You dont have javascript enabled! Please enable it!
কড়েহা অ্যামবুশ
কড়েহা ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার অন্তর্গত একটি গ্রাম। গ্রামটির অবস্থান গৌরীপুর ময়মনসিংহ প্রধান রাস্তার পাশে। ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুর থানা সদরের দূরত্ব ১০-১৩ কিলােমিটার। অবস্থানগত কারণে গৌরীপুর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বলে বিবেচিত ছিল। গৌরীপুরে রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যের অবস্থান ছিল। ময়মনসিংহ-গৌরীপুর পথে পাকিস্তানি বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনী নিয়মিত টহল দিত। | ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কড়েহা নামক স্থানে টহলরত পুলিশ ও রাজাকার বাহিনীর উপর আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর এ আকস্মিক আক্রমণে ৫জন রাজাকার নিহত হয়। অন্য পুলিশ ও রাজাকাররা পালিয়ে যায়। এ আক্রমণে রাজাকারদের কয়েকটি রাইফেল মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন
১. নজরুল ইসলাম।
২. রফিকুল ইসলাম
৩. তােফাজ্জল হােসেন চুন্ন
আবদুল হাকিম
৫. শামছুল হক
৬. নূরুল ইসলাম
৭. আবুল হাসিম
৮. আবদুর রশিদ
৯, জবেদ আলী।
১০. হাছেন আলী
১১. আবদুস সালাম তালুকদার
১২. তােতা মিয়া
১৩, আবদুর রহিম
১৪. গিয়াস উদ্দিন
১৫. আবদুল খালেক
১৬. আবু সিদ্দিক
১৭. আমজাদ হােসেন প্রমুখ।
বাথুলিয়ার যুদ্ধ
টাঙ্গাইল জেলার বাশাইল থানার অন্তর্গত এলাকা বাথুলিয়া। বাঘা সিদ্দিকী। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ভােরবেলায় নতুন অভিযানে বেরুলেন। তিনি পর পর করাতিপাড়া ও সল্লা সেতু ধ্বংস করে দিলেন। টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কের নির্দেশে ১৮ নভেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনীর ৩টি কোম্পানি মােস্তফা, মতি ও মােকাদ্দেছের নেতৃত্বে বাশাইল থানা অবরােধ করেন। এ থানায় পাকিস্তানি বাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ও রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ করে, ২জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হলেন। এ সংবাদ পেয়ে কাদের সিদ্দিকী তার ঝটিকা বাহিনী নিয়ে বাসাইলের দিকে রওনা হবেন, এমন সময় সংবাদ এল যে, টাঙ্গাইল থেকে এক কোম্পানি নিয়মিত পাকিস্তানি সৈন্য এবং প্রায় ২০০ রাজাকার বাসাইলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তখন সকাল সাড়ে ৯টা। এদের। আগমনের উদ্দেশ্য হলাে আটকে পড়া পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধার করা। বাঘা সিদ্দিকী বাসাইলের দিকে না গিয়ে টাঙ্গাইল থেকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানি বাহিনীকে বাধা দিতে তৎপর হলেন। তিনি করটিয়ার উত্তরে তার বাহিনী নিয়ে আড়াল থেকে আক্রমণের ব্যবস্থা করলেন। দেখা গেল, শত্রু সেনারা পাকা সড়ক ছেড়ে পায়ে হেঁটে গ্রামের মধ্য দিয়ে আসছে। মধ্যে ছিল। একটি খাল। এ খালের ধারের উচু বাধের আড়ালে মুক্তিযােদ্ধারা তৈরি হয়ে। থাকলাে। যেমনি তারা তাদের নিশানার মধ্যে এল, অমনি একসঙ্গে পাঁচটি হালকা মেশিনগান ও অনেক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র শত্রুর উপর মরণ আঘাত হানলাে। অতর্কিত হামলায় পাকিস্তানি সেনারা রীতিমত ঘাবড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ২০জন শত্রু সেনা ধরাশায়ী হলাে এবং সব রাজাকার যে-যেদিকে পারলাে, পালিয়ে প্রাণ বাচালাে। প্রায় আধঘণ্টা যুদ্ধের পর বাঘা সিদ্দিকী। সেখান থেকে সরে এলেন। কারণ, তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে। বাশাইল ঘাঁটি আর নতুন সেনাদের সাহায্য পেল না। পরে গ্রামবাসীর কাছ থেকে জানা যায়। যে, শত্রুর ৩০জন নিহত হয়েছে এবং অনেক আহত হয়েছে।
গােপালপুরের যুদ্ধ
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে উত্তরে জামালপুর জেলার সীমান্তে গােপালপুর থানা অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর গােপালপুরে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানের উপর পাকিস্তানি সেনারা অতর্কিত আক্রমণ করে। মুক্তিযােদ্ধারাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। পাকিস্তানি আক্রমণে টিকতে না পেরে একপর্যায়ে মুক্তিযােদ্ধারা পিছু হটে নিরাপদ স্থানে চলে আসেন। অবস্থান পরিবর্তনের সময় মুক্তিযােদ্ধাদের বেশ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন:
১. আহাম্মদ আলী
২. আলাউদ্দিন
৩. আমির আলী
৪. গফুর খান।
৫. আব্দুল হাই।
৬, সিদ্দিকুর রহমান
৭. আলী নেওয়াজ
৮. আবদুল কায়ের প্রমুখ।
পাথরঘাটার ব্যর্থ রেইড
মির্জাপুর থানার অন্তর্গত পাথরঘাটা একটি বনজঙ্গলময় গ্রাম। পাথরঘাটা এলাকায় পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। তারা এ এলাকা থেকে আশপাশের গ্রামগুলােয় প্রভাব বিস্তার করতে জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতাে। মুক্তিযােদ্ধারা স্বভাবসিদ্ধ নিয়মে সুযােগ বুঝে আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেন। ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর তারিখে পাকিস্তানি অবস্থানে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল রেইড করে। উভয় পক্ষের তুমুল সংঘর্ষ হয়। শক্রর পাল্টা আক্রমণের মুখে মুক্তিযােদ্ধারা পিছু হটে আসেন। মুক্তিযােদ্ধাদের ২জন শহিদ হন। শত্রু সেনাদের ক্ষয়ক্ষতির কোনাে তথ্য পাওয়া যায় নি। | ৩০ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার পাথরঘাটা এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর উপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে ২জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন।
দোজ গ্রামে অ্যামবুশ
দোজ গ্রামটি ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার (বর্তমানে জেলা) আটপাড়া থানার অন্তর্গত। এ গ্রামের ভিতর দিয়ে আটপাড়া থানার সাথে মদন থানার যােগাযােগের একটি কাঁচা রাস্তা আছে। আটপাড়া থানায় পাকিস্তান রেঞ্জার্স ও রাজাকারের কিছু সদস্যের অবস্থান ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর এ সহযােগী দলের সদস্যরা আটপাড়া থানা থেকে মদন থানায় প্রায়ই টহলের। উদ্দেশ্যে যাতায়াত করতাে। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর তুরা মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্প থেকে মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে ২৫জন মুক্তিযােদ্ধার একটি দল দোজ গ্রামে এ টহল দলের অপেক্ষায় থাকে। বেলা ১১টার দিকে টহল দলের সদস্যরা মুক্তিবাহিনীর কাছাকাছি আসার সাথে সাথে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা তাদের উপর আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষে প্রচণ্ড গােলাগুলির পর মুক্তিযােদ্ধারা টহল দলের বিস্তর ক্ষতিসাধন করে অবস্থান পরিবর্তন করেন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য শাহাদতবরণ করেন।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন:
১. আবদুল হান্নান
২. মুখলেছুর রহমান
৩, মঞ্জু মিয়া
৪. শহর উদ্দিন প্রমুখ ।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!