The Bengalis Rally in the Countryside | The Economist | 10th April 1971 (With Bengali Translation)
Translated by – জাহিদ-উল-হাসান সাব্বির
পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত গৃহযুদ্ধে দুই পক্ষ হতে দুই রকমের পরিবেশ চিত্রায়িত করার প্রচেষ্টা চলছে।পাকিস্তান সরকার দাবি করছে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, সম্পূর্ণ শান্ত এবং নাগরিক জীবনযাপন স্বাভাবিকের দিকে।ইন্ডিয়ান প্রতিবেদকদের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে প্রতিরোধ বাহিনী ভালো অবস্থানে আছে পাক সেনাদের বিপরীয়ে এবং বড় শহরে প্রবেশের জন্যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে। কোনটি সত্য তা নিরূপণ করা মুশকিল কিন্তু যশোর পূর্ব পাকিস্তানের একটি শহরে একজন পশ্চিমা সাংবাদিক ইন্ডিয়ার বর্ডার দিয়ে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন,যেখানে বাংগালী প্রতিরোধ যোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়নকে তাদের ক্যান্টনমেন্টে পিছু হটতে বাধ্য করছে এবং কিছু সময়ের জন্যে শহরের নিয়ন্ত্রণ পায়। কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত সমর শক্তি না থাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুনরায় শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হটিয়ে। যদিও এই ঘটনা একটি দেশের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনাদের কর্তৃত্ব বোঝায় না। যশোর কি ব্যতিক্রম?জানার কোন উপায় নেই,কিন্তু আপাতদর্শনে বোঝা যাচ্ছে বড় শহরগুলো ব্যতীত সামগ্রিকভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তেমন কর্তৃত্ব নেই।কিছু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এই চিত্র পুরো দেশের। দুই একটি ব্যতিক্রমের মধ্যে সেনাবাহিনীর পূর্ণ দখল রয়েছে ঢাকা এবং অনেক যুদ্ধের পর চট্টগ্রামে।সপ্তাহান্তে পাকিস্তানি সেনারা আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় এবং বিদেশী কূটনীতিকদের বিমানযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে আসেন যাতে তারা দেখতে পারে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
ইন্ডিয়ার বর্ডারের পাশের এলাকা যেমন যশোর,কুষ্টিয়া,রংপুর এবং সিলেটে বাংগালী যোদ্ধারা ভালো অবস্থানে রয়েছে মূলত ভারতীয় সাহায্যের দরুণ।যদিও এটি এখনই যাচাই করা মুশকিল পাকিস্তান সরকার দাবি করছে তারা ছদ্মবেশী ভারতীয় সেনাদের গ্রেফতার করেছে যারা সাধারণ জনগণের বেশ ধরে অনুপ্রবেশ করেছে।কিন্তু প্রতিবেদন অনুযায়ী মাওবাদীরা সীমান্ত অতিক্রম করছে এবং ভারত সরকার এব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করছে যাতে তারা বাংগালীদের সাথে সহযোগিতা করে। সীমান্তে অস্ত্রের আদানপ্রদান হচ্ছে এমন দাবি পাকিস্তান আর্মি করেছে গত শনিবার,তাদের দাবি অনুযায়ী নয়টি অস্ত্রের চালান আটক করে। অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ইংগিত করছে এই অবস্থাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে।এই পরিস্থিতি মূলত পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এর নিজেদের দূর্বলতার জন্যে হচ্ছে যা বাংগালী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনুকূলে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উপর পরিস্থিতির জন্যে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে,পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কোন সাহায্য আসবে নাকি তাও এখনো নিশ্চিত নয়।কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে আঠারো বছরের উর্ধে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে যে তাদেরকে যুদ্ধে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ করানো হতে পারে। এদিকে নৌবাহিনীর উপরও পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না কারণ অন্য দুই বাহিনী থেকেও এখানে বাংগালী সেনা বেশী কারণ তাদের সমুদ্রের সাথে সম্পর্কের কারণে। এরমধ্যে একজন সাবমেরিনারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট চাচ্ছেন বাংগালী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সবাই দুষ্কৃতি কারী সমাজবিরোধী হিসেবে জানুক।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বুঝাতে চাচ্ছেন পূর্ব পাকিস্তানের পুরো সংকটটাই স্থানীয় হিন্দুদের ইন্ধনে হচ্ছে। ভারতের সাহায্যের কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ গণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বক্তব্য সমর্থন করেন। এমতাবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তানের একটি পত্রিকা তো প্রশ্নই করে বসলো যে মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে হিন্দুদের ভোট দেয়ার অধিকার দেয়ার আদতে কোন প্রয়োজন আছে কিনা? এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবের কোন খোঁজখবর এখনো সকলের নিকট অজানা এবং বাংগালী প্রতিরোধ যোদ্ধারা উনার বিকল্প কোন নেতাকে খুঁজে নিতেও ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু একজন আওয়ামীলীগ নেতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এই ঘটনাকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে যা রেডিও পাকিস্তানের ভাষ্যমতে “পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সারির ১২ জন রাজনীতিবিদকে ” সরকারকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়, এবং রবিবার এই ১২ জন নেতা “নাগরিক কমিটি ” গঠন করে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয় যা মূলত সাধারণ জনগণের মতিষ্ক হতে ভয় দূর করার জন্যে। কথিত এই ১২ জন প্রথম সারির নেতার মধ্যে একমাত্র নুরুল আমিনই গত ডিসেম্বরে আওয়ামীলীগ এর বিরুদ্ধে দুটি আসনে লড়াই করে একটি আসনে জয়লাভ করেন বাকীরা ছিলেন উগ্র ডানপন্থী এবং সকলেই আওয়ামীগের প্রার্থীর কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন, এদের মধ্যে একজন শেখ মুজিবর রহমানের নিকট নির্বাচনে গো-হারা হারেন। উনারা মুখিয়ে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের জন্যে,কিন্তু সেনাবাহিনীর সাহায্য ছাড়া তারা এই দেশে টিকতে পারবে না একমূহুর্ত। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যেসকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী শেখ মুজিবের ডাকে হরতাল করেছিলে তাদের ব্যাপারে নমনীয় হয়েছেন।তাদের কাজে ফিরিয়ে আনতে হরতালকালীন সময়ের বেতনও পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।এই সিদ্ধান্তের দরুণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া হয়তো স্থবির এই অংগরাজ্যকে আবার কিছুটা সচল করতে পারেন যদি না বাঙালি প্রতিরোধ যোদ্ধারা বড় শহরগুলোতে তার অবস্থান টলাতে না পারে আসন্ন মাসগুলোতে। তবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যদি বাঙালি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ভিত্তি গ্রামাঞ্চল থেকে টলাতে পারেন তাহলে তার অংগরাজ্যের একটি অংশ তিনি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
জাহিদ-উল-হাসান সাব্বির