তিব্বত নিয়ে একসঙ্গে কাজের একটি কাঠামােও গড়ে তােলে ভারতীয় গােয়েন্দা সংস্থা আইবি এবং সিআইএ। আইবি’র পক্ষ থেকে তৎকালীন চিফ ভােলানাথ মল্লিক১৫৪ এক্ষেত্রে খুবই উদ্যোগী ভূমিকা নেন। তখনও ‘র’ গঠিত হয়নি। পরে ‘আইবি’ ভেঙে ‘র’ সৃষ্টির পর এসএফএফ তাদের কর্তৃত্বে চলে আসে। সিআইএ এবং ‘র’ মিলে তিব্বতি উপজাতি তরুণদের প্রশিক্ষণের জন্য উত্তরখণ্ডের দেরাদুন জেলার চাকরাতা নামের পাহাড়ি ক্যান্টনমেন্ট শহরটিকে কাজে লাগানাে হয়। চাকরাতা শহরটি হিমাচল প্রদেশের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা। এই হিমাচল প্রদেশেই রয়েছে তিব্বতের প্রবাসী সরকার এবং দালাইলামার বাসস্থান। চাকরাতায় তিব্বতিদের প্রশিক্ষণের জন্য কাঠামােগত সহায়তার পাশাপাশি সিআইএ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করত। এমনকি সিআইএ’র

—————————————————————–

১৫৪) ভােলানাথ মল্লিক ভারতীয় গােয়েন্দা জগতের পিতামহ হিসেবে পরিচিত। আইবি (IB) নামে পরিচিত ভারতের প্রাচীন গােয়েন্দা কাঠামােটির প্রথম পরিচালক তিনি। নেহেরুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। চৌদ্দ বছর তিনি আইবি’র পরিচালক ছিলেন। তার সময়ই সিআইএ- এর সঙ্গে ভারতের গােয়েন্দা জগতের যৌথ কার্যক্রমের গােড়াপত্তন। ঠান্ডাযুদ্ধ’-এর মাঝেই ভারত-মার্কিন এই সহযােগিতা ঘটে- যদিও বিশ্ববাসী তখন জানত, ভারত সােভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র। ভারত-সােভিয়েত মৈত্রীর মাঝেও সিআইএ ও আইবি’র যৌথ কার্যক্রম বিকশিত হয় মূলত কমিউনিজম প্রতিরােধে উভয়ের আন্তরিক ইচ্ছার কারণে। ভােলানাথ মল্লিক যখন আইবি’র পরিচালক তখন রাম নাথ কাও ছিলেন আইবি’র অঙ্গ সংস্থা এভিয়েশন রিসার্স সেন্টার- এআরসি’র পরিচালক। এসময় দিল্লিতে সিআইএ-এর স্টেশন প্রধান ছিলেন ডেভিড ব্লিঙ্গ। উপরােক্ত এআরসি’র জন্ম সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সহায়তায় । পরে এআরসি’র রাম নাথ কাও-এর নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয় রিসার্স এন্ড এনালাইসিস উইং (র) নামের বহুল পরিচিত গােয়েন্দা সংস্থা এবং সিআইএ ও ভারতের মধ্যকার তাবৎ কার্যক্রমের দায়িত্ব নিয়ে নেয় কাওয়ের ‘র’ । আগ্রহীরা এসব বিষয়ে আরও দেখুন, B N Mallik, Chinse Betrayal: My year with Nehru, Allied Publishers, 1971; http://www.american-buddha.com/cia.secret. war.oaktree.htm; 42M.S. Kohli and Kenneth Conboy, Spies in the Himalayas: Secret Missions and Perilous Climbs, Harpercollins, India, 2003.

Page 109

প্যারামিলিটারি অফিসাররা প্রশিক্ষণে উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা রাখতেন। এখানে তান্দুয়া নামেও একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল। এসব প্রশিক্ষণস্থলে প্রশিক্ষণার্থীরা অত্যাধুনিক M1, M2 ও M3 কারবাইন ব্যবহার করত। মুজিব বাহিনীও অনুরূপ বা সমমানের অস্ত্র ব্যবহারের জন্য পেয়েছিল। মুজিব বাহিনী যেসব প্রশিক্ষণঅবকাঠামাে ব্যবহারের সুযােগ পায় তা আসলে তিব্বতি কমান্ডােদের জন্য সিআইএ কর্তৃক বিনিয়ােগ করা ছিল। আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিব বাহিনীর সদস্যদের পরিবহন কাজে ব্যবহৃত বিমানগুলাে ছিল এসএফএফ-এর অধীনস্ত ‘এআরসি’ সংস্থার। সিআইএ’র সহায়তায় এআরসি’র গঠন-কাহিনী ইতােমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।১৫৫

উল্লেখ্য, জেনারেল উবানকে এসএফএফ নামে গঠিত উপরােক্ত তিব্বতি গেরিলা বাহিনীরই ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) হিসেবে নিয়ােগ দেওয়া হয়েছিল। আইজি’র উর্ধ্বতন পদ হচ্ছে ডিজি (র’)। উবান যেহেতু দ্বিতীয়।বিশ্বযুদ্ধকালে ২২-মাউন্টেন ব্রিগেড’-এ ছিলেন সে কারণে তার নতুন গেরিলা দল- অর্থাৎ এসএফএফ-কে ‘এস্টাবলিশমেন্ট ২২’ নামেও অভিহিত করা হতাে। অনেকে একে ‘টু-টু’ও বলতেন। আটটি ব্যাটালিয়নের অধীনে ৬৪টি কোম্পানি ছিল এর। সিআইএ’র সহায়তায় ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানাে হলেও অপ্রচলিত সামর্থ্যের এই গেরিলা দলের শক্তি কখনােই যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত ছিল । কখনােই চীনে ঢােকার সুযােগ পায়নি তারা। সে কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এই বাহিনীর শক্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু এসএফএফ ভারতীয় নিয়মিত বাহিনীর অধীনস্থ ছিল না এবং এটা ভারতের স্বার্থ’-এর জন্য নয়, তিব্বতের স্বার্থ’-এর জন্য সৃষ্ট- সে কারণে প্রথম দিকে এসএফএফ-এর নেতৃস্থানীয় তিব্বতি যােদ্ধারা বাংলাদেশে আসতে অনিচ্ছুক ছিলেন। পরে ‘র’ প্রধান আর এন কাও হিমাচলের ধর্মশালায় গিয়ে এ বিষয়ে প্রবাসী তিব্বতি সরকারকে চাপ প্রয়ােগে রাজি করান। এসময় ইন্দিরা গান্ধী তিব্বতি গেরিলাদের বাংলাদেশে পাঠানাের আগে দালাইলামার সঙ্গেও কথা বলেন সম্মতির জন্য । প্রথমত, শক্তি পরীক্ষা এবং দ্বিতীয়ত, এই বাহিনীকে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মিজো ও নাগা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে তিব্বতি কমান্ডােদের প্রায় তিন হাজার সদস্যকে মুজিব বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ১৯৭১ সালের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিজোরামের দেমাগিরি দিয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢােকানাে হয়। এই অপারেশনের প্রতীকী নাম ছিল ‘মাউন্ট ঈগল’।

——————————————————————

১৫৫) নেহেরুর আমলে ভারত-সিআইএ’র তিব্বতকেন্দ্রিক বিমানভিত্তিক গােয়েন্দাগিরির বিষয়ে ২০১৩ সালে আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন, http://www.business-standard.com/article/international/nehru-permitted-cia-spy-planes-to-use-indian-air-base-113081600225_1.html (retrieved on 18-08-2013)

Page 110

প্রথমে তিব্বতি যােদ্ধাদের উত্তর প্রদেশ থেকে।বিমানে করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে গাড়িতে করে নেয়া হতাে মিজোরামের দেমাগিরিতে। তারপর তারা বিভিন্নপথে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবেশ করে।১৫৬ এই সফল অভিযানে এসএফএফ-এর হাতে নিজেদের গেরিলা অবকাঠামাের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে মিজো ও নাগারা পরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আপসমূলক চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল । উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উবানের এই স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার্সদের অন্যতম অধিনায়ক (সিআইএ প্রশিক্ষিত) Dhondup Gyatotsang মারা গিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অপারেশনে এসএফএফ-এর তিনটি ইউনিট অংশ নেয়। প্রত্যেকটির নেতৃত্বে ছিলেন একজন তিব্বতি (যাকে বলা হতাে ‘Dapon’ বা ব্রিগেডিয়ার) এবং একজন ভারতীয় কর্নেল । Dhondup Gyatotsang ছিলেন ঐরূপ একজন ‘Dapon’. যিনি তিব্বতি গেরিলাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অন্যতম সুপরিচিত যােদ্ধা ছিলেন। এইরূপ আরেকজন ‘Dapon’ ছিলেন Ratuk Ngawang. ২০১১ সলের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৮৪ বছর বয়সে প্রকাশিত তাঁর এক সাক্ষাৎকারে তিনি মুজিব বাহিনী সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান,

They later acted as our guides and contact persons during the war though they did not actually fight with us. Though it us who fought the real war and suffered the casualties, all the credit has later been given to the Mujib Bahinis (because the Tibetan Force was involved under the guise of the Mujib Bahinis).১৫৭

পার্বত্য চট্টগ্রাম অপারেশনে মুজিব বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসে একাত্তরের ১২ নভেম্বর থেকে পরবর্তী ২৮ দিনে অন্তত ৪৯ জন তিব্বতি কমান্ডাে মারা যান (ভিন্নমতে ৫৬ জন*১৫৮) এবং ১৯০ জন আহত হন। মূলত এরাই পাকিস্তান

——————————————————————

১৫৬) উল্লেখ্য, দেমাগিরির অবস্থান বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একেবারে সীমান্তবর্তী। একসময় দেমাগিরি পার্বত্য চট্টগ্রামেরই অংশ ছিল এবং কাপ্তাই লেক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে তার যােগাযােগ ছিল। বর্তমানে এ স্থানটি তেমবাং’ নামে পরিচিত। মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে এটা প্রায় ৩৩২ কিলােমিটার দূরবর্তী।

১৪৭) দেখুন, http://claudearpi.blogspot.com/2011/12/war-which-was-not-theirs.html(retrieved on 18-09-2013). এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন Claude arpi. উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পরিসরে তিব্বত বিষয়ে Claude arpi হলেন একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক। বর্তমান সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় Ratuk Ngawang দিল্লির মজনু-কা টিলার তিব্বতি কলােনিতে বসবাস করছিলেন।

১৫৮) ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক Praveen Swami এক লেখায় দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে এসএফএফ-এর অপারেশন শুরু হয়েছিল ৩ ডিসেম্বর এবং তাতে ৫৬ জন অফিসার ও সৈনিক নিহত হয়েছিল। দেখুন: Praveen Swami, Ibid.

Page 111

সেনাবাহিনীর ৯৭ ইনডিপেন্ডেন্ট বিগ্রেড ও ২ নম্বর কমান্ডাে ব্যাটালিয়নকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিব্বতি কমান্ডােদের এইরূপ ভূমিকা সম্পর্কে কেবল বাংলাদেশে নয় ভারতীয় জনসমাজেও সব ধরনের আলােচনা চেপে যাওয়া হয়। এটাকে ‘মােস্ট সিক্রেট বিষয় হিসেবে দেখা হয় সেখানে। যে কারণে, ভারত বাংলাদেশের যুদ্ধে সাহসী ভূমিকার জন্য উবানের এসএফএফ বাহিনীর ৫৮০ জন সদস্যকে কোনাে ধরনের পদক দিয়ে নয়- নগদ মুদ্রা দিয়ে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছে। তিব্বতি।এসএফএফ-এর পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিযান উদযাপন করতে ঐ সময় ‘র’ প্রধান আর এন কাও স্বয়ং সেখানে চলে এসেছিলেন। এভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও গােপন সামরিক অভিযানের এক মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল।

ভারত ও সিআইএ কর্তৃক তিব্বতি গেরিলাদের উপরােক্ত ব্যবহারকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের নীরব ভূমিকার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়। কারণ পুরাে বিষয়টি চীনের নজরদারির বাইরে ছিল না।১৫৯ উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উপরােক্ত ভূমিকার কারণেই ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’কে ভারতীয় সামরিক পরিমণ্ডলে ‘ইন্দিরা গান্ধীর নিজস্ব ফোর্স হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং এই ফোর্সকে নিয়েই লেখা হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি পাওয়া যুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘ড্রাগন ফায়ার।১৬০ এ পর্যায়ে আরও উল্লেখ্য যে, এসএফএফ-এর উপরােক্ত অভিযানের প্রতীকী নাম যে ‘মাউন্ট ঈগল’ রাখা হয়েছিল সেটাও তাৎপর্যহীন ছিল না। কারণ Bald Eagle সচরাচর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবেই তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে এবং মুজিব বাহিনীর কার্যক্রমের আড়ালে ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’-এর উপরােক্ত তৎপরতা উপমহাদেশের ইতিহাসে কিছুটা অভিনব হলেও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রায় প্রত্যেক মহাদেশ জুড়ে এইরূপ প্রকল্পের বহু নজির রয়েছে। এক্ষেত্রে আফ্রিকার ‘ইউনিটা’, দক্ষিণ আমেরিকার ‘কন্ট্রাএবং এশিয়ায় ‘তালিবান’দের দৃষ্টান্তের উল্লেখ্য করা যায়। উপরােক্ত প্রত্যেকটি উদ্যোগে সিআইএ জড়িত থাকলেও তার স্থানীয় শক্তিশালী অংশীদারও ছিল। যেমন_UNITA (National Union for the Total Independence of Angola) গড়ার কাজে সিআইএ দক্ষিণ আফ্রিকার সহায়তা পায়। Contra Militia-দেরও স্রষ্টা তারা এবং সেক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল আর্জেন্টিনার গােয়েন্দা। সংস্থা এসআই । হন্ডুরাসে ছিল এদের ঘাটি। আফগানিস্তানে Taliban-দের তৈরির

——————————————————————–

১৫৯) উপরােক্ত বিষয়ে আরও বিবরণের জন্য দেখুন, Wikipedia.org/wiki/Special_Frontier_Force.

১৬০) ২০০০ সালের ২৪ আগস্ট এটি প্রকাশিত হয় ব্রিটেন থেকে। লেখক বিবিসির খ্যাতনামা সংবাদদাতা Humphrey Hawksley.

Page 112

ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকায় ছিল পাকিস্তানের গােয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং তাকে সামরিক সহায়তা দেয় সিআইএ ও আর্থিক সহায়তা দেয় সৌদি আরব। অন্যদিকে UNITA-কে ব্যবহার করা হয় পর্তুগালের কবল থেকে এঙ্গোলাকে মুক্তকারী MPLA (People’s Movement for the Liberation of Angola)-এর বিরুদ্ধে। Contra-দের গড়া হয় নিকারাগুয়ার সান্ডানিস্টা বিপ্লবের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। Taliban-দের ব্যবহার করা হয় মােহাম্মদ নজিবুল্লাহ’র সােভিয়েত সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করতে। উপরােক্ত তিনটি প্রকল্পই গড়ে তােলা হয়। সংশ্লিষ্ট দেশগুলাের প্রথাগত মার্কসবাদীদের পর্যদস্ত করার জন্য বিএলএফ-এর গঠনকালীন রাজনৈতিক প্রণােদনার সঙ্গে যার আশ্চর্যরকমের মিল।১৬১

এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, একাত্তরের যুদ্ধকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে মুজিব বাহিনীকে সামনে রেখে ভারতীয় এসএফএফ যা করেছে তা পুরােদস্তুর এক ধরনের covert operation মাত্র । covert operation-এর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞার আলােকেই এটা বলা যায়। যেমনউইকিপিডিয়াতে বলা হচ্ছে covert operation হলাে,

an operation that is so planned and executed as to conceal the identity of or permit plausible denial by the sponsor. It is intended to create a political effect which can have।implications in the military, intelligence or law enforcement arenas. Covert operations aim to fulfill their mission objectives without any parties knowing who sponsored or carried out the operation.১৬২

উল্লেখ্য, সিআইএ’র ক্ষেত্রে covert operation এর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ হলাে।Special Activity Division বা SAD. আর ঐ দেশে একে আইনগত ভিত্তি।দেওয়া হয়েছে ১৯৪৭-এর ন্যাশনাল সিকিউরিটি এক্ট-এর মাধ্যমে। এটা তাদের এবং বিশ্বের অন্যত্রও অস্ত্র শিল্পের বিকাশে বাড়তি গতি এনে দিয়েছিল। ভারতকেও covert operation বিষয়ে বিশেষভাবে প্রথম তালিম দেয় সিআইএ। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের পর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে নেতৃত্বদানের পাশাপাশিই সিআইএ’র সঙ্গে এসব যৌথ প্রকল্পে যুক্ত ছিল ভারত। covert operation-এর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ভারতীয় গােয়েন্দা প্রাতিষ্ঠানিকতায় সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হয় একাত্তরে মুজিব বাহিনী তৈরি ও পূর্ব-পাকিস্তানে

……………………………………………………….

১৬১) উপরােক্ত তিনটি সংগঠন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণার জন্য দেখুন: http://en.wikipedia.org/wiki/UNITA: https://en.wikipedia.org/wiki/Contras: 478 http://en.wikipedia.org/wiki/Taliban. (১৫ মে ২০১৩ তারিখে প্রদর্শিত তথ্যের আলােকে)

১৬২)  https://en.wikipedia.org/wiki/Covert_operation. (৩০ মে ২০১৩ তারিখে প্রদর্শিত তথ্যের আলােকে)।

Page 113

এর ব্যবহার; এবং সিকিমকে ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে১৬৩ যেসব ভূমিকা রাখা হয়েছে সেগুলােকে। অন্যদিকে একই বিষয়ে ভারতীয়রা সবচেয়ে বড় আকারে ব্যর্থ শ্রীলংকার তামিলদের ক্ষেত্রে। উল্লেখ্য, শ্রীলংকা ও তামিলনাড়ুর মাঝামাঝি অবস্থিত Palk প্রণালীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চরগুলাের পাশাপাশি তামিল যােদ্ধাদের।প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও ভারতে মূলত চাকরাতা ও দেরা দুনের সামরিক অবকাঠামাে ব্যবহার করা হয়১৬৪- যেখানে আমরা মুজিব বাহিনীকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখেছিলাম। গােপন সামরিক তৎপরতার জন্য গড়ে তােলা ‘গােপন বাহিনী হিসেবে মুজিব বাহিনী সম্পর্কে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সামরিক বাহিনীর উপ-প্রধান এ কে খন্দকারের নিম্নোক্ত ভাষ্যটি এ পর্যায়ে বিবেচনার দাবি রাখে :

মুজিব বাহিনীর ব্যাপারটা অনেকেরই অজানা ছিল এ কারণে যে, এই সংগঠনটি অত্যন্ত গােপনীয়ভাবে করা হয়েছিল এবং গােপনীয় রাখাও হয়েছিল। আমার ধারণা, মুজিব বাহিনীর যারা সদস্য ছিলেন, তাদের একটা বড় সংখ্যক এ সম্পর্কে কিছু জানত না। মুজিব বাহিনীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রধানত এর যে নেতত্ব, তাদের মধ্যেই স্বচ্ছ ধারণা ছিল। (সংগঠনের) নিচের।দিকে এই বাহিনীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না।১৬৫

…………………………………………………….

১৬৩) ১৯৪৭ সালে সিকিম ভারতভুক্তির প্রস্তাব।প্রত্যাখ্যান করলেও এবং কয়েক বছর তার স্বাধীন সত্তা বজায় রাখলেও, ১৯৭১ থেকে সেখানে নানান রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা হয়। দেশটি মূলত Namgyal ডাইনেস্টি শাসন করত। যারা ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। অন্যদিকে সিকিমের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপালি বংশজাত হিন্দু। ধর্মীয় এই বিভাজনকে রাজনৈতিক কাজে লাগায় ভারত। গােয়েন্দাদের ধারাবাহিক সহায়তার মধ্য দিয়ে একাত্তর পরবর্তী পর্যায়ে সেখানে ‘সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস’ (এসএনসি) নামে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি শাখা গঠন করা হয়। তিয়াত্তরে এসএনসি সেখানে জঙ্গী আন্দোলন শুরু করে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ফল হিসেবে দেশটিতে নির্বাচন হয় এবং এসএনসি সরকার গঠন করে। বস্তুত এটা ছিল ভারত প্রভাবিত পুতুল সরকার এবং তারা (Kazi_Lhendup Dorji-এর নেতৃত্বে দেশটিকে ভারতভুক্তির প্রস্তাব উত্থাপন করে এবং সেই অনুযায়ী এক ‘গণভােট অনুষ্ঠিত হয় ভারতীয় সৈনিকদের তত্ত্বাবধানে। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে ভারত চূড়ান্তভাবে সাত হাজার কিলােমিটার আয়তনের সিকিমকে তার ২২তম অঙ্গরাজ্য করে নেয়। তার আগে কিছুদিন সিকিমের মর্যাদা উল্লেখ করা হতাে, এসােসিয়েটেড স্টেট। সেই থেকে সিকিম ও নেপালের আর্থসামাজিক সংস্কৃতিতে Kazi Lhendup Dorji একজন বিশ্বাসঘাতক চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত। ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের কালিংপঙে Kazi Lhendup Dorji মারা যান। এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন: http://blog.com.np/2013/01/31/the-pain-of-losing-a-nation-story-of-lhendup-dorji-and-sikkim/ (08.06.2013)

১৬৪) বিগত দিনগুলােতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয়দের covert operation সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলােচনার জন্য দেখুন: http://www.scribd.com/doc/44831591/India-s-Experience-of-Covert-Action-and-Need-for-Action-Against-Pakistan

১৬৫) ১৬ই এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান, এস আর মীর্জা, পূর্বোক্ত, পৃ. ১২৪।

Page 114

মুজিব বাহিনীর সহযােগী হিসেবে জেনারেল উবানের এসএফএফ সম্পর্কে দ্য হিন্দু পত্রিকায় খ্যাতনামা ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক Praveen Swami-এর নিম্নোক্ত মন্তব্যও এ পর্যায়ে বিশেষ মনােযােগ দাবি করে :

The role of irregular forces (SFF) needs a more nuanced assessment. There is no doubt that they served to tie down।Pakistani troops, and derail their logistical backbone. They।were also, however, responsible for large-scale human rights abuses targeting Pakistani sympathisers and the ethnic Bihari population. There is no moral equivalence between these crimes and those of the Pakistani armed forces in 1971 — but।the fact also is that the irregular forces bequeathed to Bangladesh a militarised political culture that would have।deadly consequences of its own.১৬৬

Source: মুজিব বাহিনী থেকে গন বাহিনী ইতিহাসের পুনর্পাঠ – আলতাফ পারভেজ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!