Better a harvest, than a Government | The Economist | 17th April 1971 (with Bengali Translation)
Translated by : Ashik Uz Zaman
Translation:
সরকারের চেয়ে ফসল উত্তম
পূর্ব পাকিস্তানের শহরগুলো দখলে রাখার জন্য বাঙ্গালীদের প্রতিরোধ সংগ্রাম স্তিমিত হয়ে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এমনকি ভারতীয় সূত্রগুলো, যারা গত দুই সপ্তাহ ধরে দাবি করছিল পুরো বাংলা জুড়ে বিস্তৃত বাঙালীদের বিজয়ের, তারাও চুপ করে আছে। দেশের উত্তরে, ভারতীয় প্রেস ট্রাস্ট প্রচার করছে যে, প্রতিরোধ সংগ্রাম ভারতীয় সীমান্তের একেবারে কাছে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে সীমান্ত থেকে মাত্র পাঁচ মাইল দূরত্বের দুটি শহরের পতনের পর। পশ্চিমে শুধুমাত্র কুষ্টিয়া শহরটি বাঙালীদের হাতে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে; এবং এর পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। উত্তর-পশ্চিমে সিলেট শহর কার দখলে রয়েছে তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি কুমিল্লাতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে।
এখন পর্যন্ত গেরিলাযুদ্ধ চালু হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যে শহরগুলো এখনো বাঙালিদের হাতে রয়েছে সেসব শহরগুলোতে তারা প্রচলিত নিয়মে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে তারা পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর খুবই সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। যদি বাঙালিরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সরাসরি মোকাবেলা করতেই থাকে, এবং গেরিলা আক্রমণের পদ্ধতি গ্রহণ করতে আপত্তি করে, তাহলে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই তারা যুদ্ধে হেরে যাবে নিশ্চিত।
সংকল্পে অটল, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বাংলা দেশের অস্থায়ী সরকারের ঘোষণা দিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান (যেখানেই তিনি থাকেন না কেন) হচ্ছেন নতুন দেশটির রাষ্ট্রপতি; সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের উপপ্রধান, হচ্ছেন উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সামরিক ঘটনাবলীর কারণে কার্যত এই ঘোষণা প্রায় অর্থহীন হয়ে পড়েছে। অস্থায়ী সরকার গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলা দেশের জন্য বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করা। কিন্তু অন্য দেশগুলো সেই সরকারকে স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করবে যাদের কোন স্বাধীন ভূখণ্ড নেই।
যদিও বাঙ্গালীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। ভারতীয়রা অবশ্যই বাঙালি শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাহলে সীমান্ত অতিক্রম করে তাদেরকে ধাওয়া করতে বিপজ্জনকভাবে প্রলুব্ধ হবে। দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই গরমাগরম অভিযোগপত্র দেয়ানেয়া দ্রুততর হচ্ছে। পাকিস্তানের সরকার দাবি করছে তারা অস্ত্রধারী-ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের আটক করেছে, এবং ভারতীয়রা অভিযোগ করছে যে পাকিস্তান তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে অপহরণ করেছে। উভয়পক্ষই সম্ভবত একই মানুষগুলোর বিষয়ে বলছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার যুক্তি হচ্ছে পুরো সংকটটি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে, যদিও বাস্তবে হয়তো তাদের দ্বারা সৃষ্ট নাও হয়ে থাকতে পারে, ভারতের কারণে।
এই অভিযোগগুলো সত্ত্বেও, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার উপর যে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তার জবাবে বলছেন এই সংকটটি পুরোপুরিই আভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে করে বিষয়টি জাতিসংঘের আওতার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি সরকারের উপর যে দুটি দেশের প্রভাব রয়েছে, তাদের অস্ত্রের সরবরাহকারী হিসেবে, তাদের মধ্যে চীন সরাসরি সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং আমেরিকা তাদের মনঃস্থির করার চেষ্টা করছে। সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে আমেরিকার তৈরি ট্যাঙ্ক এবং বিমান, যেগুলো মূলত রাশিয়ার কাছ থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য দেয়া হয়েছিল, সেগুলোকে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথায় তাদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করা ছাড়া, আমেরিকানদের আর তেমন কিছু করার নেই কেননা ভারতের সাথে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর থেকে নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তারা শুধুমাত্র খুচরা যন্ত্রাংশ এবং “অ-প্রাণঘাতী উপকরণ”-এর সরবরাহ বন্ধ করতে পারে যা এখনো অব্যাহত আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, এই বিষয়টিও এখন বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বর্মে একটিই দুর্বলতা রয়েছে; আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর পাকিস্তানের প্রচন্ড নির্ভরতা। ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৬৫ সালের তিন-সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধ দেশটিকে প্রায় দেউলিয়া করে ফেলেছিল, আর এই যুদ্ধটি – যার সরবরাহ লাইন এক হাজার মাইলেরও বেশি বিস্তৃত – আরও দীর্ঘতর এবং খরচান্ত হবে বলে মনে হচ্ছে। খবরে জানা যায় একজন পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তা এই মুহূর্তে ওয়াশিংটনে রয়েছেন যিনি আমেরিকাকে এই বছরের প্রতিশ্রুত সাহায্য আরো দ্রুত দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কাছ থেকে ১৭৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করছেন। এই সাহায্যগুলো মঞ্জুর হওয়ার সাথে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থার উন্নতি হবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার দেওয়া এরকম আশ্বাসের সংযোগ থাকতে পারে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে যদি এই চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করা না যায়, তাহলে অন্তত আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে ওই দেশে ঢুকতে দিতে বাধ্য করা যাবে।