You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.08.15 | DGFI ব্রিগেডিয়ার রউফ আর্মি অসন্তোষে ঘি ঢেলেছেন | বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড - সংগ্রামের নোটবুক

DGFI ব্রিগেডিয়ার রউফ আর্মি অসন্তোষে ঘি ঢেলেছেন | বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড

আসার পথে আমি ভাবতে লাগলাম মেজর ডালিম যে আমার টেবিলে থাপড়েছে সেটা বঙ্গবন্ধুকে কে জানাতে পারে? পরে আমি জানতে পেরেছি যে এই তথ্যটা প্রেসিডেন্ট দুটো সোর্স থেকে পেয়েছেন। একটি হচ্ছে আর্মি হেডকোয়ার্টার – যেমন আমার ডেপুটির অফিস। আর দ্বিতীয়টি DGFI. আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে প্রেসিডেন্ট খবরটা পরের দিনই পেয়েছিলেন। আর তার পরের দিন খবর পেয়েছেন DGFI থেকে। আর নিজের কাছে অস্ত্র রাখার তথ্যটা পেয়েছেন DGFI থেকে এবং ব্রিগেডিয়ার রউফ প্রেসিডেন্টকে এটা জানিয়েছে। ব্রিগেডিয়ার রউফ একজন রিপ্যাট্রিয়েটেড অফিসার। মানসিকভাবে তিনি আমাদের মেনে নিতে পারেন নাই। এর ফলে তিনিও সম্ভবত আর্মিতে সৃষ্ট এই অসন্তোষে ঘি ঢেলেছেন। 

দ্বিতীয় বিষয়, অর্থাৎ নিজেদের কাছে অস্ত্র গোলাবারুদ রাখার ব্যাপারে আমি অফিসে এসেই খোঁজ নিলাম। FIU এর মাধ্যমে আমি বিষয়টা নিশ্চিত হলাম। এবং জানতে পারলাম যে 21C Army MP ইউনিটের ক্যাপ্টেন মতিন তার নিজের লিভিং রুমে গোলাবারুদের একটি বেল্ট দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রেখেছে। সে মুক্তিযুদ্ধের স্যুভেনির হিসেবে এটা রেখে দিয়েছিলো। এই জিনিসটা এভাবে ডিসপ্লেতে রাখার ব্যাপারটা যে এতো সিরিয়াস প্রভাব ফেলবে সেটা সে ভাবতেও পারেনি। যৌবনের তারুণ্যে সহজাত চিন্তাটা হয়ত মাথায় আসেনি। অবশ্যই এতে কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। কারণ এম্যুনিশন বেল্টটা সকলের সামনেই লিভিং রুমে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো। যে সোর্স বিষয়টি সর্বোচ্চ অথোরিটির কাছে রিপোর্ট করেছে তাদের আগে উচিৎ ছিলো বিষয়টার লজিকটা চিন্তা করা। বঙ্গবন্ধুর কাছে রিপোর্ট করার আগে ব্রিগেডিয়ার রউফ বিষয়টা নিয়ে প্রয়োজনে অফিসারের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারতেন। অথবা তার ইমিডিয়েট সুপিরিয়র অফিসারের সাথেও কথা বলতে পারতেন। এইধরনের রিপোর্টিং এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো আসলে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের প্রেসিডেন্টের কাছে ছোট করা। এবং একই সাথে প্রেসিডেন্টের চোখে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করা। 

যুদ্ধের পর কিছু তরুণ অফিসার বিভিন্ন মিলিটারি আর্সেনাল নিজেদের কাছে যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখেছেন। তাঁরা কখনো ভাবেননি যে এসবের কারণে তাদের কোনোদিন সমস্যায় পড়তে হবে। লেফটেনেন্ট (পরবর্তীতে ফরেন সেক্রেটারি) শমসের মুবিন চৌধুরী ছিলেন এমন একজন অফিসার। জার্মানি থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসছিলেন। তিনি তাঁর হাতঘড়ির বেল্টের সাথে চারটি ৯ এম এম বুলেট শেল যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে যুক্ত করে রেখেছিলেন। ফেরার পথে তিনি যখন এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি পার হচ্ছিলেন তখন অনেক বড় সমস্যায় পরে যান। এটা তাদের ভুল নয়। এটা বয়সের দোষ। এর পেছনে তাদের কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই। যাই হোক, ক্যাপ্টেন মতিনের ঘরের লাইভ এম্যুনিশনের তথ্য পেয়ে আমি প্রেসিডেন্টের কাছে ফের যাই এবং তাঁকে আসল ঘটনা তুলে ধরি। এবং বিনয়ের সাথে জানাই যে সোর্স তাঁকে রিপোর্ট করেছে তাদের উচিৎ ছিলো বিষয়টা আমাকেও জানানো। তাঁর অফিসে (বঙ্গবন্ধুর) বিষয়টা আসার আগে আমার নোটিশে আসা উচিৎ ছিলো। যেহেতু সেই অফিসার আমার কমান্ডের অধীনে। সবশেষে, আমি আবারো প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করলাম যেন গাজি গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে একশন নেয়া হয়। 

গাজি গোলাম মোস্তফার সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে সকল তথ্য আমি ডাবল চেক করে নিয়েছি। এবং উপরে বর্নিত সকল তথ্য সঠিক। বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলার পর আমি অপেক্ষা করছিলাম কবে গাজি গাম মোস্তফা সাহেবের ব্যাপারে একটি খবর পাবো। এর মধ্যে ডিফেন্স মিনিস্ট্রি থেকে আমার অফিসে একটি চিঠি পাই। একেবারে অবাক করে দিয়ে আমি দেখলাম সেটি মেজর ডালিমের চাকরী থেকে বরখাস্তের আদেশ। আমি এটি মেনে নিতে পারছিলাম না। সাথে সাথে মিঃ প্রেসিডেন্টের কাছে গেলাম যদি এটি থামানো যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি ব্যার্থ হই। এই আদেশে আমার কমান্ড একদম ভেঙ্গে পরে। এই আদেশের ফলে আমি চুপসে পড়ি এবং আমার অধস্তন অফিসারদের চোখে আমি একেবারেই ছোট হয়ে যাই। এর ধারাবাহিকতায় আমি চাকরী থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোন ফল হবেনা। আমার মিশন সামনে আগানো। যদি ভবিষ্যতে সফল হওয়া যায়। 

মেজর ডালিমের কাছে আদেশটি পাঠানো ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলো না। মেজর ডালিম আমার কাছে জানতে চাইল তার অপরাধ কী যার জন্য তাকে এই ট্রিটমেন্ট দেয়া হল। আমি তার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কিছু বলতে পারিনি। মেজর ডালিমের বরখাস্তের এই আদেশ আগুনে ঘি ঢাললো। এর ফলস্বরূপ কিছু অফিসার ঔদ্ধত্বপূর্ণ মন্তব্য করল। তাদের মধ্যে জেনারেল জিয়ার PS মেজর এ ওয়াই বি নূরের কণ্ঠ ছিলো সবচেয়ে জোরালো। এই বিষয়টা ঠিকই প্রেসিডেন্টের কাছে সাথে সাথে পৌঁছে গেল। কিন্তু আমি জানিনা তা কিভাবে। ফলস্বরূপ পরের দিন আমি ডিফেন্স মিনিস্ট্রি থেকে আরেও একটি চিঠি পেলাম। এবার মেজর এ ওয়াই বি নূরের বরখাস্তপত্র পেলাম। এরকম আরও কয়েকটি আমাকে কমিউনিকেট করা হল। এই কাজের মাধ্যমে কফিনের শেষ পেরেকটি মারা হল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাকে একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমার কোন আইনসংগত বা মানবিক অধিকার রইলনা এই বাহিনীকে সমাবেশ করার – কারণ আমি তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমার ডেপুটি জেনারেল জিয়া বিষয়টির পূর্ণ সুবিধা নিলো। এবং মুহুর্তেই সে তাদের চ্যাম্পিয়নে পরিণত হল। আমার অধস্তনরা আমার উপর আস্থা হারালো। ঠিক এভাবেই নিজের কোন অপরাধ না থাকার পরেও আমি দোষী হয়ে গেলাম।

Source:

15th August: A national Tragedy – K M Safiullah

Translated by : Dr Razibul Bari